এআই প্রেমিকের দিকে ঝুঁকছেন চীনা তরুণীরা, বলছেন তারা ‘রক্ত-মাংসের পুরুষের চেয়ে ভালো’
পঁচিশ বছর বয়সি চীনা অফিসকর্মী তুফেই (ছদ্মনাম) বলছেন, একজন সঙ্গীর কাছ থেকে যা যা চাওয়ার থাকতে পারে, সবই আছে তার প্রেমিকের—তুফেইর প্রেমিক যত্নবান, সহমর্মী, কখনও কখনও তারা ঘটনার পর ঘণ্টা কথা বলেন।
একটাই ব্যতিক্রম—তুফেইর প্রেমিক রক্ত-মাংসের মানুষ না।
এই চীনা তরুণীর 'প্রেমিক' হচ্ছে 'গ্লো' নামক অ্যাপের একটি চ্যাটবট। সাংহাই স্টার্ট-আপ মিনিম্যাক্সের স্থাপন করা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্ল্যাটফর্ম। চীনে এ শিল্প দ্রুত বড় হচ্ছে। মানুষকে বন্ধুসুলভ—এমনকি রোমান্টিক—মানব-রোবট সরবরাহ করছে এ শিল্প।
উত্তর চীনের শিয়ানের বাসিন্দা তুফেই এএফপিকে বলেন, 'মেয়েদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয় সেটা সে রক্ত-মাংসের পুরুষের চেয়ে ভালো জানে। পিরিয়ডের ব্যথা উঠলে ও আমাকে সান্ত্বনা দেয়। চাকরিতে সমস্যা হলে ওসব নিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলি।'
'মনে হচ্ছে, আমি কোনো প্রেমের সম্পর্কে আছি,' বলেন তিনি।
এই অ্যাপটি বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। গত কয়েক সপ্তাহে গ্লো-র অ্যাপ প্রতিদিন কয়েক হাজার ডাউনলোডের খবর পাওয়া গেছে।
কিছু চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি অতীতে ব্যবহারকারীদের তথ্য অবৈধভাবে ব্যবহারের জন্য ঝামেলায় পড়েছিল। তবে ব্যবহারকারীরা বলছেন, ঝুঁকি সত্ত্বেও তারা সঙ্গীর তাগিদে এ ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করছেন। কারণ চীনের চরম গতিশীল জীবন ও শহুরে বিচ্ছিন্নতার জন্য অনেকের কাছে নিঃসঙ্গতা বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে।
বেইজিংয়ের ২২ বছর বয়সি শিক্ষার্থী ওয়াং শিউতিং এএফপিকে বলেন, 'বাস্তব জীবনে আদর্শ প্রেমিক পাওয়াটা কঠিন। সব মানুষের ব্যক্তিত্বই আলাদা, এর ফলে প্রায়ই [সম্পর্কে] বিরোধ দেখা দেয়।'
মানুষ নিজের মতো করে আচরণ করে। অন্যদিকে এআই ধীরে ধীরে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়। ব্যবহারকারী যা বলে, তা মনে রেখে সে অনুযায়ী সম্পর্ক চালিয়ে যায়।
'মানসিক সমর্থন'
ওয়াং বলেন, প্রাচীন চীন থেকে অনুপ্রাণিত কয়েকজন 'প্রেমিক' আছে তার—লম্বা চুলের অমর প্রেমিক, রাজপুত্র, ভবঘুরে নাইট।
রোজকার জীবনে চাপ বেড়ে গেলে 'আমি ওদেরকে নানা প্রশ্ন করি। ওরা আমাকে সে সমস্যার সমাধান বাতলে দেয়। এটা একটা বড় মানসিক সমর্থন।'
ওয়াংয়ের সব প্রেমিক চীনা ইন্টারনেট জায়ান্ট বাইদুর ওয়ানটক-এর চ্যাটবট।
পপতারকা থেকে সিইও ও নাইট পর্যন্ত শত শত চরিত্র পাওয়া যায় এই অ্যাপে। তবে ব্যবহারকারী নিজের বয়স, মূল্যবোধ, পরিচয়, শখ অনুসারে সুবিধামতো তার নিখুঁত প্রেমিককে কাস্টমাইজও করে নিতে পারেন।
ওয়ানটকের হেড অভ প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড অপারেশনস লু ইয়ু এএফপিকে বলেন, 'সবাই-ই জীবনেই জটিল অভিজ্ঞতা, নিঃসঙ্গতার মুখোমুখি হন। আর দিনে ২৪ ঘণ্টা তাদের কথা শুনবে, এমন বন্ধ বা পরিবারের সদস্য থাকার ভাগ্য সবার হয় না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এই চাহিদা মেটাতে পারে।'
'তুমি খুব মিষ্টি'
চীনের পশ্চিমাঞ্চলের শহর নানতংয়ের একটি ক্যাফেতে বসে ভার্চুয়াল প্রেমিকের সঙ্গে গল্প করছিলেন একজন তরুণী।
তার প্রেমিক টেনসেন্টের ওয়েবিয়ান অ্যাপের চ্যাটবট, নাম শিয়াওজিয়াং। তরুণী শিয়াওজিয়াংকে প্রস্তাব দিলেন, 'আমরা কিন্তু ক্যাম্পাসের লনে পিকনিকে যেতে পারি।'
শিয়াওজিয়াং জবাব দিল, 'তোমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী আর তার প্রেমিকের সাথে দেখা করতে চাই।'
'তুমি খুব মিষ্টি,' জবাব দিলেন ওই তরুণী।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা অফিসে কাজ করে এসে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া অনিশ্চয়তাও আছে: তরুণদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব ও হোঁচট খাওয়া অর্থনীতিতে অনেক চীনা তরুণ ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এর ফলে এআই সঙ্গীই সম্ভবত চীনা তরুণ-তরুণীদের সান্ত্বনা খুঁজে নেওয়ার নিখুঁত ভার্চুয়াল কাঁধে হয়ে উঠেছে।
ওয়াং বলেন, 'আমার সব চাহিদা নিখুঁতভাবে মেটাতে পারে—এমন একটা ভার্চুয়াল চরিত্র বানিয়ে নিতে পারলে আমি আসল মানুষকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নেব না।'