মধ্যপ্রাচ্যে ড্রোন হামলায় ৩ মার্কিন সেনা নিহত, প্রতিশোধ নেবে যুক্তরাষ্ট্র
রোববার (২৮ জানুয়ারি) জর্ডানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় অন্তত তিনজন মার্কিন সেনা নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছেন।
যে সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণের ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি 'টাওয়ার ২২' নামে পরিচিত বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। এ ঘাঁটির অবস্থান জর্ডানের উত্তরপূর্বাঞ্চলের শেষ প্রান্তে ইরাক ও সিরিয়ার সীমান্তে।
ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এ হামলা চালিয়েছে মন্তব্য করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আক্রমণকারীদের জবাবদিহির আওতায় এবং তাদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া আনা হবে।
এ হামলা নিয়ে দেওয়া বিবৃতিতে বাইডেন বলেছেন, 'আমরা এখনও এ হামলা-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করছি। তবু আমরা জানি, সিরিয়া ও ইরাকে কার্যক্রম পরিচালনাকারী ইরান-সমর্থিত মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো এ হামলা চালিয়েছে।'
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, 'এ হামলার পেছনে যারা রয়েছে, তাদের সবাইকে আমরা সময়মতো আমাদের পছন্দমতো কায়দায় জবাবদিহির আওতায় আনব।'
বাইডেন আরও বলেন, 'যে তিনজন মার্কিন সেনা সদস্যকে হারিয়েছি, তারা সর্বোচ্চ অর্থে দেশপ্রেমিক ছিলেন। আর তাদের চূড়ান্ত আত্মত্যাগ আমাদের জাতি কখনোই ভুলবে না।'
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনও বলেছেন, ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারা মার্কিন বাহিনীর ওপর এই ক্রমাগত হামলার জন্য দায়ী। যথাযথ সময় ও জায়গায় এই হামলার জবাব দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম মধ্যপ্রাচ্যে হামলায় মার্কিন সেনাদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। এর আগেও মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন জায়গায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে, কিন্তু মার্কিন সেনা হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে জর্ডান-সিরিয়া সীমান্তের ওই মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ইন ইরাক নামের সশস্ত্র গোষ্ঠী।
নিজেদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করে এ হামলার দায় স্বীকার করে ইসলামিক রেজিসট্যান্স।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং তার জবাবে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিরামহীন হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে, সেই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দেবে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হওয়া এই হামলা।
হামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার ইরানের
জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশনের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ রবিবার জানিয়েছে, জর্ডানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলায় ইরানের কোনো ভূমিকা নেই।
জাতিসংঘের ইরানের প্রতিনিধি আইআরএনএকে বলেন, 'মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার সঙ্গে ইরানের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এ বিষয়ে তাদের কিছু করারও নেই।'
ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ইন ইরাক নামের সশস্ত্র গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, এই ঘাঁটিতে হামলার পাশাপাশি তারা আরও বেশ কিছু জায়গায় হামলা চালিয়েছে।
হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত আরও গভীর হওয়ার ঝুঁকি
হামলায় তিন মার্কিন সৈন্যের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্য সংকটের আরও গভীরে ঠেলে দিয়েছে। একইসঙ্গে এটি গাজায় দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিতের প্রচেষ্টাকে নতুন করে তাগিদ দিচ্ছে।
এখন ওয়াশিংটন ও মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা এমন কিছু বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন যা উল্লেখযোগ্যভাবে এ পরিস্থিতির পরিবর্তন আনতে পারে।