কঙ্গোর হাতে তৈরি বিস্ময়কর কাঠের স্কুটার! ছুটছে সর্বত্র
চুকুডু। হাতে তৈরি দুই চাকার কাঠের স্কুটার। আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে সচারচর এ যানটি দেখা যায়। যন্ত্রচালিত বাহনগুলোর তুলনায় খরচ কম হওয়ায় এসব স্কুটারে পণ্য বা মালামাল পরিবহন দিন দিন বাড়ছে। দুই চাকার এ যান সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি। চাকা থেকে শুরু করে এর হ্যান্ডেল, সিট, ব্রেক সবকিছুই কাঠের।
এ স্কুটারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এতে কোনো জ্বালানির প্রয়োজন পড়ে না। ভারি ভারি বোঝা অনায়াসেই বহন করা যায়। ছোট আকারের একটি চুকুডুও শতাধিক পাউন্ড ওজন বহন করতে পারে।
আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে এমন বিচিত্র ধরনের নানা বাহন দেখা গেলেও এ অঞ্চলে চুকুডুর ব্যবহারই বেশি। স্থানীয়রা জানান, এই মোটরবিহীন যানবাহনগুলো গত শতাব্দীর প্রায় মাঝামাঝি সময় থেকে কঙ্গোতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দেশটির নর্থ কিভু প্রদেশের রাজধানী গোমায় প্রথম এ স্কুটারের ব্যবহার শুরু হয়।
যানটিতে যখন কোনো মালামাল থাকে না কিংবা কম থাকে, তখন চালক তার এক যানটিতে রেখে অন্য পা দিয়ে মাটিতে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে যানটি চালিয়ে থাকে। আর মালামাল বেশি থাকলে অনেক সময় এটিকে ঠেলে ঠেলেও চালানো হয়ে থাকে।
গোমার চুকুডুচালক মইসি কাদুহা বলছিলেন, 'চুকুডু আমাদের জন্য অতি জরুরি একটি বাহন। এটি আমাদের নিজেদের তৈরি। এ কারণে আমার কাছে বিষয়টি গর্বের।'
২০০৬ সালে দেশটিতে জাতিসংঘ মিশনের পক্ষ থেকে চুকুডু প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছিল। এ প্রতিযোগিতায় কাদুহা জয়ী হয়েছিলেন।
গোমার চুকুডুচালক সমিতির তথ্যমতে, গোমায় এক হাজার ৩০০ টিরও বেশি নিবন্ধিত চুকুডু রয়েছে। যানগুলো এ অঞ্চলের সংকটজনক অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এমনকি অল্প বয়সের ছেলেরাও এ যান দিয়ে অর্থ উপার্জন করছে।
স্যামসন এমবাবাজি নামে এক চুকুডু মিস্ত্রী জানান, একটি চুকুডু তৈরি করতে প্রায় তিন দিন সময় লাগে। সাধারণত মাম্বা ও ইউক্যালিপ্টাস গাছের কাঠ দিয়ে এ স্কুটার তৈরি করা হয়ে থাকে। পুরনো বা ফেলনা টায়ারের সাহায্যে চুকুডুর কাঠের তৈরি চাকা টেকসই ও সড়কে চলাচল উপযোগী করা হয়। ভারি ও মজবুত স্প্রিংয়ের সাহায্যে চুকুডুর হ্যান্ডেলকে কোণাকুণিভাবে সংযুক্ত করা হয়।
এমবাবাজি জানান, সাধারণত যানগুলো প্রায় সাড়ে ছয় ফুট লম্বা ও প্রায় সাড়ে ৪০০ কেজি ওজন বহন করতে পারে। এছাড়াও বড় আকারের একটি চুকুডু ৮০০ কেজি পর্যন্ত ওজন বহন করতে পারে।
ফ্রেডি নাইরেনগানিয়ে নামে এক চুকুডু চালক জানান, তিনি প্রতিটি ভাড়ায় অন্তত ৭ হাজার ফ্রাঙ্ক (৭.০৭ ডলার) উপার্জন করেন। দিনে একাধিক স্থানে ভাড়ায় মালামাল পরিবহন করেন তিনি। কাজটি কষ্টের বলেও জানান এই চুকুডু চালক। তার ইচ্ছা নিজের টাকায় একটি চুকুডু কিনবেন।
মেডি সনি নামে স্থানীয় এক দোকানি জানান, তিনি কম দামে তার দোকানের পণ্য পরিবহনের জন্য চুকুডু ব্যবহার করে থাকেন।
জুয়েলারি ও পোশাক বিক্রয়কর্মী এবেনেজার দাওয়া ইয়া বাইয়ানা জানান, কঙ্গোতে যেখানে এক লিটার গ্যাসের দাম ২ ডলার পর্যন্ত হতে পারে, সেখানে চুকুডু অনেকের কাছেই স্বস্তির একটি যান বলা চলে। কারণ কাঠের তৈরি এ স্কুটারগুলো চালানোর জন্য কোনো ধরনের জ্বালানির দরকার পড়ে না।
কঙ্গোর এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ মনে করে চুকুডু তাদের শহরকে গতিশীল রেখেছে। গোমার ব্যস্ততম একটি সড়কের গোলচত্বরে চালকসহ স্বর্ণরঙা একটি চুকুডুর ভাস্কর্যও স্থাপন করা হয়েছে।
তবে সড়কে এ যানগুলোর চলাচল বাড়ার সাথে সাথে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে। রাচিদি ফিকিরিনি নামে শহরের একজন সিনিয়র ট্রাফিক পুলিশ কমিশনার বলেছেন, তাদের কাছে প্রায়ই চুকুডু সংক্রান্ত দুর্ঘটনার খবর আসছে।
গোমার বাসিন্দা জিন কাজাদি জানান, চুকুডুর কারণে রাস্তায় এমনকি পথচারী এলাকায়ও স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'চুকুডুর কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে এবং দুর্ঘটনাও ঘটছে।'