চট্টগ্রামে প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার; ১ কেজি প্লাস্টিকে ৬ ডিম, ৪ কেজিতে সয়াবিন তেল
প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর। যেখান থেকে কিছু কিনতে টাকা লাগবে না, কেবল লাগবে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক। যা দিয়ে ভোক্তারা পছন্দের জিনিসপত্র নিতে পারবেন।
প্লাস্টিক দূষণমুক্ত নগর গড়তে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এক বছর মেয়াদি এ প্রকল্প চালু করেছে।
আজ সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) নগরীর বাকলিয়া স্টেডিয়ামে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন। পরে সিটি করপোরেশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রকল্পটির অধীনে পতেঙ্গা ও হালিশহরে দুটি স্থায়ী স্টোর চালু থাকবে, যেখানে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দিয়ে পণ্য পাওয়া যাবে।
এছাড়া ৫০টি ভ্রাম্যমাণ বাজার ক্যাম্প হবে, যেখানে প্রতি ইভেন্টে ৫০০টিরও বেশি পরিবার প্লাস্টিক জমা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই লাখ কেজি পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারে যেখানে প্রতি কেজি পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের দাম ২০-২৫ টাকা, সেখানে এ প্রকল্পে বিদ্যানন্দ ৫০-৮০ টাকা পর্যন্ত দাম দিচ্ছে।
এ বাজারে এক কেজি প্লাস্টিক দিয়ে ভোক্তা ছয়টি ডিম, চার কেজি প্লাস্টিক দিয়ে এক লিটার সয়াবিন তেল, একটি মুরগি বা মাছ পাবেন। এছাড়াও শিক্ষাসামগ্রী, কাপড়, স্যানিটারি প্যাডসহ ২২ ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থাকছে এ সুপারশপে।
আয়োজকরা জানান, প্রথম দিনে ৫০০টিরও বেশি স্থানীয় প্রান্তিক পরিবার প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার করার সুযোগ পেয়েছেন। এদিন তারা পাঁচ মেট্রিক টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সংগ্রহ করতে পেরেছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, "আমি পলিথিন-প্লাস্টিকের দূষণমুক্ত চট্টগ্রাম গড়তে চাই। আজকের এ প্রকল্প এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।''
বিদ্যানন্দের বোর্ড সদস্য মো. জামাল উদ্দিন বলেন, 'প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা এতই ব্যাপক যে এটি সরকারের একার পক্ষে রোধ করা অসম্ভব। এ দূষণ কমাতে ব্যাপক জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা প্রয়োজন। তাই মানুষকে সম্পৃক্ত করতেই আমরা সারাদেশে প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর চালু করছি। এ বিষয়ে আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। আশা করছি, এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্লাস্টিকের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনগণকে ধারণা দিতে পারব এবং প্লাস্টিক দূষণ রোধ ও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকারের যে বিপুল ব্যয় হয়, তা আমাদের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে কিছুটা হলেও কমাতে পারব।'
জামাল উদ্দিন আরও জানান, এটি একটি টেকসই অলাভজনক ব্যবসায়িক মডেল। প্রথম বছর আমরা প্রতি কেজি প্লাস্টিকে ৩০-৪০ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছি। যেমন, প্রতি কেজি প্লাস্টিকের বিনিময়ে গড়ে ৬০ টাকার পণ্য দিলেও রিসাইকেল কোম্পানির কাছে বিক্রি করে প্রতি কেজিতে গড়ে ৩০ টাকার কম পাচ্ছি। দুই লাখ কেজি প্লাস্টিক রিসাইকেল করতে আমরা পণ্য দিচ্ছি এক কোটি ২০ লাখ টাকার। প্লাস্টিক বিক্রি করে ৬০ লাখ টাকা পাওয়া যাবে। ফলে পরবর্তী বছরে একই পরিমাণ প্লাস্টিক রিসাইকেল করতে ভর্তুকি ৫০ শতাংশ কমানো সম্ভব হবে। তৃতীয় বছরের পর কোনো ভর্তুকি ছাড়াই প্রকল্পটি পরিচালনা করা যাবে।