যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নাকচ করলেন নেতানিয়াহু; বললেন 'এখন সময় যুদ্ধের'
গাজায় ইসরায়েলের প্রতিনিয়ত বোমাবর্ষণে মারা যাচ্ছে বহু বেসামরিক নাগরিক। এমতাবস্থায় যুদ্ধ বিরতির দাবিতে সোচ্চার হয়েছে সমগ্র বিশ্ব। তবে আপাতত এমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। খবর বিবিসির।
নেতানিয়াহু বলেন, "পার্ল হারবার কিংবা ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়নি। একইভাবে ৭ অক্টোবরের ভয়াবহ হামলার পর ইসরায়েলও হামাসের সঙ্গে শত্রুতা বন্ধ করতে রাজি হবে না।"
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আচমকা হামলায় প্রায় ১৪০০ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। একইসাথে জিম্মি করা হয় ২০০ এরও বেশি মানুষকে। জবাবে কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেয় তেল আবিব।
নেতানিয়াহু মনে করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবিরতির আহ্বানের মানে হচ্ছে ইসরায়েলকে হামাসের কাছে আত্মসমর্পণের আহ্বান করা৷ সন্ত্রাসবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করা।
এদিকে, ইসরায়েলের নিষেধাজ্ঞার ফলে গাজায় তৈরী হয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। ২০ লাখেরও বেশি মানুষের এই অঞ্চলটিতে চলছে খাদ্য, পানি ও যোগাযোগ সুবিধা প্রাপ্তির জন্য তীব্র হাহাকার।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে অবরুদ্ধ এলাকাটিতে যুদ্ধাপরাধসহ নানান ধরনের অপরাধের প্রবণতা আরও বাড়বে এবং সেগুলোর কোনো রেকর্ড রাখাও সম্ভব হবে না।
নেতানিয়াহু এক্ষেত্রে গাজায় যুদ্ধের প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করে বাইবেলের একটি লাইনও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "বাইবেলেও বলা হয়েছে, 'শান্তির জন্যও সময় রয়েছে, যুদ্ধের জন্য সময় রয়েছে।' এখন সময় যুদ্ধের।"
এমনকি বর্তমান সময়ে নাগরিকদের কাছে যুদ্ধের 'প্রয়োজনীয়তা' উল্লেখ করে তাদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, "আজ আমরা সকলের সম্মিলিত ভবিষ্যতের জন্য যুদ্ধ করছি। আজ আমরা সভ্যতার শক্তি বনাম বর্বরতার শক্তির মধ্যে একটি রেখা টানছি।"
এদিকে গাজায় তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলতে থাকা বোমা হামলায় মৃতের সংখ্যা আট হাজার ছাড়িয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অবরুদ্ধ ছিটমহলে অবিরত ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৮,০০৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের মতে, গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত বোমাবর্ষণে প্রতিনিয়তই শিশুমৃত্যু বাড়ছে। সংস্থাটির এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে সেখানে নিহত শিশুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩,১৯৫ জনে; যা ২০১৯ সালের পর থেকে বিশ্বজুড়ে বার্ষিক সংঘাতে নিহত শিশুদের মোট সংখ্যার চেয়ে বেশি।
শুধু বিমান হামলা নয়, বরং গাজায় স্থল অভিযানের মাত্রাও বাড়াচ্ছে ইসরায়েল। এমতাবস্থায় ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়াজুড়ে শহরে শহরে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে।
এরমধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের একটি হয়েছে লন্ডনে। সেখানে দেশটির বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সরকারের কাছে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বিশাল মিছিল করেছে।
লন্ডনে ক্যামিল রেভুয়েলটা নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, "পরাশক্তির দেশগুলো এই মুহূর্তে নিজেদের ভূমিকা কার্যকরীভাবে পালন করছে না। এই কারণেই আমরা এখানে এসেছি। আমরা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছি৷ ফিলিস্তিনিদের অধিকার, তাদের অস্তিত্বের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার, মানবাধিকারসহ সমস্ত অধিকার যাতে পায়, সে আহ্বান জানাচ্ছি৷"