দক্ষিণ কোরিয়ায় কুকুরের মাংস খাওয়া-বেচাকেনা নিষিদ্ধ, অমান্য করলে ২২ হাজার ডলার জরিমানা
কুকুরের মাংস খাওয়া ও বিক্রি নিষিদ্ধ করে বিল পাশ করা হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে। এর মধ্যে দিয়ে দেশটিতে শতাব্দীপ্রাচীন বিতর্কিত এই চর্চা বন্ধ হতে চলেছে।
কোরিয়ার এক কক্ষের পার্লামেন্টে কুকুরের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করার বিলটি ২০৮–০ ভোটে পাশ হয়। শুধু দুইজন সদস্য অনুপস্থিত থাকায় ভোট দিতে পারেননি।
এই আইন অমান্য করে মানুষের খাওয়ার জন্য কুকুর প্রজনন ও হত্যা করা হলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা ৩ কোটি ওন (২২ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার) জরিমানা গুনতে হবে।
তবে নতুন এই আইন মেনে চলতে তিন বছরের 'গ্রেস পিরিয়ড' পাবেন এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
কোরিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বাস করা হতো, গ্রীষ্মকালের আর্দ্র আবহাওয়ায় কুকুরের মাংস খেলে শরীরের বল বাড়ে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কুকুরের মাংস খাওয়ার এই চর্চা নেই বললেই চলে। বয়স্করা ছাড়া এখন আর তেমন কেউ কুকুরের মাংস খান না।
এছাড়া প্রাণীপ্রেমীদের সমালোচনা এবং পারিবারিক পোষা প্রাণী হিসেবে পুষতে শুরু করার কারণেও এ চর্চা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
অধিকারকর্মীরা বলছেন, মাংসের জন্য কুকুরদের বৈদ্যুতিক শক বা ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু কুকুরপালক ও ব্যবসায়ীদের দাবি, কুকুর জবাই করার প্রক্রিয়াটিকে আরও মানবিক করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তারা—এবং এ প্রচেষ্টায় অগ্রগতি হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল নিজেও পশুপ্রেমী। তিনি ও তার স্ত্রী, ফার্স্ট লেডি কিম কেওন দুজনেই কুকুরের মাংস খাওয়ার ঘোর বিরোধী। ইওল ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ চর্চা বাতিলের পক্ষে আন্দোলন জোরদার হয়েছে।
সিউলভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থার চালানো জরিপে উঠে এসেছে, ৯৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী গত এক বছরে কুকুরের মাংস খাননি; আর ৯৩ শতাংশ মানুষ বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতেও তারা এই খাবার খাবেন না।
এর আগেও দক্ষিণ কোরিয়ায় কুকুরের মাংস নিষিদ্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের প্রতিবাদ ও আন্দোলনের কারণে ওই সব প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
দক্ষিণ কোরিয়ার কৃষিমন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দেশটিতে ১,১০০ খামারে ৫ লাখ ৭০ হাজার কুকুর লালন-পালন করা হয়। ১,৬০০ রেস্টুরেন্টে এই প্রাণীগুলোকে খাবার হিসেবে পরিবেশন করা হয়।
ভক্ষণ-উপযোগী কুকুর উৎপাদনকারী ও বিক্রেতাদের সংগঠন 'দ্য কোরিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব এডিবল ডগস' জানিয়েছে, কুকুরে মাংস খাওয়া ও বেচাকেনার ওপর এই নিষেধাজ্ঞার কারণে সাড়ে ৩ হাজার খামার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব খামারে ১৫ লাখ কুকুর লালন-পালন করা হচ্ছে। এছাড়া এতে ৩ হাজার রেস্টুরেন্টের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।