‘আমিও একজন জায়নিস্ট’: ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বোঝাতে বলেন বাইডেন
ইসরায়েল সফরকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এসময় তাদের আশ্বাস দিয়ে বাইডেন বলেন, 'ইহুদিবাদি (জায়নবাদি) হতে কাউকে ইহুদি হতেই হবে এমনটা আমি বিশ্বাস করি না। আমিও একজন জায়নবাদি।'
বাইডেনের বক্তব্যে সম্মতিসূচক মাথা নড়ান তেল আবিবের বিলাশবহুল হোটেলটির বলরুমে উপস্থিত ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ ও জেনারেলরা।
বাইডেন এ মন্তব্য করেন রুদ্ধদ্বার আলোচনায়, এবিষয়ে অবহিত একজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে বিষয়টি জেনেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
হামাসের আক্রমণের প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েল যখন গাজায় স্মরণকালের অন্যতম এক মানবিক বিপর্যয় ঘটাচ্ছে, দারিদ্রপীড়িত গাজাকে বোমায় গুঁড়িয়ে প্রস্তরযুগে পাঠাচ্ছে, এমনকি অচিরে স্থল অভিযানও চালাবে– তারমধ্যেই ইসরায়েলে গিয়ে একথা বলেছেন বাইডেন।
আইরিশ ক্যাথলিক বাবা-মায়ের সন্তান বাইডেন এর আগেও তার ইসরায়েলপ্রীতি প্রকাশ করতে গিয়ে এ ধরনের শব্দচয়ন করেছেন। ফলে এবার তিনি নতুন কিছু বলেছেন, তেমন নয়। তবে যে মুহূর্তে তিনি এ বক্তব্য দিয়েছেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
এতে প্রকাশ পায়, কীভাবে মার্কিন রাজনীতিতে বহু দশক ধরে 'ইসরায়েলের বন্ধুদের' মধ্যে অন্যতম একজন হয়ে আছেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সংকটকে বাইডেনের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালের সর্বোচ্চ এক সংকট মনে করা হচ্ছে। কিন্তু, ইসরায়েলপ্রীতি থেকেই যে তিনি এই সংকটকালের করণীয় ঠিক করছেন বা চালিত হচ্ছেন, সেটাও প্রকাশ পাচ্ছে ।
নেতানিয়াহুর সাথে বাইডেনের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ইসরায়েলের প্রতি তার আছে অনড় সমর্থন। এদিকে, ইসরায়েলি হামলায় গাজার বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি বেড়েই চলেছে, যা এড়াতে বাইডেনকে নেতানিয়াহুর ওপর চাপ দিতে হবে। নাহলে গাজায় মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হবে এবং মার্কিন (দ্বৈত নাগরিকত্বের ইহুদি) জিম্মিদের মুক্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাইডেনকে তার ইসরায়েলপ্রীতির সাথে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে। কিন্তু, ব্যক্তিগত অনুরাগ হয়তো সেখানে বাধ সাধছে।
ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় দলের ছয়জন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে দায়িত্বপালন করা সাবেক এক মধ্যপ্রাচ্য মধ্যস্ততা আলোচক ডেভিড মিলার বলেন, 'ইসরায়েলের সাথে বাইডেনের সম্পর্ক তার রাজনৈতিক ডিএনএ'র গভীরে আছে। তাই ভালো না লাগলেও, তিনি যে সংকটের মধ্যে পড়েছেন, সেটি তাকেই সমাধান করতে হবে।'
এবিষয়ে আরও জানতে বাইডেনের সাবেক ও বর্তমান এক ডজন সহযোগী, আইনপ্রণেতা ও বিশ্লেষকদের সাক্ষাৎকার নেয় রয়টার্স। তাদের অনেকে মনে করেন, নেতানিয়াহুর অবস্থানকে বাইডেনের উদারচিত্তে গ্রহণ করেছেন, এতে গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা প্রতিক্রিয়া লঘু করতে যুক্তরাষ্ট্রের যে চাপ প্রয়োগের সুযোগ ছিল, তা ক্ষুন্ন হয়েছে।
দুই নেতার মধ্যে বুধবারের ব্যক্তিগত আলোচনাকালে তাদের কারো মধ্যেই উত্তেজনার কোন ছাপ দেখা যায়নি, যেমনটা তাদের আগের বিভিন্ন বৈঠকে দেখা গেছে বলে জানান বৈঠক সংশ্লিষ্ট দ্বিতীয় এক মার্কিন কর্মকর্তা।
তবে ইসরায়েলের আক্রমণ নিয়ে কঠিন কিছু প্রশ্ন নেতানিয়াহুকে করেন বাইডেন। যেমন তিনি বলেন, 'অভিযান শুরুর পর প্রতিটি দিন তা কি বয়ে আনবে– সে সম্পর্কে আপনি ভালোভাবে ভেবে দেখেছেন?'
ওই কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের আঞ্চলিক সূত্রগুলো মনে করে হামাসকে ধবংসে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ইসরায়েল তার চূড়ান্ত পরিকল্পনা এখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি।
এদিকে কট্টর ডানপন্থী নেতা নেতানিয়াহুর সাথে বাইডেনের সহাবস্থান নিয়ে ডেমোক্রেট দলের প্রগতিশীলদের সাথে তার দূরত্ব বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে। আর এমন সময়ে তা ঘটছে যখন আগামী নির্বাচনে পুনরায় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছেন বাইডেন। একইসঙ্গে, ইসরায়েলি কৌশলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধসমর্থন নিয়েও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনি ও অনেক আরব নেতা ইসরায়েলের প্রতি বাইডেনের পক্ষপাতদুষ্টতার কারণে তাকে এ সংকটের ন্যায্য মধ্যস্ততাকারী মনে করছেন না।