মেনসা: ১৬২ স্কোর নিয়ে শীর্ষ মেধাবীদের তালিকায় লন্ডনের ১১ বছরের স্কুলছাত্র
এবার দক্ষিণ লন্ডনের ১১ বছর বয়সী এক শিশু মেনসার সদস্যপদ লাভ করেছে। খবর বিবিসির
সাটনের রবিন হুড জুনিয়র স্কুলে পড়া ধ্রুব গত এপ্রিলে ১৬২ নম্বর পেয়ে উচ্চ বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মানুষদের এই সংগঠনের সদস্য হয়।
তার বাবা প্রবীণ কুমার বলেন, 'সন্তানকে নিয়ে আমরা গর্বিত। ওর বাবা হতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।'
ধ্রুবের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এলিজাবেথ ব্রোয়ার্স বলেন, 'তার এই অর্জনে আমরা খুবই আনন্দিত। আর দশটা শিশুর মতোই সেও একজন সর্বাঙ্গীণ ভালো মানুষ।'
মেনসা হলো বুদ্ধিবৃত্তি চর্চার একটি সংগঠন। তারা মানুষের বুদ্ধিমত্তা মূল্যায়ন বা পরিমাপ করার জন্য অনুমোদিত একটি বুদ্ধ্যাংকের পরীক্ষায় নেয়। এই পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করা ২% মানুষকে নিজেদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে সংস্থাটি। এই সংগঠনটির সদস্যদের বলা হয় মেনসান।
কেউ মেনসান হতে চাইলে তাকে নির্দিষ্ট বুদ্ধ্যাংকের পরীক্ষায় মানদণ্ডের ১০০ নম্বরের মধ্যে ৯৮ শতাংশ বা তারও বেশি স্কোর অর্জন করতে হবে। অর্থাৎ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৯৮ শতাংশের সমান বা তারও বেশি নম্বর পেতে হবে।
ডিসেম্বরে ১১ বছরে পা দেওয়া ধ্রুব চেলসির বড় ভক্ত। খুব ছোটবেলাতেই জানা যায়, সে একজন বিশেষ শিক্ষাগত চাহিদাসম্পন্ন শিশু।
জমিন থেকে আসমান পার্থক্য
২১ বছর আগে ভারত থেকে লন্ডনে আসা তার বাবা বলেন, 'স্কুলের প্রথম দুই বছর ক্লাসে তার রেজাল্ট শেষের দিকে ছিল।'
তিনি বলেন, 'আমি ভেতরে ভেতরে গুমরে মরছিলাম।আমি শুধু চাইতাম ও অন্য স্বাভাবিক শিশুদের মতো হোক এবং সাধারণ জীবন-যাপন করতে পারুক। শিক্ষকরা শুধু বারবার বলতেন ও কিছুই শিখতে পারছে না।'
তিনি আরও বলেন, 'এখন অবস্থা পুরোপুরি পাল্টে গেছে। যেন একেবারে জমিন থেকে আসমান সমান পার্থক্য।'
ধ্রুবের প্রধান শিক্ষক বলেন, রবিন হুড স্কুলে বর্তমানে ৩৬০টি শিশু রয়েছে।
তিনি বলেন, 'ধ্রুব একজন অলরাউন্ডার। সে খুবই চমৎকার ও প্রতিভাবান একটি ছেলে।' বর্তমানে সে অনেক আনন্দে আছে, এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমাদের কাছে একটি শিশুর বুদ্ধিমত্তার চেয়েও শিশুটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।'
মিসেস ব্রোয়ার্স আরও বলেন, 'আমরা তার জন্য খুব আনন্দিত। তবে আমাদের সব শিশুই কোনো না কোনোভাবে অসাধারণ।'
মেনসার এক মুখপাত্র বলেন, 'ধ্রুব যে স্কোর অর্জন করেছে তা খুব ভাল। এতে প্রমাণিত হয় যে তার মধ্যে দুর্দান্ত সম্ভাবনা রয়েছে।'
মেনসার সদস্য হওয়া নিয়ে ধ্রুব'র অনুভূতি কী?-এ প্রশ্নের জবাবে তার বাবা বলেন, 'সে এই ফলাফলে খুশি, কিন্তু এ নিয়ে বেশি কথা বলতে চায় না।'
মেনসা কী?
১৯৪৬ সালে মেনসার ধারণা প্রথম উৎপত্তি হয়। অ্যাটর্নি রোল্যান্ড বেরিল ও বিজ্ঞানী ল্যান্সলট ওয়ার গড়ে তোলেন সংগঠনটি। তারা নিজেদের 'সর্বোচ্চ বুদ্ধ্যঙ্ক-সম্পন্ন প্রতিভাবানদের সংগঠন' হিসেবে দাবি করে।
লাতিন 'মেনসা' শব্দের অর্থ 'টেবিল'। মেনসার আদর্শ হলো জাতি, ধর্ম, বর্ণ, পেশা, বয়স, রাজনীতি, পড়াশোনা, জাতীয় পরিচয়, এমনকি সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সবাই সমান। এই মতাদর্শকে সামনে রেখেই মেনসা তার সদস্যদের জন্য নিয়মিত গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে থাকে।
সংস্থাটি জানায়, এটি সদস্যদের সামাজিকীকরণ, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্প্রসারণ এবং আকর্ষণীয় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার একটি প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। এটি সমমনা সদস্যদের সামাজিকতার কেন্দ্র। যেখানে প্রত্যেক সদস্য তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা অব্যাহত রাখতে নানা আকর্ষণীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকেন।
মেনসা প্রাথমিক অবস্থায় জাতীয় দল ও পরে বৃহত্তর পরিসরে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে গড়ে ওঠে। তখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও জার্মানিতেও এর কার্যক্রম শুরু হয়।
বর্তমানে যুক্তরাজ্য ও আইরিশ প্রজাতন্ত্রের ১৮ হাজারসহ সারা বিশ্বে সংস্থাটির ১ লাখ ৪০ হাজারের মতো সদস্য রয়েছে।