এক কাপ পারফেক্ট চা বানাতে হলে মেশাতে হবে লবণ; এমন পরামর্শই মার্কিন বিজ্ঞানীর!
বলা হয় চা তৈরিতে দক্ষ ব্রিটিশরা। প্রতিদিন প্রায় ১০০ মিলিয়ন কাপ চা পান করে তারা। নিজেদের চা তৈরির পদ্ধতিকে সেরার তকমা দিলেও, তিন হাজার মাইল দূরের মার্কিন এক বিজ্ঞানী এক কাপ নিখুঁত চায়ের জন্য একটি অপ্রচলিত পদ্ধতি প্রস্তাব করেছেন। তা হল চায়ের মধ্যে লবণ যোগ করা।
অধ্যাপক মিশেল ফ্রাঙ্কলের চা নিয়ে এ নতুন তথ্য যুক্তরাজ্যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মার্কিন দূতাবাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এ নিয়ে প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছে। তারা জানায়, চায়ের মধ্যে লবণ যোগ করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সরকারি নীতি নয়।
আটলান্টিকের দুই পাড়ে চা নিয়ে বিতর্ক এবারই প্রথম নয়। ১৭৭৩ সালে ঔপনিবেশিক ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনে বিক্ষোভকারীরা ব্রিটিশ করের প্রতিবাদে বন্দরে ৩০০ সিন্দুক ভর্তি চা পাতা নিক্ষেপ করে। অনেকের মতে এর মাধ্যমেই নাকি আমেরিকান বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটে।
পেনসিলভানিয়ার ব্রায়ান মওর কলেজের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ফ্রাঙ্কল বিবিসিকে বলেন, "আমি অবশ্যই কোনো কূটনৈতিক বিতর্ক তৈরি করতে চাইনি। আমার ইনবক্স ইমেইলে ভরে গেছে। সকালে ঘুম থেকে ওঠেই এত মানুষের চায়ে লবণ নিয়ে কথা বলা দেখব ভাবিনি আসলে।"
চায়ে লবণ মেশাবেন কেন?
চায়ে লবণ যোগ করার এ ধারণা নতুন নয়। অষ্টম শতাব্দীর চীনা পাণ্ডুলিপিতেও এটি উল্লেখ করা হয়েছে।
অধ্যাপক ফ্রাঙ্কল বলেন, "চায়ের লবণ মেশানোর এ যুক্তির সাথে রসায়ন জড়িয়ে আছে। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে, লবণ চায়ের স্বাদকে তিক্ত করে তোলা রিসিপ্টরের ব্লকার হিসেবে কাজ করে।"
তাই চায়ে অল্প পরিমাণে লবণ যোগ করলে এটি চায়ের পানির তিক্ততা দূর করতে সাহায্য করে।
তিনি বলেন, "এটা চিনি যোগ করার মতো নয়। আমার মনে হয় মানুষ ভয় পাচ্ছে যে তারা চায়ে চিনির বদলে লবণের স্বাদ পাবে।"
অধ্যাপক ফ্রাঙ্কল রয়্যাল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রি দ্বারা প্রকাশিত তার নতুন বই "স্টিপড: দ্য কেমিস্ট্রি অফ টি"-তে বলেন, ব্রিটিশ চা-প্রেমীরা যেন কিছু না বুঝেই তার এ গবেষণাকে বিচার না করে। তিনি তাদেরকে তার গবেষণার প্রতি আরও উদার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এক কাপ নিখুঁত চা বানানোর ক্ষেত্রে একেক জনের একেক পদ্ধতি আছে। তবে অধ্যাপক ফ্রাঙ্কল টি ব্যাগের পরিবর্তে আলগা পাতা ব্যবহার এবং চায়ের পানিকে অনবরত নাড়ানোর পরামর্শ দেন। এতে দুধ ও চা-লিকারের মিশ্রণটা আরও ভালো হয়। তিনি হালকা করে লেবুর রস মেশানোর কোথাও বলেন, এতে নাকি উপরের ফেনা দূর হয়।
তবে, ফ্রাঙ্কল মাইক্রোওয়েভে চা বানানোর বিপক্ষে। তিনি বলেন, "এটি কম স্বাস্থ্যকর এবং স্বাদটাও ততটা ভালো হয় না।"
মাইক্রোওয়েভে চা তৈরির ধারণাটি যুক্তরাজ্যে কিছুটা অপরিচিত মনে হলেও যুক্তরাষ্ট্রে এটি খুব সাধারণ।
অধ্যাপক ফ্রাঙ্কল বলেন, "আমেরিকানদের চা বানানোর কিছু বাজে অভ্যাস রয়েছে। আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিনব রেস্তোরাঁগুলোর চেয়ে আয়ারল্যান্ডের সার্ভিস স্টেশনগুলোতে ভালো চা খেয়েছি।
আমি মনে করি যে, তারা এক কাপ ভালো চা তৈরি করতে আসলে জানে না। আপনার যদি ভালো চা পান করার অভিজ্ঞতা না থাকে, তবে আপনি জানবেনও না যে আপনি কারো জন্য এক কাপ জঘন্য চা তৈরি করছেন এবং তাদের একটি দুঃখজনক অভিজ্ঞতা দিচ্ছেন।"
চা নিয়ে ব্রিটিশ-আমেরিকানদের মধ্যকার অবস্থান কী?
মার্কিন দূতাবাস অধ্যাপক ফ্রাঙ্কলের পরামর্শে কান দিচ্ছে না এবং বলেছে যে তারা মাইক্রোওয়েভ দিয়েই চা তৈরির 'সঠিক উপায়' অনুসরণ করবে। আর অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ অফিস অনড় যে তারা কেবল কেটলি ব্যবহার করেই চা তৈরি করবে।