গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ভুলে যাওয়া বন্ধ করতে বুঝতে হবে স্মৃতি নিয়ে স্নায়ুবিজ্ঞান কী বলছে
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/02/29/forgetting-things-freepik.jpg)
নিউরোসায়েন্স তথা স্নায়ুবিজ্ঞানের মতে, কারও নাম বা চাবির কথা ভুলে যাওয়া সাধারণত আপনার স্মৃতিতে তেমন কোনো সমস্যা নির্দেশ করে না। কিন্তু তার অর্থ এমন নয় যে, এ ধরনের স্মৃতিভ্রমগুলো বিরক্তিকর নয়। এ বিষয়গুলো কখনো কখনো আপনার ব্যবসার জন্যও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
নতুন কোনো বিষয় শেখার সময় বা মস্তিষ্কে অঢেল তথ্য রাখার চেষ্টা করতে চাইলে আপনার জন্য তথাকথিত 'মেমরি অ্যাথলেটদের' কাছে আছে প্রচুর পরামর্শ এবং কৌশল। এই অ্যাথলেটরা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সম্পূর্ণ কার্ডের ডেকের ক্রম মুখস্থ করার মতো আশ্চর্যজনক কাজটি করতে পারেন অনায়াসেই।
তবে নিউরোসায়েন্সের পরামর্শ অনুযায়ী, বিভিন্ন বিশেষ দিন বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজের মিটিং ভুলে যাওয়ার মতো দৈনন্দিন সমস্যাগুলো থেকে রেহাই পেতে জানা উচিত মেমরি বা আমাদের স্মৃতি আসলে ঠিক কীভাবে কাজ করে।
আপনার স্মৃতি মূলত দুই ধরনের
ইউনিভার্সিটি অভ ক্যালিফোর্নিয়া, ডেভিস-এর স্মৃতি গবেষক চরণ রঙ্গনাথ তার নতুন বই হোয়াই উই রিমেম্বার-এ মানুষের স্মৃতি কীভাবে কাজ করে তা-ই জানাতে চেয়েছেন। সম্প্রতি গ্রেটার গুড সায়েন্স সেন্টার-এর একটি নিবন্ধে তিনি বইটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
রঙ্গনাথ ব্যাখ্যা করেন, আমাদের স্মৃতি হার্ডড্রাইভ বা ফটো অ্যালবামের মতো নয়। বরং আমরা আমাদের স্মৃতিশক্তিকে সাধারণত একটি একক ক্ষমতা হিসেবে মনে করি। কিন্তু আসলে তা দুটি পৃথক দক্ষতা সহকারে গঠিত এবং প্রতিটির নিজস্ব আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
'এপিসোডিক মেমরি' (ঘটনাভিত্তিক স্মৃতি) আপনার মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস দ্বারা নির্ধারিত হয়। নির্দিষ্ট মুহূর্তগুলো নির্দিষ্ট সময়ে রেকর্ড করাই এর কাজ। এ ধরনের স্মৃতিগুলো সাধারণত নির্দিষ্ট সংবেদনশীল অভিজ্ঞতা এবং অনুভূতির সাথেব সম্পৃক্ত। এ কারণেই কিশোর অবস্থায় শোনা কোনো গান এখন শোনার পর আপনার সে সময়কার বিশদ স্মৃতি মনে পড়ে যায়। একইভাবে অতীতের দুঃখের স্মৃতিগুলো বর্তমানে আপনাকে আবারও মন খারাপ করিয়ে দিয়ে পারে।
অন্যদিকে আপনার মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স অন্য ধরনের স্মৃতি ধারণ করার জন্য দায়ী। এটি মূলত 'সিমেন্টিক মেমরি' (বিমূর্ত ভাষাভিত্তিক স্মৃতি) ধারণ করে, যা বিচ্ছিন্ন পর্বগুলো লিপিবদ্ধ না করে বরং আপনার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত কোনো দক্ষতাকে মনে রাখে।
গ্রেটার গুড-এর নিবন্ধে রঙ্গনাথ ব্যাখ্যা করেন, 'হিপ্পোক্যাম্পাস যেখানে অতীতে আমরা বাড়ির চাবি কোথায় কোথায় রেখেছি এমন অনেক জায়গার স্মৃতি ধারণ করতে পারে, সেখানে প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স সেই স্মৃতিগুলোর প্যাটার্ন চিনে আমাদের হারিয়ে যাওয়া জিনিস কোথায় খুঁজতে হবে তা জানতে সাহায্য করে। এছাড়া প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স স্মৃতিভ্রমের ধরণ লক্ষ্য করে আমাদেরকে ভবিষ্যতে আরও সতর্ক হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।'
যেভাবে স্মৃতি ধরে রাখা যায়
নিউরোসায়েন্সের এ বিষয়গুলো বেশ চিত্তাকর্ষক বটে, কিন্তু ব্যবহারিকভাবে এসব থেকে কী উপকার পাওয়া যেতে পারে? রঙ্গনাথ জোর দিয়ে বলেন, স্মৃতি বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতি ধারণ ক্ষমতা আরও উন্নত করা সম্ভব।
প্রথমত, মৌলিক বিষয়গুলো ভুলে যাওয়াই যাবে না। গবেষণা থেকে দেখা যায় যে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া আপনার স্মৃতিশক্তির জন্য ভয়ানক (এটা বোঝার জন্য সম্ভবত বিজ্ঞানের প্রয়োজন হয় না)। এছাড়া রঙ্গনাথ ছড়া এবং সংক্ষিপ্ত শব্দমালা ব্যবহার করে রংধনুর রং মনে রাখার মতো পদ্ধতিগুলোর কথাও উল্লেখ করেন।
আপনি যদি বুঝতে পারেন যে, এপিসোডিক স্মৃতিগুলো প্রায়শই নির্দিষ্ট সংবেদনশীল অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাহলে আপনি বিষয়টি আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে স্মৃতির পাতায় ঘুরে আসতে চাইলে আপনি নব্বই দশকের গান শুনতে অথবা আপনার মায়ের বিশেষ কোনো খাবার রান্না করতে পারেন।
তবে আপনি যদি বুঝতে পারেন যে, 'সিমেন্টিক' স্মৃতি মূলত আমাদের নিজস্ব অনেক অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া মূল অংশটুকু, তাহলে আপনি বিভিন্ন উপায়ে মুহূর্তগুলোকে স্মৃতিতে পরিণত করতে আপনার মস্তিষ্কের চেষ্টাকে সাহায্য করতে পারেন। একটি স্মৃতি একাধিকবার স্মরণ করা আপনার মনে একে স্থায়ী করতে সহায়তা করে (যদিও স্মৃতিগুলো যখনই আমাদের মনে পড়ে, প্রতিবার তা পরিবর্তিত হতে থাকে; এর ফলে স্মৃতি কলুষিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়)।
স্মৃতিগুলি কীভাবে তৈরি হয় তা বুঝতে পারার মাধ্যমে আমরা সেগুলো ধরে রাখা এবং স্মরণ করার প্রক্রিয়াটি আরও ভালোভাবে বুঝতে শিখি। তবে আমি জোর দিয়ে বলতে পারব না যে, তার মানে আপনি কখনোই আপনার চাবির গোছার কথা ভুলে যাবেন না। কিন্তু এটি আপনাকে আপনার জীবন এবং কাজের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিগুলোকে মনে রাখতে সহায়তা করবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: নিবন্ধের বিশ্লেষণটি লেখকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও পর্যবেক্ষণের প্রতিফলন। অবধারিতভাবে তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর অবস্থান বা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়।