যুদ্ধবিরতির দাবিতে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে লক্ষাধিক মানুষের বিক্ষোভ লন্ডনে
গাজায় 'বোমা হামলা বন্ধ' ও 'এখনই যুদ্ধবিরতির' দাবি জানিয়ে লন্ডনে বিক্ষোভ করেছে লক্ষাধিক মানুষ। এদিকে বিক্ষোভের বিরোধিতা করায় অন্তত ৮২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
লন্ডনে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে এ পর্যন্ত হওয়া কর্মসূচির মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ও সামরিক অভিযানে নিহত ব্যক্তিদের সম্মানে আর্মিস্টিস (যুদ্ধের অবসান) ডে তে এ কর্মসূচি পালন করল বিক্ষোভকারীরা।
১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর এক চুক্তির মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি হয়। চুক্তিটি আর্মিস্টিস নামে পরিচিত।
পুলিশের অনুমান, গতকাল শনিবারের এ কমসূচিতে প্রায় তিন লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করেছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋসি সুনাক এমন দিনে বিক্ষোভ করাকে 'অসম্মানজনক' বলে অভিহিত করেন।
লন্ডনের আল জাজিরার সাংবাদিক পল ব্রেনান বলেন, কর্মসূচিতে উপস্থিতির সংখ্যা বিশাল এবং এটি নজিরবিহীন। এটি ব্রিটিশ সরকারের প্রতি একটি বার্তা, যারা পুলিশ দিয়ে বিক্ষোভ বন্ধ করতে চেয়েছিল।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর থেকে 'ন্যাশনাল মার্চ ফর প্যালেস্টাইন' ব্রিটিশ রাজধানী লন্ডনে ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছে।
ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক হামলায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়। হামাসের হাতে জিম্মি হয় ২৪০ জনেরও বেশি। জবাবে তখন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এ হামলায় গাজায় ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি শিশু।
যুক্তরাজ্যের সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা ও আইনসভার ইজলিংটনের সদস্য জেরেমি করবিনও এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। তিনি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।
আর্মিস্টিস ডে হওয়ায় এদিন কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রীরা বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
পুলিশ ফিলিস্তিনপন্থী কর্মসূচি নিষিদ্ধের দাবি প্রত্যাখ্যান করার পর গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারের কাছে নিরাপত্তার বিষয়ে জবাবদিহিতা চাইবেন।
ডানপন্থী বিক্ষোভবিরোধীরা গ্রেপ্তার
এদিকে ফিলিস্তিনিদের কর্মসূচির বিরোধিতাকারী অন্তত ৮২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ফিলিস্তিনপন্থী এই কর্মসূচি শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে বিক্ষোভস্থল থেকে এক মাইল (১.৬ কিলোমিটার) দূরে প্রায় এক হাজার মানুষ সিনোটাফ যুদ্ধ স্মৃতিসৌধতে স্মরণ অনুষ্ঠান দেখার জন্য সড়কে লাইন ধরেন।
এই ভিড়ের মধ্য থেকে ডানপন্থী কয়েকজন বিক্ষোভ কর্মসূর্চির বিরোধিতা জানান। তারা উচ্চারণ করেন, 'আমরা আমাদের দেশকে ফেরত চাই।'
একপর্যায়ে পুলিশ ও বিক্ষোভবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে আরো কিছু জায়গাতেও।
সিনোটাফের কাছে হাতাহাতির জেরে মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ম্যাট টুইস্ট এক বিবৃতিতে বলেন, কয়েক শতাধিক বিক্ষোভকারী আসে এবং তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংসতার অভিপ্রায় লক্ষ্য করা যায়। কাছে লাঠি, ছুরি, মাদক ও জরুরি পরিষেবার এক কর্মীকে লাঞ্ছিত করায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি যোগ করেন, আমাদের এ পর্যন্ত দেখা ফিলিস্তিনপন্থী সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ ছিল এটি। তাদের কর্মসূচিতে কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।
লন্ডনের মেয়র সাদিক খান এক এক্স (সাবেক টুইটার) বার্তায় বলেন, 'বিক্ষোভবিরোধীদের শৃঙ্খলবা ভঙ্গের এ ঘটনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সরাসরি প্রতিক্রিয়া।'
সম্প্রতি ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যান ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকে 'ঘৃণিত কর্মসূচি' বলে অভিহিত করেছিলেন এবং বলেছিলেন, গাজার সমর্থনে কর্মসূচির প্রতি পুলিশের সহানুভূতি রয়েছে।