অল্প সেদ্ধ বেকন খেয়ে মস্তিষ্কে জমা হলো ফিতাকৃমির লার্ভা!
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/03/15/tapeworm_in_brain.jpg)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন ব্যক্তি ঘন ঘন মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগতে থাকলে ডাক্তারি পরীক্ষায় তার মস্তিষ্কে ফিতাকৃমির লার্ভা পাওয়া গেছে। চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, এর সাথে অল্প সেদ্ধ বেকন (শুকরের পেট বা পিঠের কম চর্বিযুক্ত অংশের বিভিন্ন টুকরো দিয়ে তৈরি করা লবণজাত মাংস) খাওয়ার সম্পর্ক আছে।
৫২ বছর বয়সী ঐ ব্যক্তি মাইগ্রেনের অবস্থা আরো খারাপ হওয়ার জন্য এবং তার নিয়মিত মাইগ্রেনের ওষুধ কাজ না করার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছিলেন।
তার মস্তিষ্ক স্ক্যান করার পর সেখানে ফিতাকৃমির লার্ভার সিস্ট পাওয়া গেছে যা থেকে সিস্টিসারকোসিস (ফিতাকৃমির লার্ভার সংক্রমণে হওয়া রোগ) হয়।
চিকিৎসকরা এর জন্য ঠিক করে হাত না ধোয়াকেও দায়ী করেছেন। তারা ধারণা করছেন, অল্প সেদ্ধ শুকরের মাংস খাওয়ার মাধ্যমে ঐ ব্যক্তি নিজেকে সংক্রমিত করেছেন।
সিস্টিসারকোসিস হল পরজীবী ফিতাকৃমির লার্ভা থেকে হওয়া এক ধরনের সংক্রমণ যা শুকরের ফিতাকৃমি নামেও পরিচিত। এর থেকে মস্তিষ্কে সিস্ট (সিস্টিসারসি) হতে পারে।
কারো শরীরে ফিতাকৃমি থাকলে সেখান থেকে অটোইনফেকশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরে ফিতাকৃমির ডিম ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ডিম শরীর থেকে বর্জ্য হিসেবে বেরিয়ে যেতে পারে এবং একই বাড়িতে অন্যদের সংক্রমিত করতে পারে।
অল্প সেদ্ধ করা শুকরের মাংস থেকে সরাসরি একজন মানুষের সিস্টিসারকোসিস না ঘটলেও আমেরিকান জার্নাল অফ কেস রিপোর্টে এই ঘটনা নথিভুক্ত করে চিকিৎসকরা লিখেছেন, 'অনুমান করা যায়, ঠিক করে হাত না ধোয়ার জন্য অটোইনফেকশনের মাধ্যমে লোকটির শরীরে সিস্টিসারকোসিসের সংক্রমণ ঘটে।'
তার অল্প সেদ্ধ শুকরের মাংস বা বেকন খাওয়ার অভ্যাস দেখে চিকিৎসকরা ধারণা করেছিলেন, তার খাবারের অভ্যাস থেকেই ফিতাকৃমির সংক্রমণ ঘটেছে।
তাকে চিকিৎসকরা ফিতাকৃমি দূর করতে যে ওষুধ দিয়েছিল তা ঠিকমতো কাজ করায় তিনি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুসারে, ফিতাকৃমির লার্ভা পেশি এবং মস্তিষ্কের টিস্যুতে প্রবেশ করে সিস্ট তৈরি করে। মস্তিষ্কে সিস্ট পাওয়া গেলে সেটিকে নিউরোসিস্টিসারকোসিস বলা হয়।
সিডিসি জানিয়েছে, কোন ব্যক্তি 'টি.সোলিয়াম'-এর ডিম গিলে ফেললে তার সিস্টিসারকোসিস হয়। এই ডিমগুলো খাদ্য, পানীয় এবং মলের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। হাত অপরিষ্কার থাকার জন্য অনেকের শরীরে এই সংক্রমণ ঘটে।
সিডিসি আরো জানিয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তি পরিবারের অন্যান্যদেরও সংক্রমিত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম সেদ্ধ করা শুকরের মাংস থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বা যুক্তরাজ্যে ফিতাকৃমির সংক্রমণ সাধারণত কম হয় কারণ সেখানে অনেক কঠোরভাবেই শূকরের মাংস প্রক্রিয়াজাত করা হয়। সংক্রমণের হার বেশি দেখা যায় লাতিন আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকার কিছু অংশে এবং সেখানকার গ্রামীণ অঞ্চলে। কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, ফিতাকৃমির বাহক শূকরের অবাধ বিচরণ, অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং অপরিষ্কার পরিবেশ।
ঠিকমতো হাত না ধোয়ার কারণে বা দূষিত খাবার ও পানি পান করার জন্য মানুষ এই ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে।