বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাঁতে যেসব পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে!
সুস্থ দাঁতে সুন্দর হাসি আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে; সুখী জীবনযাপনে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দেহের মতোই আমাদের দাঁতে বার্ধক্যজনিত পরিবর্তন আসতে থাকে। সেক্ষেত্রে দাঁতগুলোকে ভালো রাখতে এবং মুখের হাসি ধরে রাখতে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করা ও যত্ন নেওয়া উচিত।
দাঁতের উপাদান
দাঁতের মুকুট শক্ত এনামেল আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে। এটি নরম, বাদামী ডেন্টিনকে ঘিরে থাকে, যা কেন্দ্রে অবস্থিত পাল্পকে রক্ষা করে।
এনামেলের নিচে থাকা ডেন্টিন দাঁতের বেশিরভাগ মুকুট ও মূল গঠন করে। এটি কোলাজেন, খনিজ, পানি ও প্রোটিন দিয়ে তৈরি। আর পাল্পে রক্তনালী ও স্নায়ু থাকে যা দেহের বাকি অংশের সাথে সমন্বয় করে।
দাঁতের বার্ধক্যজনিত পরিবর্তন
সময়ের সাথে সাথে আমাদের দাঁত ভঙ্গুর হয়ে যায়। একইসাথে ডেন্টিন সজীব অবস্থা হারানোর কারণে ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি থাকে। এনামেলের বাইরের পৃষ্ঠে অপেক্ষাকৃত অস্বচ্ছ ডেন্টিন প্রকাশ পেতে থাকে। যা বয়সের সাথে সাথে আরও কালো হয়ে যায়।
ডেন্টিন কালো হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে কোলাজেন শক্ত ও সংকুচিত হয়ে যায়। আর টিউবুলের মধ্যে থাকা তরল খনিজ দিয়ে পূর্ণ হয়। অন্যদিকে ওডন্টোব্লাস্টগুলি দাঁতের ভিতরে ডেন্টিন তৈরি করতে থাকে যাতে ট্রান্সলুসেন্ট পাল্পের জায়গা কমে যায়।
ডেন্টিনের বৃদ্ধি আমাদের দাঁতগুলিকে অস্বচ্ছ করে এবং গরম ও ঠান্ডা অনুভূতি থেকে দূরে রাখে। ঠিক এজন্যই দাঁতের ক্যাভিটি যাচাইয়ে এক্স-রে করা দরকার। এতে আমরা অনুভব করছি না এমন সমস্যাও সনাক্ত করা যায়।
খাদ্য ও পানীয়ের কণাগুলি মাইক্রো-গ্যাপ এবং বার্ধক্যজনিত সূক্ষ্ম ফাটল রেখা পূরণ করে। এটি এনামেলকে বিবর্ণ করে এবং দাঁতে দাগের তৈরি করে। এই দাগগুলি সহজেই দাঁত হোয়াইটেনিং করার মাধ্যমে ঠিক করা যায়।
বয়সের সাথে সাথে দাঁতের সুরক্ষায় ও উজ্জ্বলতা নিশ্চিতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শকৃত বেশ কিছু উপায় রয়েছে।
১. দাঁতে অপ্রয়োজনীয় চাপ প্রদান এড়িয়ে চলুন
কাজের সরঞ্জাম বা নানা ধরণের প্যাকেজিং খোলা কিংবা ধরে রাখার মতো বিষয়ের ক্ষেত্রে দাঁতের ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। আপনার যদি বড় ফিলিংস বা রুট ক্যানেল চিকিত্সা করা দাঁত থাকে, তবে আপনার দাঁতের ডাক্তারের সাথে নির্দিষ্ট ফিলিং উপাদান বা মুকুটের নিরাপত্তা সম্পর্কে কথা বলুন। যাতে করে আপনার দাঁত ফাটল বা ভেঙে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারে।
২. চাপ ছড়িয়ে দিন
আপনার যদি মোলার বা প্রিমোলার দাঁত না থাকে, তবে অবশিষ্ট দাঁতকে অতিরিক্ত চাপ থেকে রক্ষা করতে খাবার চিবানোর সময় চাপকে মুখের চারপাশে সমানভাবে ছড়িয়ে দিন।
যাতে খাবার ঠিকঠাক চিবাতে পারেন সেক্ষেত্রে ব্রিজ, ইমপ্লান্ট বা ভালোভাবে লাগানো দাঁত দিয়ে হারিয়ে যাওয়া দাঁতগুলিকে প্রতিস্থাপন করুন। এক্ষেত্রে দাঁতগুলি ঠিকঠাক আছে কি-না সেটি নিশ্চিত করতে নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। একইসাথে কমপক্ষে প্রতি দশ বছর পর পর সেগুলো প্রতিস্থাপন করতে হবে।
৩. এনামেলের ক্ষয় প্রতিরোধ
এনামেল ও ডেন্টিনের ক্ষয় কমাতে সবসময় চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে নরম ব্রাশ ব্যবহার করা এবং দাঁতের ক্ষয় করে এমন টুথপেস্ট ব্যবহার না করাই উত্তম।
এক্ষেত্রে দাঁতের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিকারী কিছু টুথপেস্ট এনামেলের ক্ষয় করতে পারে। এটি দাঁতের উপরিভাগকে রুক্ষ করে তুলতে পারে। তাই এক্ষেত্রে 'সেনসিটিভ' লেবেল করা টুথপেস্ট ব্যবহার করাই উত্তম। এনামেল বজায় রাখতে ও ক্ষয় রোধ করতে খাবারের সময় বা অসুস্থতায় (বমি) দাঁতে অ্যাসিডের সংস্পর্শ কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।
৪. লালার উন্নতি
লালা দাঁতকে অ্যাসিড আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এতে ক্ষয় কমাতে ব্যাকটেরিয়ারোধী বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। এছাড়াও এটি খাবার চিবাতে, গিলতে এবং কথা বলতে সাহায্য করে।
তবে বয়সের সাথে সাথে লালার গুণমান ও পরিমাণও হ্রাস পায়। এক্ষেত্রে বিষণ্নতা ও উচ্চ রক্তচাপের মতো দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ফলে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের ব্যবহারও ফ্যাক্টর হিসবে কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে লালার গুণমান বৃদ্ধিতে কিংবা ক্ষয় রোধে বিকল্প ওষুধের ব্যবহার করা যায় কি-না সেই সম্পর্কে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৫. বার্ধক্য প্রতিরোধ
সেলুলার সেন্সেন্স এমন একটি প্রক্রিয়া যা আমাদের কোষে ডিএনএ পরিবর্তন করে শারীরিক, রাসায়নিক বা জৈবিক ক্ষতি সহ্য করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এটি ক্যান্সার তৈরি, বিদ্যমান ক্যান্সারের বিস্তার এবং আলঝেইমার্স, ডায়াবেটিস, অস্টিওপরোসিস ও হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার সূত্রপাত বাড়ায়। এক্ষেত্রে জীবনযাপনের পরিবর্তন এনে যথা ধূমপান বন্ধ করা ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার মতো বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৬. বয়সের সাথে মানিয়ে নেওয়া
বার্ধক্য আমাদের বোধশক্তি, হাতের দক্ষতা এবং দৃষ্টিশক্তিকে প্রভাবিত করে। এতে করে অনেকে দাঁত ও মাড়ি পরিষ্কারের বিষয়েও উদাসীন হয়ে যায়। হয়তো একসময় দাঁত নিয়ে বহু যত্নশীল মানুষও দাঁতের অবহেলা শুরু করতে পারেন।
এক্ষেত্রে দাঁতের সুরক্ষায় চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে। তারা সহজে দাঁত পরিস্কার রাখার ও ক্ষতি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর পরামর্শ দেবেন।