ইসরায়েল ও হামাস উভয়ের দাবির বিপরীতে মিশরের জিম্মি মুক্তির প্রস্তাব
গাজা উপত্যকায় আটক জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাস ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি দাবিসহ একটি রূপরেখা প্রস্তাব দিয়েছে মিসর। এতে তিন ধাপে জিম্মিদের মুক্তির পাশাপাশি উভয়পক্ষের এই সংঘাত বন্ধের কথা বলা হয়েছে।
হারেৎজের খবরে বলা হয়েছে, গত রবিবার এ ধরনের দুটি রূপরেখা ফাঁস হয়। পরে সেগুলো গণমাধ্যমের হাতে আসে। রূপরেখা দুটির বেশ কিছু বিষয়ে ভিন্নতা থাকলেও মৌলিক বিষয়গুলো একই।
রূপরেখায় বলা হয়েছে, চুক্তির প্রথম ধাপে ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী হামাস ৪০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে। আর তৃতীয় তথা চূড়ান্ত ধাপে হামাসের দাবি অনুযায়ী সংঘাত বন্ধে ইসরায়েল বৃহৎ পরিসরের চুক্তিতে সম্মত হবে। অর্থাৎ ইসরায়েল শত্রুতা বন্ধ ও গাজা উপত্যকা থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করবে এবং এর বিনিময়ে হামাস উপত্যকাটিতে জিম্মি ও অপহৃত ইসরায়েলি সৈন্যদের সবাইকে মুক্তি দেবে।
জনসাধারণের আপত্তি সত্ত্বেও হামাস এখনো এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেনি। যতদূর জানা গেছে, ইসরায়েল মনে করে রাজনৈতিক পর্যায়ে এই চুক্তি প্রত্যাখ্যাত হবে।
হিজবুল্লাহ-সংশ্লিষ্ট লেবাননের সংবাদপত্র আল আখবার তিন ধাপের এ চুক্তির বিষয়ে জানিয়েছে, প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি এক সপ্তাহ থেকে দশদিন স্থায়ী হবে। আর এই সময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিনিময়ে হামাস গাজায় জিম্মি নারী, শিশু, অসুস্থ ও বয়স্কদের মুক্তি দেবে। সেই সাথে ইসরায়েলি বাহিনী এই সময়টায় সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে এবং তাদের সৈন্যদের আবাসিক এলাকা থেকে দূরে কোথাও মোতায়েন করবে।
দ্বিতীয় ধাপে হামাস ইসরায়েলি নারী সৈন্যদের মুক্তি দেবে এবং উভয়পক্ষ নিহতদের লাশ বিনিময় করবে।
তৃতীয় ধাপে এসে হামাসের বন্দিদশায় থাকা সব ইসরায়েলি সৈন্যকে মুক্তি দেওয়া হবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল গাজা থেকে সব সেনা সরিয়ে নিয়ে উপত্যকাটির সীমান্তের বাইরে মোতায়েন করবে। একইসাথে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধে হামাস প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে।
ধারণা করা হচ্ছে, রূপরেখাটির শুরুর অংশ দেখে উভয়পক্ষই এটি প্রত্যাখ্যান করবে। কারণ, ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করা এবং হামাসের ঊধ্র্বতন কর্মকর্তাদের সুরক্ষার জন্য গাজায় জিম্মিরা হামাসের কাছে একটি কৌশলগত সম্পদ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
গত মাসে গাজায় সাতদিনের মানবিক বিরতি চলাকালে উভয়পক্ষই নিজেদের বন্দি বিনিময় করে। চুক্তি শেষ হওয়ার পর থেকে হামাস নারী, শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি এড়িয়ে চলছে। সংগঠনটি বলছে, ইসরায়েলি অভিযান বন্ধের জন্য জিম্মিরা হবে চুক্তির একটি অংশ।
অন্যদিকে ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে, তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ হামাসের সামরিক ও রাজনৈতিক সক্ষমতা সম্পূর্ণ ধ্বংস না করা পর্যন্ত জিম্মি চুক্তির ওপর নির্ভর করে যুদ্ধের ইতি টানতে সম্মত হবে না।
কাতার ও মিসরের এই মধ্যস্থতার প্রচেষ্টার সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে যে এ রূপরেখা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কম। তবে তুলনামূলক আশার জায়গা রয়েছে।
মিসরের এ রূপরেখা ইসরায়েলের সীমিত মানবিক চুক্তির দাবি ও হামাসের বৃহৎ পরিসরের চুক্তির দাবির মধ্যে সংযোগ স্থাপনেরই একটি প্রচেষ্টা।
উভয়পক্ষের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত যেকোনো চুক্তিতে পৌঁছানো আরো কঠিন করে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিছু রাজনীতিক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, যুদ্ধ আরও গভীর হওয়ার সাথে সাথে জিম্মিদের মুক্তি আরো কঠিন হয়ে উঠতে পারে।