এসে গেল বহুল আলোচিত টেসলার ‘সাইবারট্রাক’: কেমন দাম, কীভাবে সবার চেয়ে আলাদা!
ঘোষণা দেওয়ার চার বছর পর অবশেষে বাজারে এসেছে ইলন মাস্কের টেসলা কোম্পানির 'সাইবারট্রাক'। টেক্সাসে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অনলাইন নেটিজেনে আলোচিত উদ্ভট ডিজাইনের এই বৈদ্যুতিক গাড়িটির প্রথম চালানের ডেলিভারি দেওয়া শুরু হয়।
জনপ্রিয় টেক ইউটিউবার মার্কেস ব্রাউনলি সম্প্রতি গাড়িটির দাম ও সব ফিচার নিয়ে ইউটিউবে একটি ভিডিও রিভিউ প্রকাশ করেছেন।
মার্কেস বলেন, 'এই গাড়িতে কিছু আশ্চর্যজনক জিনিস রয়েছে, কিছু বৈশিষ্ট্য যা সত্যিই দুর্দান্ত, যা ট্রাকপ্রেমী সবাই-ই পছন্দ করবে।'
সিঙ্গেল, ডুয়েল ও ট্রিপল মোটরের তিনটি সংস্করণে বাজারে ছাড়া হয়েছে গাড়িটি। সর্বনিম্ন ৬০ হাজার মার্কিন ডলার খরচ করতে হবে সিঙ্গেল মোটরের সংস্করণটি কেনার জন্য।
তবে মার্কেস ট্রিপল মোটরের সংস্করণটিকে 'বিস্ট' বলে আখ্যায়িত করেন। কারণ ৮৪৫ অশ্বক্ষমতার (হর্সপাওয়ার) এই সংস্করণটির গতি ঘণ্টায় শূন্য থেকে ৬০ মাইলে পৌঁছাতে মাত্র ২.৭ সেকেন্ড লাগে, যা সুপারকার ফেরারির থেকেও ০.২ সেকেন্ড কম!
ট্রিপল মোটরের সাইবারট্রাকের দাম ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ডলার।
আর এর নিচের ডুয়েল মোটরের সংস্করণটির দাম পড়বে ৭৫ হাজার থেকে ৮৫ হাজার ডলার। ডুয়াল মোটরের সাইবারট্রাকের ইঞ্জিন ৬০০-র বেশি অশ্বসক্ষমতার হবে বলে জানা গেছে।
তবে সব সংস্করণের সাইবারট্রাকই ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড ওজন বহনে সক্ষম, আর টোয়িং সক্ষমতা ১১ হাজার পাউন্ড।
মার্কেস গাড়িটির আরো কিছু বৈশিষ্ট্য তার ভিডিওতে তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে: সামনের মোটরচালিত ট্রাংক, পরিবর্তনযোগ্য চাকার এরোক্যাপ বা আবরণ, বিশ্বের সবচেয়ে বড় উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার, পরিবর্তনযোগ্য সাইডভিউ মিরর, ২০ ইঞ্চির চাকায় ৩৫ ইঞ্চি গুডইয়ার টায়ার, হ্যান্ডেলবিহীন টাচস্ক্রিন দরজা।
তার মতে, গাড়িটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক যা ক্রেতাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করে, তা এর ত্রিভুজাকৃতির ধারালো কোনার স্টেইনলেস স্টিল ডিজাইন, যেটি গতানুগতিক যেকোনো গাড়ি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
গাড়িটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর সম্মুখমুখী কাঁচ বা উইন্ডশিল্ড, যার আকার অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রির এই ধরনের গাড়ির মধ্যে সর্বোচ্চ। তাই এটি চালককে আরো ভালো দৃষ্টিমান প্রদান করে।
মার্কেস গাড়ির ভেতরের ডিজাইনেরও প্রশংসা করেন। সম্পূর্ণ সফটওয়্যার-নিয়ন্ত্রিত সাইবারট্রাকের ড্যাশবোর্ডে একটি টাচস্ক্রিন রয়েছে যার মাধ্যমেই গাড়ির সব ফিচার নিয়ন্ত্রণ করা যায়, আলাদা কোনো বাটনের প্রয়োজন হয় না। এতে রয়েছে টাইপ-সি চার্জিং পোর্ট এবং ১২০ ভোল্টের অ্যাডাপ্টার পোর্ট। ভেতরের কেবিনের লেগ স্পেসও যথেষ্ঠ বড়।
এছাড়া সাইবারট্রাকের আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এর স্টিয়ারিং হুইল, যা উভয় দিকেই ১৮০ ডিগ্রির কম ঘোরে, যার দরুন চালক পুরো হাত না ঘুরিয়েই গাড়িটিকে ডানে বা বাঁয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
মার্কেস বলেন, সাইবারট্রাক চালানোর অভিজ্ঞতা অন্যান্য টেসলা গাড়ির মতোই, শুধু সাইবারট্রাকের আকারটা একটু বড় এবং ডিজাইনটা ভিন্ন।
গাড়িটিতে লম্বা দূরত্বে চালানোর জন্য সুপারচার্জিং অপশন এবং ব্যাটারি আপগ্রেডের সুবিধা রয়েছে। টেসলা জানায়, আরো ১৬ হাজার ডলার খরচ করে বাড়তি ব্যাটারি যোগ করলে গাড়িটির রেঞ্জ আরো ১২০ মাইল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যাবে।
তবে সাইবারট্রাকের ডিজাইন নিয়ে প্রধান উদ্বেগ হলো বরফ। মার্কেসের মতে, পুরোপুরি মেটাল বডি হওয়ায় গাড়িটি সহজেই বরফে আচ্ছাদিত হয়ে পড়বে, ফলে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় চালানো চালকদেরকে অনেকখানি বেগ পেতে হবে তাদের গাড়ির হ্যান্ডেলবিহীন দরজা খুলতে। যদিও এটি বড় কোনো সমস্যা নয় বলে দাবি করছে টেসলা।
আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, সাইবারট্রাকে ডোর হ্যান্ডেল না থাকায় চালক হয়তো দরজার কোন প্রান্ত ধরতে হবে, তা বুঝতে পারবেন না। এতে স্টেইনলেস স্টিলের প্যানেলে দাগ পড়ে যাবে।