সুন্দরবনের আন্তসীমান্ত বাঘ সংরক্ষণে বাংলাদেশ-ভারতের সহযোগিতার উদ্যোগ
সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণে একসাথে কাজ করছে বাংলাদেশ ও ভারত। উভয় দেশের বাঘ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে একটি আন্তসীমান্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের কুলতলি এলাকার পূর্ব গুরুগুড়িয়া আদর্শ বিদ্যাপীঠ বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ ১২ জন শিক্ষার্থী, ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার (ডব্লিউটিআই) প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া দল (পিআরটি) এবং দক্ষিণ ২৪ বরগুনা জেলার 'বাঘ বন্ধু' সংস্থা বাংলাদেশের স্থানীয় বাঘ সংরক্ষণবাদীদের সাথে দেখা করেছে। ডব্লিউটিআইয়ের ম্যানেজার এবং হিউম্যান-ওয়াইল্ডলাইফ কনফ্লিক্ট মিটিগেশন ডিভিশনের প্রধান ড. অভিষেক ঘোষাল এ কথা জানান।
ডব্লিউটিআই, পশ্চিমবঙ্গের লোকমাতা রানী রাসমণি মিশন এবং বাংলাদেশে ওয়াইল্ডটিমের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাঘ সংরক্ষণ কৌশলের জন্য সম্মিলিত জ্ঞানকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছিল। উদ্যোগের লক্ষ্য উভয় দেশের বাঘের আবাসস্থল ও এর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রচারের লক্ষ্যে কাজ করা।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ও জার্মানির কেএফডব্লিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহায়তায় গত ৪ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট জেলার জয়মনিতে সংগঠনগুলোর সদস্যরা এক হয়।
সুন্দরবনের বাঘের সঙ্গে সহাবস্থান এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিষয়টি বোঝার জন্য শিক্ষার্থীসহ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এ মিথস্ক্রিয়া একটি যুগান্তকারী ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন ড. অভিষেক ঘোষাল।
তিনি আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে বাঘ নিয়ে আলাপ-আলোচনা থাকলেও সম্ভবত এই প্রথম দুই দেশের সংগঠনগুলো একসাথে জড়ো হয়েছে আলোচনার জন্য যা উভয় পক্ষের জন্য অনুপ্রেরণামূলক প্রমাণিত হয়েছে।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা বনাঞ্চলে প্রবেশ ও বাঘের মুখোমুখি হওয়া থেকে মানুষকে বিরত রাখতে বিভিন্ন পন্থা ও অনুশীলন নিয়ে আলোচনা করেন। তাদের নিজ নিজ অঞ্চলের উপকারে আসতে পারে এমন মূল্যবান অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
ভারতে, ধোঁয়াবিহীন রান্নার চুলা এবং গবাদি পশু সরবরাহের মতো ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হয়েছে, অন্যদিকে বাংলাদেশে তারা পানিতে উচ্চ লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এমন ধান চাষ সম্পর্কে শিখেছেন।
অশোক হালদার নামের এক অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা সম্পর্কে জানতে পেরে অবাক হন। একইভাবে সুব্রত মিস্ত্রি নামে একজন শিক্ষক জানান কীভাবে এই পরিদর্শনগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের অন্যদের কাছ থেকে শিখতে এবং সংরক্ষণের কাজটি সরাসরি প্রত্যক্ষ করতে অনুপ্রাণিত করে।
এই প্রকল্পে বাঘ হত্যা রোধ করা এবং ওই এলাকার মানুষের জীবিকা নির্বাহ সহজ করার ওপর দৃষ্টিপাত করা হয়েছে।
ঘোষাল জানান, এই প্রকল্পটি ২০১৮-১৯ সাল থেকে চলছে, এবং বাঘের উপর প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ রুখতে বাঘকে নিরাপদে জঙ্গলে ফেরানো এবং বাঘ আক্রমণকারীদের ওপর ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে শিক্ষা এবং সচেতনতা প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। গত চার বছরে প্রকল্প এলাকায় কোনো বাঘ বা মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, যা এর সাফল্যকে ইঙ্গিত করে।
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা ওয়াইল্ডটিমের অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, ভবিষ্যৎ সংরক্ষণ প্রচেষ্টায় শিশুদের সুন্দরবন সম্পর্কে শিক্ষিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সুন্দরবন টাইগার প্রজেক্টের প্রকল্প প্রধান প্রসেনজিৎ শীল সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সংস্থা এবং পশ্চিমবঙ্গ বন দফতরের সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরেন।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন