বিদেশি কর্মীদের ভিসার জন্য বেতনসীমা বাড়ানোর ঘোষণা দিল যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্য সরকার নিট মাইগ্রেশন কমাতে বিদেশি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোসহ বেশ কয়েকটি পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।
২০২২ সালের রেকর্ড নিট মাইগ্রেশনের ঘটনায় চাপের মুখে পড়েন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ন্যূনতম মজুরি এক-তৃতীয়াংশ বাড়াতে চাইছে সরকার।
উল্লেখ্য, নিট মাইগ্রেশন হলো কোনো অঞ্চলে প্রবেশকারী (অভিবাসী) এবং সেই অঞ্চল ছেড়ে চলে যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যার পার্থক্য। এটি সাধারণত একটি বছরের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে হিসাব করা হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি গতকাল সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বলেছেন, সরকার বিদেশি দক্ষ কর্মীদের জন্য ন্যূনতম বেতনসীমা ২৬ হাজার ২০০ পাউন্ড (৩৩ হাজার ডলার) থেকে বাড়িয়ে ৩৮ হাজার ৭০০ পাউন্ড (৪৮ হাজার ৮০০ ডলার) নির্ধারণ, চাকরির তালিকা সংস্কার এবং শ্রমিকরা তাদের পরিবার নিয়ে আসতে পারবে কি না সে বিষয়ে কঠোর নিয়ম করবে।
তিনি বলেন, "এই দেশে অভিবাসন অনেক বেশি এবং এটি হ্রাস করা দরকার। আজ আমরা আগের যে কোনো সরকারের চেয়ে আরো শক্তিশালী পদক্ষেপ নিচ্ছি।"
আগামী বসন্ত থেকে এ পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে উচ্চহারের বৈধ অভিবাসন ব্রিটেনের রাজনৈতিক পটভূমিতে এক ধরনের আধিপত্য বিস্তার করেছে। কনজারভেটিভ পার্টির আইনপ্রণেতারা আগামী বছরের সম্ভাব্য নির্বাচনের আগে ঋষি সুনাকের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার পর তিনি এ বিষয়ে আরো কড়াকড়ির প্রতিশ্রুতি দেন। কনজারভেটিভ নেতৃত্বাধীন সরকার একসময় এক লাখেরও কম অভিবাসন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।
কঠোর শ্রম বাজার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে ব্রিটেনে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বেশ লড়াই করতে হচ্ছে। এরমধ্যে ব্রিটিশ সরকারের নতুন পদক্ষেপগুলো এই ব্যবসায়ীদের সাথে নতুন বিতর্ক তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত মাসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে বার্ষিক নিট অভিবাসন গত বছর রেকর্ড সাত লাখ ৪৫ হাজার ছুঁয়েছে।
ক্লেভারলি বলেন, 'এই পদক্ষেপসমূহ ও বিদেশি শিক্ষার্থী নির্ভরশীলতা কমানোর অর্থ হলো আগামী বছরগুলোতে যুক্তরাজ্যে গত বছরের তুলনায় প্রায় তিন লাখ লোক কম আসবে।'
ব্রেক্সিট ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ
ব্রেক্সিট গণভোট প্রচারাভিযানের নেতাদের যুক্তি ছিল ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার মাধ্যমে ব্রিটেনের সীমান্ত আরো বেশি নিয়ন্ত্রিত হবে। যারা ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে আসার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, তারা তাদের এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে উচ্চ অভিবাসন এবং সরকারি পরিষেবার উপর চাপের কথা উল্লেখ করেছিলেন।
তবে ব্রিটেন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউক্রেন ও সাবেক উপনিবেশ হংকংয়ের লোকদের জন্য ভিসা স্কিম চালু করেছে। প্রকৌশল, নির্মাণ এবং ক্যাটারিংয়ের মতো খাতগুলোতে নিয়োজিত কোম্পানিগুলো জনবল ঘাটতি পূরণের উদ্দেশে আন্তর্জাতিক কর্মী নিয়োগের অনুমতি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
২০২২ সালে সব মিলিয়ে যুক্তরাজ্য ছেড়েছে প্রায় ১১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ, যেখানে পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার অভিবাসী যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে।
অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস (ওএনএস) গত মে মাসে জানিয়েছিল, গত বছর যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করা ৯ লাখ ২৫ হাজার মানুষ ছিল ইইউভুক্ত নয় এমন দেশের নাগরিক। যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করা ইইউভুক্ত দেশের মানুষের সংখ্যা ছিল মাত্র এক লাখ ৫১ হাজার এবং ব্রিটিশ নাগরিক ছিল ৮৮ হাজার।
প্রতিষ্ঠানটি আরো জানিয়েছে, গত বছর বিশেষ ভিসা স্কিমের অধীনে ইউক্রেন থেকে এক লাখ ১৪ হাজার এবং হংকং থেকে ৫২ হাজার মানুষ যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে।
ব্রেক্সিট গণভোটের এক বছর আগে ২০১৫ সালে ব্রিটেনে নিট মাইগ্রেশন ছিল তিন লাখ ২৯ হাজার।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপ থেকে হাজার হাজার মানুষ নৌকায় করে ইংলিশ চ্যানেল হয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের পর অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেন সুনাক।