বন্যপ্রাণী খেয়েই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করতে চায় দক্ষিণ আফ্রিকা!
দক্ষিণ আফ্রিকা তার বন্যপ্রাণী রক্ষা এবং বৃদ্ধির জন্য একটি উদ্ভব পদ্ধতির প্রবর্তন করেছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করতে তারা মানুষকে আরও বেশি করে বন্য মাংস ভক্ষণ করার উৎসাহ দিচ্ছে।
ধারণাটি কারও কারও কাছে শুনতে উদ্ভট লাগলেও, দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশ বিভাগ জানায় পদ্ধতিটি বেশ সুবিধাজনক। এর মধ্যে আছে কম উর্বর জমিতে বসবাসকারী হরিণের মূল্য বাড়ানো, আবাসস্থল সংরক্ষণকে অনুপ্রাণিত করা এবং দেশের দরিদ্রতম গ্রামীণ সম্প্রদায়ের জন্য সম্ভাব্যভাবে আয়ের ব্যবস্থা করা।
এছাড়া ধারণা করা হয় এটি বন্যপ্রাণী খাতে কৃষ্ণাঙ্গদের সম্পৃক্ততা বা মালিকানা বাড়ানোর একটি সুযোগ তৈরি করে দেবে। তিন দশক আগে বর্ণবাদের অবসান সত্ত্বেও, সরকারি অনুমান অনুযায়ী বর্তমানে এ ক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত দক্ষিণ আফ্রিকানদের মালিকানা মাত্র ৩.৫%।
দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদন হলো বারবিকিউ পার্টি, যেটা ব্রাইস বা শিসা ন্যামাস নামে পরিচিত। তাই বারবিকিউতে বন্যপ্রানীর মাংস গরুর মাংসের তুলনায় পরিবেশ বান্ধব বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। আর এতে মিথেন উৎপাদনও কম হয় এবং প্রাকৃতিক কার্বন সিংক হিসেবে কাজ করে।
বন, মৎস্য ও পরিবেশ অধিদপ্তরের (ডিএফএফই) জীববৈচিত্র্য অর্থনীতি ও টেকসই ব্যবহারের প্রধান পরিচালক খোরোম্ম্বি মাতিবে বলেন, 'বন্যপ্রাণীর মাংসের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক, বন্য মাংসে কম কোলেস্টেরল থাকে।'
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতি বছর হাজার হাজার হরিণ এবং জেব্রার মতো অন্যান্য সমতল ভূমির প্রাণিদের তাদের বাস্তুতন্ত্রের জন্য হুমকির কারণে হত্যা করা হয়। যাইহোক, এই মাংসের বেশিরভাগই মানুষের খাওয়ার জন্য অনুপযুক্ত বলে মনে করা হয় কারণ এগুলো সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত হয় না।
মাতিবের তত্ত্বাবধায়ক, পরিবেশমন্ত্রী বারবারা ক্রিসি সম্প্রতি জোহানেসবার্গের কাছে একটি সম্মেলনে বন্য মাংসের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি উচ্চাভিলাষী জীববৈচিত্র্য অর্থনীতি কৌশল চালু করেছেন। এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে খাদ্য সুরক্ষা এবং ট্রেসেবিলিটির জন্য শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করা, কসাইখানার মতো অবকাঠামো বিকাশ করা এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মাংসের বিক্রয় ও ব্যবহার বাড়ানো।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৯১ সাল থেকে কৃষকদের তাদের জমিতে পশু চাষের অনুমতি দেওয়ার ফলে একটি সমৃদ্ধ বন্যপ্রাণী শিল্প গড়ে উঠেছে। এই পদ্ধতিটি শিকার, ইকোট্যুরিজম এবং বন্যপ্রাণী নিলামকে সমর্থন করে। দক্ষিণ আফ্রিকায় এখন ২ কোটিরও বেশি বড় বন্য প্রাণী রয়েছে, যেখানে ১৯৬৪ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ লাখ।
বন, মৎস্য ও পরিবেশ বিভাগ (ডিএফএফই) দক্ষিণ আফ্রিকার বন্য মাংস শিল্পকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত করার লক্ষ্য নিয়েছে।
ডিএফএফই ২০৩৬ সালের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বন্য মাংস শিল্পকে ২৭.৬ বিলিয়ন র্যান্ডে (১.৫ বিলিয়ন ডলার) বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে, যা ২০২০ সালের ৪.৬ বিলিয়ন র্যান্ড থেকে বেশি। এটি এখনও দেশের ৪০ বিলিয়ন র্যান্ড গরুর মাংস শিল্পের চেয়ে ছোট।
একটি নথিতে, বিভাগটি উল্লেখ করেছে যে ২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা মাত্র ১২ মিলিয়ন ডলারের বন্য মাংস রফতানি করেছে, যেখানে নিউজিল্যান্ড বিদেশে হরিণের মাংস রফতানি করেছে ১২২ মিলিয়ন ডলার।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন