হেনরি কিসিঞ্জার: নোবেল পুরস্কার জয়ী 'যুদ্ধবাজ' ১০০ বছর বয়সে মারা গেছেন
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন। গতকাল (বুধবার) ১০০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বিতর্কিত এই রাজনীতিবিদ।
কিসিঞ্জারের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছে কিসিঞ্জার এসোসিয়েটস ইনক প্রতিষ্ঠান। কানেকটিকাটে নিজ বাড়িতেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
বয়স হয়ে গেলেও মার্কিন রাজনীতিতে নিজের সক্রিয় অবস্থান জারি রেখেছিলেন কিসিঞ্জার। হোয়াইট হাউসে মিটিংয়ে অংশ নেওয়া, লিডারশীপের ওপর বই প্রকাশ করেছিলেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকি সম্পর্কে সিনেট কমিটিকে পরামর্শ প্রদান ইত্যাদি নানা কাজ করতে দেখা যায় তাকে।
একইসাথে গত জুলাইয়ে বেইজিং সফর করে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে সাক্ষাতও করেছিলেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ।
১৯৭০-এর দশকে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও জেরাল্ড ফোর্ডের অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কিসিঞ্জার। ঐ সময়টাতে বৈশ্বিক নানা বিখ্যাত ঘটনায় প্রত্যক্ষ হাত ছিল তার।
১৯২৩ সালের ২৭ মে জার্মানির এক ইহুদি পরিবারে জন্ম কিসিঞ্জারের। পরে তাঁর পরিবার পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যায়। ওই শহরেই বেড়ে ওঠেন কিসিঞ্জার।
কম্বোডিয়া ও লাওসে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সম্প্রসারণ, চিলি ও আর্জেন্টিনায় সামরিক অভ্যুত্থানে সমর্থন, ১৯৭৫ সালে পূর্ব তিমুরে ইন্দোনেশিয়ার রক্তক্ষয়ী অভিযানের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ইতিহাসে কিসিঞ্জার বেশ সমালোচিত এক নাম।
একইসাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের ব্যাপক নৃশংসতাকে সমর্থনের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
'যুদ্ধবাজ' হিসেবে পরিচিত হলেও কিসিঞ্জারকে ১৯৭৩ সালে প্রদান করা হয় নোবেল শান্তি পুরস্কার। নোবেলের ইতিহাসে এটিকে অন্যতম বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বলেও অভিহিত করা হয়৷ এরই সূত্র ধরে নোবেল কমিটির দুইজন সদস্য পদত্যাগও করেছিলেন।
সরকারি পদ ত্যাগের পর কিসিঞ্জার নিউইয়র্কে একটি প্রভাবশালী পরামর্শক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি বিশ্বের বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। এছাড়াও জীবনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত তিনি বই লিখেছেন এবং আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে নিয়মিত গণমাধ্যমে কথা বলেছেন।
২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলার পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বুশ কিসিঞ্জারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন৷ তবে ডেমোক্র্যাটদের তীব্র বিরোধিতায় তাকে অবশেষে এই পদ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়৷
১৯৬৪ সালে প্রথম স্ত্রী অ্যান ফ্লেশারের সাথে কিসিঞ্জারের বিবাহবিচ্ছেদ হয়৷ পরবর্তীতে তিনি ১৯৭৪ সালে নিউইয়র্কের গভর্নর নেলসন রকফেলারের সহযোগী ন্যান্সি ম্যাগিনেসকে বিয়ে করেন।