২০২৩ সাল শেষেও ধনকুবেরদের তালিকায় শীর্ষে ইলন মাস্ক
২০২২ সালটি ছিল বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের সম্পদমূল্য কমার বছর। তবে ২০২৩ সালটি তাদের জন্য আশীর্বাদই বলা চলে। কারণ, বছরটিতে তাদের সম্পদমূল্য কয়েক শ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বেড়েছে। আর এর পেছনে অন্যতম একটি কারণ হলো স্টক মার্কেটে শেয়ারের দাম বাড়া।
গত ২৯ ডিসেম্বর বিশ্বের শীর্ষ ২০ জন ধনীর তালিকা প্রকাশ করেছে ব্লুমবার্গ। এ তালিকায় সবাইকে পেছনে ফেলে আবারও শীর্ষস্থানটি দখল করেছেন টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক।
২০২২ সালের শেষের দিকে মাস্ককে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থান দখল করেছিলেন ফরাসি বিলাসবহুল পণ্যের ব্র্যান্ড লুইস ভিতো মোয়েত হেনসির (এলভিএমএইচ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বার্ডার্ড আর্নল্ট। ২০২২ সালে মাস্ক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার কিনে নেওয়ার সময় বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন। এছাড়াও সামগ্রিকভাবে প্রযুক্তি বাজারে মন্দা চলছিল। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার শেয়ারের দাম অনেক কমে যায়।
তবে ২০২৩ সালে টেসলার শেয়ারের দাম ১০৭ শতাংশ বেড়ে যায়। ফলে স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা মাস্কের নিট সম্পদমূল্য ১৩৮.৩ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২৩২.৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ২৭৭.৩ বিলিয়ন ডলার।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা আর্নল্টের সম্পদের পরিমাণ ১৭৯ বিলিয়ন ডলার। যদিও এলভিএমএইচ এখন আর ইউরোপের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানি নয়, তারপরও আর্নল্টের সম্পদমূল্য বেড়েছে ১৪.৫ বিলিয়ন ডলার।
আর্নল্টের পরেই রয়েছেন বৃহৎ ই–কমার্স সাইট অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। তার নিট সম্পদমূল্য ১৭৮.৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালে তিনি ছিলেন ৬ নম্বরে। সে সময় তার সম্পদমূল্য ছিল ১০৭.২ বিলিয়ন ডলার।
তবে সম্পদমূল্য বাড়লেও তালিকায় আগের অবস্থানেই রয়ে গেছেন মাইক্রোফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। তার অবস্থান চতুর্থ। আগের দুই বছরও একই স্থানে ছিলেন তিনি। ২০২৩ সালে তার সম্পদমূল্য ১০৯.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৪০.৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
পঞ্চম অবস্থানে রয়েছেন মাইক্রোসফটের সাবেক প্রধান নির্বাহী স্টিভ বালমার। তার মোট সম্পদমূল্য ৮৬.২ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৩০.৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে৷
বিশ্বের শীর্ষ ২০ জন ধনীর মধ্যে সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছেন মার্ক জুকারবার্গ। ২০২২ সালে শীর্ষ ২০ জনের মধ্যেও ছিলেন না তিনি। অথচ পরের বছরই সেরা দশে জায়গা করে নেন তিনি। তার অবস্থান ষষ্ঠ। ২০২২ সালে তার সম্পদমূল্য ছিল ৪৪.৮ বিলিয়ন ডলার, যা এখন ১২৯.৬ বিলিয়ন ডলার।
তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছেন গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ। তিনি ২০২২ সালে ছিলেন ১০ম স্থানে। তখন তার সম্পদমূল্য ছিল ৮৩.১ বিলিয়ন ডলার, যা এখন ১২৬.৩ বিলিয়ন ডলার।
গুগলের আরেক সহ-প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন ১২০.৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ নিয়ে নবম স্থানে রয়েছেন। ২০২২ সালে ৭৯.৫ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ সম্পদ নিয়ে তিনি ছিলেন তালিকার ১১ নম্বরে।
তালিকায় এক ধাপ এগিয়ে অষ্টম স্থানে উঠে এসেছেন সফ্টওয়্যার জায়ান্ট ওরাকলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন। তার সম্পদমূল্য ৯১.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১২৩.৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ ২০ ধনকুবেরের তালিকায় পরিচিত একটি নাম ওয়ারেন বাফেট। বছরের পর বছর ধরেই তিনি এ তালিকায় নিজের নামটি ধরে রেখেছেন। তবে সম্পদের পরিমাণ বাড়ার পরও ৫ ধাপ পিছিয়েছেন তিনি। এখন তার অবস্থান ১০ম।
তালিকায় এক ধাপ এগিয়ে ১১ নম্বরে উঠে এসেছেন লাতিন আমেরিকার ধনকুবের কার্লোস স্লিম। টেলিকম কোম্পানি আমেরিকা মভিলের এই মালিকের সম্পদমূল্য ৭৫.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ১০৪.৪ বিলিয়ন ডলার।
কার্লোস স্লিমের পরেই রয়েছেন প্রসাধনী ব্র্যান্ড ল'রিয়ালের উত্তরাধিকারী ফ্রাঁসোয়াস বেতনক্যুঁ মেয়ার। আগের বছরের চেয়ে এক ধাপ এগিয়েছেন তিনি। তার সম্পদমূল্য ৭৫.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ১০০.১ বিলিয়ন ডলার।
তালিকায় মেয়ারের সাথে জায়গা ভাগ করে নিয়েছেন স্প্যানিশ ব্যবসায়ী আমানসিও ওরতেগা। ২০২২ সালে শীর্ষ ২০ জনেরও বাইরে অবস্থান ছিল তার। স্টক মার্কেটে তার পোশাক কোম্পানি ইন্ডিটেক্সের অগ্রগতি ও মোটা অঙ্কের মুনাফা তাকে আবারও শীর্ষ ২০-এ জায়গা করে দিয়েছে। ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, স্প্যানিশ এই ব্যবসায়ীর সম্পদমূল্য ২০২২ সালের চেয়ে ৩২ বিলিয়ন ডলার বেড়ে হয়েছে ৮৭.৬ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, ফোর্বস তার সম্পদের পরিমাণ ১০০.৮ বিলিয়ন ডলার বলে জানিয়েছে।
ওয়ারেন বাফেটের মতোই অবস্থান হারিয়েছেন ভারতের বৃহত্তম কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান নির্বাহী মুকেশ আম্বানি। আগেরবার তিনি ছিলেন ৮ নম্বরে। এবার তার অবস্থান ১৩। তার সম্পদমূল্য ৮৬.৯ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৯৭.১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
তালিকায় সবচেয়ে বেশি পিছিয়েছেন ভারতের আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানি। ২০২২ সালে যেখানে তিনি ছিলেন তিন নম্বরে, সেখানে এবার রয়েছেন ১৫ নম্বরে। তার সম্পদমূল্য ১২১.১ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৮৩ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
অবকাঠামো খাতের টাইকুন গৌতম আদানি ২০২২ সালে ভারতের ধনীদের তালিকায় প্রথমবার মুকেশ আম্বানিকে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে আসেন। কিন্তু পরের বছরের জানুয়ারিতে শর্টসেলার হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনের জেরে ফেব্রুয়ারিতে এক সপ্তাহের মধ্যে আদানির সম্পদমূল্য অনেক কমে যায়।
১৬ নম্বরে রয়েছেন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডেলের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ডেল। তার নিট সম্পদমূল্য ৪৮.৪ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৭৮.৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
তালিকার পরের তিনটি নাম মার্কিন খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্টের মালিক ওয়ালটন পরিবারের। ১৭ তম অবস্থানে রয়েছেন জিম ওয়ালটন। তার সম্পদমূল্য ৭২.৬ বিলিয়ন ডলার।
জিম ওয়ালটনের পরেই রয়েছেন রব ওয়ালটন ও অ্যালাইস ওয়ালটন। তাদের সম্পদমূল্য যথাক্রমে ৭১.২ বিলিয়ন ডলার ও ৭০ বিলিয়ন ডলার।
ব্লুমবার্গের এ তালিকায় শীর্ষ ২০ জনের মধ্যে নেই চীনের কেউই। ২০২২ সালে চীনের ঝং শানশান এ তালিকায় ছিলেন ১৪ নম্বরে।