গাজার ক্যানসার হাসপাতালে হামলা করল ইসরায়েল
গাজা উপত্যকার একমাত্র ক্যানসার হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। স্থানীয় সময় গতকাল (সোমবার) বিকেলে এই হামলার ঘটনাটি ঘটে।
হামলাকৃত তুর্কিশ-প্যালেস্টানিয়ান ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালটি গাজা উপত্যকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা তাল আল-হাওয়াতে অবস্থিত। এটি তুরস্ক সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত।
হাসপাতালটির শয্যাসংখ্যা মাত্র ১৫০টি। এই সীমিত সুবিধা ও শত প্রতিকূলতার মাঝেই গাজার ১০ হাজার ক্যানসার রোগীকে এখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
হাসপাতালটির পরিচালক সোভি শেখ এটিকে 'মেডিকেল ফ্যাসিলিটির ওপর প্রথম সরাসরি আঘাত' বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, অ্যানেস্থেসিয়ার জন্য ব্যবহৃত হাসপাতালের তৃতীয় তলা ইসরায়েলি হামলায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফলে হাসপাতালটির দেয়াল, জানালা, অক্সিজেন ট্যাংকের লাইন, পানির পাইপ এবং বিদ্যুতের লাইন ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে হামলার সময় ঐ ফ্লোরে কোনো রোগী কিংবা চিকিৎসক দল ছিল না।
সোভি শেখ বলেন, "স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৫টায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। তবে গতকাল থেকে হাসপাতালটি বারবার ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।"
সোভি শেখ আরও বলেন, "আমরা উদ্বিগ্ন যে, হাসপাতালটিতে আবার আঘাত করা হবে। এবং এতে করে আমাদের রোগীরা তাদের বিছানায় মারা যাবে। আমরা আমাদের কর্মীদের সুস্থতার বিষয়ে চিন্তিত, তবে আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাব। এটা আমাদের কর্তব্য।"
এর আগে গত ১৭ অক্টোবর গাজার আল-আহলি হাসপাতালে হামলা করেছিল ইসরায়েল। তাতে প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ নিহত হয়।
এমনকি গত রবিবার আল-কুদস হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ দেয় ইসরায়েল। তবে সেখানে চিকিৎসাধীন মুমূর্ষু রোগীদের সরানো সম্ভব নয় বলে জানান জাতিসংঘের কর্মীরা। তারা বলেছেন, রোগীদের সরানো মানে বিনা অপরাধে আহত ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের মতে, গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত বোমাবর্ষণে প্রতিনিয়তই শিশুমৃত্যু বাড়ছে। গড়ে প্রতি ১০ মিনিটে একজন শিশু নিহতের ঘটনা ঘটছে।
সংস্থাটির এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে সেখানে নিহত শিশুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩,১৯৫ জনে; যা ২০১৯ সালের পর থেকে বিশ্বজুড়ে বার্ষিক সংঘাতে নিহত শিশুদের মোট সংখ্যার চেয়ে বেশি।
শুধু বিমান হামলা নয়, বরং গাজায় স্থল অভিযানের মাত্রাও বাড়াচ্ছে ইসরায়েল। এমতাবস্থায় ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়াজুড়ে শহরে শহরে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে।
এরমধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের একটি হয়েছে লন্ডনে। সেখানে দেশটির বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সরকারের কাছে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বিশাল মিছিল করেছে।
লন্ডনে ক্যামিল রেভুয়েলটা নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, "পরাশক্তির দেশগুলো এই মুহূর্তে নিজেদের ভূমিকা কার্যকরীভাবে পালন করছে না। এই কারণেই আমরা এখানে এসেছি। আমরা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছি৷ ফিলিস্তিনিদের অধিকার, তাদের অস্তিত্বের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার, মানবাধিকারসহ সমস্ত অধিকার যাতে পায়, সে আহ্বান জানাচ্ছি৷"