গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলার মধ্যে অন্যান্য ফ্রন্টে যুদ্ধ দানা বাঁধছে!
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/10/23/6c8ee3d356837b683a892d9c61197e5b325edc7a-16x9-x0y0w1280h720.jpg)
গাজায় সম্ভাব্য স্থল অভিযানের আগে বোমা ফেলায় কোন বিরতি দিচ্ছে না ইসরায়েল। প্রায় সকল আশ্রয়স্থল গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। জাতিসংঘ বলছে, অবরুদ্ধ উপত্যকায় বেসামরিক মানুষের আশ্রয় নেওয়ার জায়গা ফুরিয়ে আসছে।
এরইমধ্যে সংঘাত বিস্তৃত হওয়ার লক্ষণ জোরালো হয়েছে। গতরাতে দক্ষিণ লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান, আর পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে ইসরায়েলি সেনাদের।
গতকাল রোববার আরও কিছু ত্রাণ সামগ্রী রাফাহ সীমান্তপথ দিয়ে গাজায় পৌঁছেছে। তবে খাদ্য, পানি, ওষুধ ও জ্বালানির চরম সংকটের মধ্যে এগুলো নিতান্ত অপ্রতুল বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলের টানা দুই সপ্তাহের বোমা হামলায় অন্তত ৪ হাজার ৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
সোমবার সকালে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার ৩২০টি লক্ষ্যবস্তুতে তারা আঘাত হেনেছে। এরমধ্যে হামাস যোদ্ধাদের অবস্থান ছিল এমন সুড়ঙ্গসহ কয়েক ডজন কম্যান্ড পোস্ট ও নজরদারি চৌকি রয়েছে।
আইডিএফ জানায়, গাজায় তাদের সেনা প্রবেশের আগে যেসব স্থাপনা তাদের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে, সেগুলো ধবংস করা হয়েছে। একইসঙ্গে ডজন ডজন মর্টার ও ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার অবস্থান ধবংস করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি গণমাধ্যম জানায়, গাজার উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে কেন্দ্রীভূত ছিল সোমবারে ইসরায়েলি আক্রমণ।
এদিন উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের একটি আবাসিক ভবনে করা হামলায় বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছেন।
স্থল অভিযান শুরু!
ইতোমধ্যেই গাজায় সীমিত পরিসরে ইসরায়েলি সেনারা প্রবেশ করেছে বলে জানা যাচ্ছে। সোমবার (বাংলাদেশ সময়) ইসরায়েলি সেনাদের সাথে হামাস যোদ্ধাদের সংঘর্ষও হয়েছে।
তবে আরও শত শত ট্যাংক ও সেনা ইসরায়েল-গাজা সীমান্তে মোতায়েন রেখেছে ইসরায়েল। বৃহত্তর অভিযান শুরু হলে এই বিপুল শক্তি প্রয়োগ করবে তারা।
এদিকে স্থল আগ্রাসন পেছাতে ওয়াশিংটন চাপ দিচ্ছে কিনা – এমন প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরায়েলের উপ রাষ্ট্রদূত ইলিয়াভ বেঞ্জামিন বলেছেন, 'প্রথম দিন থেকেই আমরা মার্কিন সরকারের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তারা জানে, নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী আমরা এ যুদ্ধ পরিচালনা করছি। তাই শেষপর্যন্ত আমাদের যা করা দরকার- আমরা তাই করব, এবং যখন প্রয়োজন তখনই করব।'
এদিকে ইসরায়েলি বোমা হামলায় গাজার বিশাল এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা- ওসিএইচএ বলেছে, গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ১৪ লাখই বর্তমানে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় তিল ধারণের ঠাই নেই, তবু বিপন্ন মানুষ আশ্রয় নিতে আসছে।
এদিকে আসন্ন লড়াইয়ের মধ্যে না পড়তে গাজাবাসীকে উত্তর দিকে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে ইসরায়েল। কিন্তু, ওসিএইচএ জানায়, দক্ষিণাঞ্চলেও বোমা ফেলছে ইসরায়েল, সেখানে আশ্রয় নেওয়ার স্থানেরও অভাব, এই অবস্থায় দক্ষিণে পালিয়ে যাওয়া শত শত বা সম্ভবত হাজারো মানুষ আবার উত্তরে ফিরতে শুরু করেছে।
গত এক সপ্তাহ থেকেই হামাস-ইসরায়েলের এই যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর যুদ্ধে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই তাদের আঞ্চলিক স্বার্থ হুমকির মুখে পড়েছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ওয়াশিংটন। পেন্টাগন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনসহ, এই অঞ্চলের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে সেনা ও যুদ্ধবিমানের সংখ্যা বাড়াচ্ছে।
অন্যদিকে, লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর সাথে ইসরায়েলি সেনাদের সংঘর্ষ চলছে। ২০০৬ সালের হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল যুদ্ধের পর বর্তমানেই সবচেয়ে উত্তপ্ত এ সীমান্ত অঞ্চল।
সোমবার দিনের শুরুতে লেবাননের অভ্যন্তরে হিজবুল্লাহ'র দুটি গ্রুপের অবস্থানে হামলা চালায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। ইসরায়েলের দাবি, তারা ইসরায়েলে ট্যাংক-বিধ্বংসী মিসাইল ও রকেট ছোঁড়ার পরিকল্পনা করছিল। এছাড়া, হিজবুল্লাহর একটি কম্পাউন্ড ও নজরদারি চৌকিতে হামলার কথাও জানায়।
হিজবুল্লাহ জানায়, সোমবার তাদের একজন যোদ্ধা নিহত হয়েছে। তবে এবিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, ৭ অক্টোবরের পর থেকে লেবানন সীমান্তে তাদের সাত সেনা নিহত হয়েছে।
পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বাড়ছে। ইসরায়েলের সেনাবাহিনীও আক্রমণ চালাচ্ছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রামাল্লাহ'র কাছে জালাজোন শরণার্থী শিবিরে দুজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে।
স্থানীয় অধিবাসীরা রয়টার্সকে জানান, ইসরায়েলি বাহিনী শরণার্থী শিবিরে অভিযান পরিচালনা করে এবং অনেককে গ্রেপ্তার করে। এসময় ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী ও পাথর নিক্ষেপকারী তরুণদের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক চীনের বিশেষ দূত ঝাই হুন বর্তমানে অঞ্চলটি সফর করছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, বড় ধরনের সংঘাতের হুমকি বাড়ছে এবং এ অঞ্চলজুড়ে সংঘাত বিস্তার লাভ করলে সেটি রীতিমতো 'উদ্বেগজনক' পরিস্থিতি তৈরি করবে।