চিনি কেলেঙ্কারির মাঝে নেসলেকে আরও স্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্য বিক্রির আহ্বান শেয়ারধারীদের
নেসলের শিশুখাদ্যে উচ্চমাত্রায় চিনি থাকার অনুসন্ধানী খবর প্রকাশের মাঝে কোম্পানিটির শেয়ারধারীরা স্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্যের সংখ্যা বাড়াতে এটিকে আহ্বান করেছে।
এ বিষয়ক একটি প্রস্তাবনা বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) কোম্পানির সাধারণ সভায় ভোটাভুটির জন্য উত্থাপন করা হবে।
লিগ্যাল অ্যান্ড জেনারেল ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টসহ নেসলের আরও অনেক বিনিয়োগকারী এ প্রস্তাবনাকে সমর্থন জানিয়েছে। সুইজারল্যান্ডে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভায় এ ভোটের আয়োজন করা হচ্ছে।
এ প্রস্তাবনাটি সমন্বয় করছে শেয়ারঅ্যাকশন নামক একটি এনজিও। এটির প্রধান নির্বাহী ক্যাথরিন হাওয়ার্থ জানিয়েছেন, তুলনামূলক স্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্যের বিক্রি বাড়াতে নেসলে বারবার কোনো পরিকল্পনা জানাতে ব্যর্থ হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা বাধ্য হয়ে এ প্রস্তাব সামনে এনেছেন।
গত বছর নেসলে ২০৩০ সালের মধ্যে আরও বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ পণ্য বিক্রি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর লক্ষ্য ঠিক করেছিল। কিন্তু শেয়ারধারীরা বলছে, এ লক্ষ্য যথেষ্ট উচ্চাকাঙ্ক্ষী নয়।
বিনিয়োগকারীদের প্রস্তাবনায় নেসলেকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে বিশ্ববাজারে এটি অস্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্যের বিক্রি বিপুলহারে কমাতে পারে।
নিজেদের ওয়েবসাইটে নেসলে জানিয়েছে, 'আমাদের পণ্যের ব্র্যান্ড যেন মানুষকে আরও স্বাস্থ্যকর জীবন দিতে পারে, তা নিশ্চিত করতে আমরা আমাদের প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।'
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাথরিন হাওয়ার্থ বলেছেন, এ দাবি সত্ত্বেও নেসলের বৈশ্বিক বিক্রির তিন-চতুর্থাংশ মূলত অস্বাস্থ্যকর পণ্য থেকে আসে। এসব খাদ্যপণ্যে উচ্চমাত্রার লবণ, চিনি ও স্নেহজাতীয় উপাদান থাকে।
নেসলের বিনিয়োগকারীরা তাদের আহ্বান এমন সময়ে উত্থাপন করলেন যখন কোম্পানিটির শিশুখাদ্য নিয়ে নতুন এক স্ক্যান্ডাল প্রকাশ্যে এসেছে।
সুইজারল্যান্ডের একটি অনুসন্ধানী সংগঠন পাবলিক আই এবং ইন্টারন্যাশনাল বেবি ফুড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (আইবিএফএএন)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন উঠে এসেছে, নেসলে ইউরোপের দেশগুলোর জন্য যে শিশুখাদ্য তৈরি ও বাজারজাত করছে সেখানে কোনো চিনি মেশাচ্ছে না।
কিন্তু কোম্পানিটি ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মতো এশিয়ার নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে যে শিশুখাদ্য সরবরাহ করছে, সেখানে চিনি ও মধু মেশানো হচ্ছে। এ ৩টি দেশের মধ্যে আবার বাংলাদেশে এর পরিমাণ বেশি।
শিশুদের মুটিয়ে যাওয়া ও অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণ এসব খাদ্য উপাদান, এবং এটি আন্তর্জাতিক গাইডলাইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
বাংলাদেশে সেরেলাকে প্রতি ১০০ গ্রামে চিনি রয়েছে ৩.৩ গ্রাম, ভারত ও পাকিস্তানে এর পরিমাণ ২.৭ গ্রাম করে। চিনির কথা প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকলেও এটির কারণে শিশুস্বাস্থ্যের যে সব ঝুঁকি তৈরি হতে পারে সেগুলো ঘোষণা করা হয়নি।
এদিকে ইতোমধ্যে ভারত নেসলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ খবরে দেশটির পুঁজিবাজারে নেসলের শেয়ারের দাম ২ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।
বৈশ্বিক শিশুখাদ্য বাজারের ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে নেসলে। এর পরিমাণ প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলার। ইউরোমনিটর-এর তথ্য অনুযায়ী, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ২০২২ সালে নেসলের শিশুখাদ্যের ব্র্যান্ডগুলো আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছে।
অনুসন্ধানকারীরা আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায় নেসলের প্রধান বাজারগুলোতে বিক্রি করা ১১৫ ধরনের খাদ্যপণ্যের ওপর বিশ্লেষণ করে দেখেছে, সেগুলোর অন্তত ৯৪ শতাংশে বাড়তি চিনি রয়েছে।
নিজেদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শেয়ারঅ্যাকশন সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, নেসলের বর্তমান ব্যবসায়িক মডেল অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। 'চলমান এ ব্যবসায়িক মডেল পরিবর্তনে ব্যর্থতায় ক্ষতির শিকার হচ্ছে মানুষ,' উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটি।
শিশুর জীবনের প্রথম বছর শিশু যেন চিনিযুক্ত মিষ্টি পানীয় ও বাড়তি চিনিসমৃদ্ধ খাবার না খায় তার সুপারিশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
সংস্থাটির আরও পরামর্শ হলো, সব ধরনের শিশুখাদ্যে বাড়তি চিনি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং চিনি গ্রহণকে খাবারের মাধ্যমে মোট গৃহীত শক্তির ১৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।