‘চিনিমুক্ত’ পানীয়ে চিনির উপস্থিতি; দোকান থেকে ২৩৩ কেস ক্যান সরালো পেপসি
সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া 'জিরো সুগার' কোমল পানীয়ের একটির কিছু অংশ দোকান থেকে ফিরিয়ে নিচ্ছে পেপসিকো। কারণ অভ্যন্তরীণ তদন্তে এটি জানতে পেরেছে, 'চিনিমুক্ত' দাবি করা হলেও আদতে এটিতে চিনির অস্তিত্ব রয়েছে।
মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের [এফডিএ] তথ্যমতে, শোয়াপস জিরো সুগার জিঞ্জার এল নামক চিনি ও ক্যাফেইনমুক্ত ওই পানীয়তে 'সম্পূর্ণরূপে চিনি' পাওয়া গিয়েছে।
এ মাসের শুরুতে এক প্রতিবেদনে এফডিএ জানিয়েছে, মেরিল্যান্ড, পেনসিলভানিয়া ও ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় পাঠানো ২২১ মিলিলিটার ক্যানের ২৩৩টি কেস কোমল পানীয়ে চিনির অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে।
পেপসিকো গত ৯ মার্চ থেকে স্বেচ্ছায় দোকান থেকে এসব ক্যান ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করে বলে এফডিএ'র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ডেইলিমেইল ডটকমকে পেপসিকো জানিয়েছে, চিনিযুক্ত ক্যানের সবগুলো দোকান থেকে সরিয়ে নিয়েছে এটি।
যারা ইতোমধ্যে এটি কিনেছেন, তারা যেন তা পান না করেন, সে পরামর্শ দিয়েছে এটি। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা থাকলে এ পানীয় একেবারেই না খেতে বলেছে পেপসি।
তবে এবিসি নিউজ নিশ্চিত করেছে, ওই ক্যানগুলো ইতোমধ্যে দোকান থেকে সরিয়ে নিয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এ বহুজাতিক কোমল পানীয় ব্র্যান্ডটি।
শোয়াপস জিরো সুগার জিঞ্জার এলের ক্যানের গায়ে মোট চিনি ও যুক্ত করা চিনির পরিমাণ শূন্য লেখা থাকে।
বিশ্বজুড়ে ভোক্তারা আগের তুলনায় বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে ওঠায় চিনিমুক্ত ও অল্প ক্যালরির কোমল পানীয় বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এ ধরনের পানীয়ের বিক্রি প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে সম্প্রতি 'চিনিকাণ্ডে' তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছে আরেক বৈশ্বিক বহুজাতিক খাদ্যপণ্য প্রতিষ্ঠান নেসলে। কোম্পানিটি স্থানভেদে শিশুখাদ্যে বৈষম্যমূলকভাবে বাড়তি চিনি মেশাচ্ছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের একটি অনুসন্ধানী সংগঠন পাবলিক আই এবং ইন্টারন্যাশনাল বেবি ফুড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (আইবিএফএএন)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন উঠে এসেছে, নেসলে ইউরোপের দেশগুলোর জন্য যে শিশুখাদ্য তৈরি ও বাজারজাত করছে সেখানে কোনো চিনি মেশাচ্ছে না।
কিন্তু কোম্পানিটি ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মতো এশিয়ার নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে যে শিশুখাদ্য সরবরাহ করছে, সেখানে চিনি ও মধু মেশানো হচ্ছে। এ ৩টি দেশের মধ্যে আবার বাংলাদেশে এর পরিমাণ বেশি।
শিশুদের মুটিয়ে যাওয়া ও অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণ এসব খাদ্য উপাদান, এবং এটি আন্তর্জাতিক গাইডলাইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
ইতোমধ্যে ভারত নেসলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ খবরে দেশটির পুঁজিবাজারে নেসলের শেয়ারের দাম ২ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।
নেসলের শিশুখাদ্যে চিনি মেশানোর বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে অনুসন্ধান করবে বলে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএএর চেয়ারম্যান জাকারিয়া বৃহস্পতিবার [১৮ এপ্রিল] জানিয়েছেন।
'বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান করে যদি দেখা যায় শিশুদের শরীরে সত্যিই কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে, তাহলে আমরা তাদের [নেসলে বাংলাদেশ] বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব,' বলেন তিনি।
নেসলের শিশুখাদ্যে উচ্চমাত্রায় চিনি থাকার এ কেলেঙ্কারির মাঝে কোম্পানিটির শেয়ারধারীরা স্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্যের সংখ্যা বাড়াতে এটিকে আহ্বান করেছে।
বৃহস্পতিবার কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় বিনিয়োগকারী ও শেয়ারধারীদের এ বিষয়ক একটি প্রস্তাবের ওপর ভোট দেওয়ার কথা রয়েছে।
তবে বাংলাদেশে উৎপাদিত নেসলের পণ্যগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড এবং স্থানীয় স্পেসিফিকেশন পুরোপুরি ও কঠোরভাবে মেনে চলছে বলে দাবি করেছে নেসলের বাংলাদেশ ইউনিট।
নেসলে বাংলাদেশের লিগ্যাল, আরএসএ অ্যান্ড কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর দেবব্রত রায় চৌধুরী বৃহস্পতিবার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'মানদণ্ড অনুসরণ করা নেসলে বাংলাদেশের একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য এবং এ বিষয়ে আমরা কখনই আপস করব না।'
শিশুর জীবনের প্রথম বছর শিশু যেন চিনিযুক্ত মিষ্টি পানীয় ও বাড়তি চিনিসমৃদ্ধ খাবার না খায় তার সুপারিশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
সংস্থাটির আরও পরামর্শ হলো, সব ধরনের শিশুখাদ্যে বাড়তি চিনি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং চিনি গ্রহণকে খাবারের মাধ্যমে মোট গৃহীত শক্তির ১৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।