নিজের গবেষণার ওপরে ভিত্তি করে উদ্ভাবিত চিকিৎসাপদ্ধতিতে ক্যানসারমুক্ত হলেন প্রখ্যাত চিকিৎসক
বিশ্বের প্রথম গ্লায়োব্লাস্টোমার (এক ধরনের মস্তিষ্কের ক্যানসার) পরীক্ষামূলক চিকিৎসা নিয়ে এক বছর ধরে ক্যানসারমুক্ত আছেন অস্ট্রেলিয়ান চিকিৎসক রিচার্ড স্কলিয়ার। আর এই চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবনও করা হয়েছে খোদ স্কলিয়ারের গবেষণার ওপর ভিত্তি করেই।
মেলানোমার (এক ধরনের ত্বকের ক্যানসার) ওপর করা নিজের যুগান্তকারী গবেষণার ওপর ভিত্তি করেই এই প্রখ্যাত চিকিৎসক মস্তিষ্কের ক্যানসারের থেরাপি নিয়েছেন।
অধ্যাপক স্কলিয়ার যে মারাত্মক ও জটিল ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাতে রোগী এক বছরও বাঁচে না।
তবে মঙ্গলবার এই ৫৭ বছর বয়সি চিকিৎসক জানান, সর্বশেষ এমআরআই স্ক্যানে আবারও দেখা গেছে যে টিউমারটি ফিরে আসেনি।
বিবিসিকে তিনি বলেন, 'সত্যি বলতে কী, আগের যেকোনো স্ক্যানের চেয়ে এবার আমি বেশি নার্ভাস ছিলাম। [এই ফলাফলে] আমি ভীষণ রোমাঞ্চিত এবং খুশি…এরচেয়ে বেশি খুশি হওয়া সম্ভব নয়।'
অধ্যাপক স্কলিয়ার অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসা ক্ষেত্রে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের একজন। চলতি বছর তিনি মেলানোমা নিয়ে যুগান্তকারী গবেষণার জন্য সহকর্মী ও বন্ধু জর্জিনা লংয়ের সঙ্গে 'অস্ট্রেলিয়ান অভ দ্য ইয়ার' ঘোষিত হয়েছেন।
স্কলিয়ার ও লং মেলানোমা ইনস্টিটিউট অস্ট্রেলিয়ার সহপরিচালক। গত এক দশক ধরে তারা ইমিউনোথেরাপি নিয়ে গবেষণা করছেন। এ পদ্ধতিতে শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) ব্যবহার করে ক্যানসার কোষকে আক্রমণ করা হয়। বিশ্বের নানা প্রান্তে ক্যানসারের শেষ ধাপে থাকা রোগীদের মধ্যে পদ্ধতিটি ব্যবহার করে দারুণ ফল পাওয়া গেছে। আক্রান্তদের অর্ধেকই অনেকটা ক্যানসারমুক্ত। আগে এ হার ছিল ১০ শতাংশের কম।
অধ্যাপক স্কলিয়ারের মস্তিষ্কের ক্যানসার সারানোর জন্য অধ্যাপক লংসহ চিকিৎসকদের একটি দল এ পদ্ধতিই ব্যবহার করছেন।
অধ্যাপক লং ও তার দল দেখেছে, কয়েকটি ওষুধের একসঙ্গে মিশিয়ে ইমিউনোথেরাপি দেওয়া হলে—এবং টিউমার অপসারণের আগে কাজটি করা হলে—তা বেশি ভালো কাজ করে।
এর মাধ্যমে গত বছর মস্তিষ্কের ক্যানসারে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এরকম সংমিশ্রিত ওষুধের মাধ্যমে টিউমার অপসারণের আগে ইমিউনোথেরাপি পান অধ্যাপক স্কলিয়ার।
এছাড়া স্কলিয়ারই প্রথম রোগী, যাকে টিউমারের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিশেষ ধরনের টিকা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ওষুধের ক্যানসার শনাক্ত করার ক্ষমতা বেড়েছে।
তাদের চিকিৎসার ফল অনেককেই আশাবাদী করে তুলেছে। আশা করা হচ্ছে, এ দুই চিকিৎসক হয়তো মস্তিষ্কের ক্যানসারের জন্য কার্যকর চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কার করতে পারবেন। উল্লেখ্য, প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩ লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়।