চীনের পথে সেলিব্রেটি পান্ডা ফু বাও, বিদায় জানাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করছেন ভক্তরা
২০২০ সালে জন্মের পর থেকেই ফু বাও ছিল সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। দক্ষিণ কোরিয়ার জন্ম নেওয়া এ পান্ডাটি কোনো অংশে কোনো তারকা থেকে কম নয়। ইয়ংগিন শহরের থিম পার্ক এভারল্যান্ড রিসোর্টের পান্ডা ওয়ার্ল্ডে ভক্তরা অধীর আগ্রহে তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অনুসরণ করেছেন। তার খবরাখবর জানতে উদ্গ্রীব হয়ে থাকতেন তার ভক্তরা।
তবে তারকা ফু বাও দক্ষিণ কোরিয়ার সকল ভক্তদের বিদায় জানিয়ে এপ্রিলেই তার নতুন ঠিকানা চীনের পথে রওনা দেবে।
পার্কের কর্মকর্তাদের মতে, এই মাসের শুরুতে দর্শনার্থীরা মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য তারকা ভাল্লুকটিকে এক ঝলক দেখার জন্য ৫-৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলেন। পরে পার্ক কর্তৃপক্ষ দর্শকদের চাপ সামলাতে ফু বাওকে দেখার সময় নির্ধারণ করে দেয়।
৩ মার্চ ফু বাওকে দর্শকদের দেখার শেষ দিনে, এভারল্যান্ডে তার নিবেদিত রক্ষকরা তাকে বাঁশ থেকে তৈরি একটি পান্ডা পুতুল, ফুলের তোড়া এবং হার্ট আকৃতির রুটির টুকরো সহ নানান বিদায়ী উপহার দেয়।
২০২০ সালের জুলাই মাসে 'পান্ডা কূটনীতি' কর্মসূচির অংশ হিসেবে 'আই বাও' ও 'লে বাও'-এর ঘরে এর জন্ম হয় ফু বাওয়ের। ফু বাও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় জন্মানো পান্ডা।
ফু বাওয়ের জন্মের পর, এভারল্যান্ডের সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলগুলো নিয়মিতভাবে তার ভিডিও প্রকাশ করত। ইউটিউবে ১.২ মিলিয়নেরও বেশি সাবস্ক্রাইবার আছে তার।
ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, চ্যানেলটির ভিউ ৫০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। ইউটিউবে আট মাস আগে ফু বাওয়ের জন্ম থেকে শৈশব পর্যন্ত যাত্রা নিয়ে দুই ঘণ্টার একটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে, যা ১৬ লাখ বার দেখা হয়েছে। চ্যানেলের সাম্প্রতিক ভিডিওগুলোতে প্রিয় পান্ডার স্ব-ঘোষিত 'অনলাইন আন্টি' সহ দর্শকদের হৃদয়গ্রাহী বার্তায় ভরা।
ইউটিউবে একজন মন্তব্য এরকম, 'ফু বাও, তুমি এমন এক রত্ন যে কিনা কঠিন কোভিড মহামারির সময় আমাদের কাছে অলৌকিক ভাবে এসেছিলে।'
আরেকজন লিখেছেন, 'তোমার আন্টি তোমাকে চিনতে পেরে খুব খুশি হয়েছে আর তুমি আমাকে খুব আনন্দ দিয়েছ। তুমি খুব বুদ্ধিমান, তাই আমি নিশ্চিত যে তুমি নতুন পরিবেশে অনেক ভালো থাকবে!'
অন্য একজন মন্তব্য করেছেন যে তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না যে এত দ্রুত সময় চলে গিয়েছে। তিনি বলেন, 'আমাদের ফু বাওকে যেতে দিতে হবে। তার বিদায়ে আমি খুব দুঃখিত। আমি আমাদের ফুকে সমর্থন করি এবং তাকে ভালোবাসি। ফু, তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত প্রচুর হাসি এবং আনন্দ নিয়ে এসেছে। ধন্যবাদ।'
ফু বাও-এর ব্যাপক জনপ্রিয়তার কল্যাণে তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো তারকা বনে গেছেন।
তার দাদা হিসাবে পরিচয় পাওয়া, কাং চুল-উন ফু বাওয়ের জন্য তার বিদায়ী বার্তা ভাগ করে নিয়েছেন। তার মতে, চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকাকালীন কোভিড মহামারির সময় শেয়ার করা সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিওগুলো থেকে ফু বাওয়ের প্রতি কোরিয়ান জনগণের গভীর ভালবাসা উদ্ভূত হয়েছিল।
ইউটিউবে পোস্ট করা এক ভিডিওতে ক্যাং বলেন, 'করোনাভাইরাসের কঠিন সময় পার করা একটি সমাজে ফু বাও নানাভাবে সাহায্য করেছে এবং সবার মাঝে আনন্দ বিলিয়ে দিয়েছে।'
চলতি মাসের শুরুর দিকে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, লোকজন প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো তার খবরাখবর নিত, তাই তার মনে হতো তিনি সবার সঙ্গে মিলে ফু পাওকে বড় করছেন।
এভারল্যান্ড কর্তৃপক্ষ এক ঘোষণায় জানিয়েছে, ফু বাওকে এপ্রিলের প্রথম দিকে সিচুয়ান প্রদেশের জায়ান্ট পান্ডার জন্য চীন সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হবে।
কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, বিদেশে পাঠানোর আগে নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে তাকে এক মাসের জন্য এভারল্যান্ড পান্ডা ওয়ার্ল্ডে আলাদা জায়গায় রাখা হবে।
এভারল্যান্ডের মূল কোম্পানি স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি এবং চায়না ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী, পরিপক্ব পান্ডাদের চার বছর বয়স হওয়ার আগেই চীনে ফেরত পাঠাতে হবে।
আর ফু বাও চীনের উদ্দেশ্যে রওনা হলে এভারল্যান্ডে মাত্র চারটি দৈত্যাকার পান্ডা অবশিষ্ট থাকবে। তারা হলো–ফু বাওয়ের মা আই বাও, বাবা লে বাও এবং তাদের যমজ সন্তান রুই বাও এবং হুই বাও, যাদের জন্ম গত জুলাইয়ে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন