নোবেলজয়ী কানাডিয়ান লেখিকা অ্যালিস মানরো আর নেই
সাহিত্যে নোবেলজয়ী কানাডিয়ান লেখিকা অ্যালিস মানরো ৯২ বছর বয়সে মারা গেছেন। স্থানীয় সময় সোমবার রাতে অন্টারিওর পোর্ট হোপে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান বলে তার পরিবার ও প্রকাশক নিশ্চিত করেছেন। খবর বিবিসির
মানরো ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ছোট গল্প লিখেছেন। তার অধিকাংশ গল্প কানাডার গ্রামীণ জীবনকে কেন্দ্র করে লেখা। তার গল্পগুলোর অন্তর্দৃষ্টি এবং করুণ রসের জন্য প্রায়ই তাকে রুশ লেখক আন্তন চেখভের সঙ্গে তুলনা করা হতো।
পেঙ্গুইন র্যান্ডম হাউস কানাডার প্রধান নির্বাহী ক্রিস্টিন কোচরেন এক বিবৃতিতে বলেন, 'অ্যালিস মানরো একজন জাতীয় সম্পদ। তিনি একজন অসাধারণ গভীরতা, সহানুভূতি এবং মানবতাবোধসম্পন্ন লেখক। তার লেখা কানাডা এবং বিশ্বজুড়ে পাঠকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে।'
তার প্রথম বড় সাফল্য আসে ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত 'ড্যান্স অব দ্য হ্যাপি শেডস'-এর হাত ধরে। এটি পশ্চিম অন্টারিওর শহরতলির জীবন সম্পর্কে লেখা তার ছোট গল্প সংকলন। 'ড্যান্স অব দ্য হ্যাপি শেডস'- কানাডার সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মাননা 'গভর্নর জেনারেল'স অ্যাওয়ার্ড' জিতেছিলেন।
তার জীবদ্দশায় জেতা তিনটি 'গভর্নর জেনারেল'স অ্যাওয়ার্ড'- এর মধ্যে প্রথম ছিল এটি।
মানরো তেরোটি গল্প সংকলন, 'লাইভস অব গার্লস অ্যান্ড উইমেন'- নামের একটি উপন্যাস, এবং নির্বাচিত গল্পের দুটি খণ্ড প্রকাশ করেছেন।
১৯৭৭ সালে নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিন 'রয়্যাল বিটিংস'-নামের মানরোর একটি গল্প প্রকাশ করেছিল। ছোটবেলায় তার বাবার তাকে দেওয়া বিভিন্ন শাস্তির উপর ভিত্তি করে বইটি লেখা। এরপর থেকে দীর্ঘদিন এই প্রকাশনার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল।
১৯৩১ সালে অন্টারিওর উইংহামে জন্মগ্রহণ করেন মানরো। তার বাবা ছিলেন একজন খামারি এবং মা ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা। তার অনেক গল্পে এই অঞ্চলের মানুষ, সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার ইতিহাস উঠে এসেছে।
হাইস্কুলে তিনি ক্লাস ভ্যালেডিক্টোরিয়ান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং লন্ডনের ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি পেয়েছিলেন।
মানরো জানান, উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সময় তিনি তার অর্ধেক সময় পড়াশোনায় এবং বাকি অর্ধেক লেখালেখিতে ব্যয় করেছেন।
তিনি এক ডজনেরও বেশি ছোটগল্পের সংকলন প্রকাশ করেছেন।
১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে তার গল্পগুলো সিবিসিতে প্রচারিত হতো এবং বেশ কয়েকটি কানাডিয়ান সাময়িকীতেও তার গল্প ছাপা হয়েছে।
তার কিছু গল্পে ষাটের দশকের সামাজিক বিপ্লবের আগের ও পরের জীবনের তুলনা করা হয়েছে।
তার একটি বিখ্যাত গল্প 'দ্য বিয়ার কেম ওভার দ্য মাউন্টেন'-নিয়ে ২০০৬ সালে সিনেমা নির্মিত হয়েছিল। এতে জুলি ক্রিস্টি ও গর্ডন পিনসেন্ট অভিনয় করেছিলেন।
আজীবন কৃতিত্বের জন্য ২০০৯ সালে মানরো আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার (ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কার) লাভ করেন।
বিচারকরা সে সময় এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, 'অ্যালিস মানরোর লেখা পড়ার অর্থ হলো প্রতিবার এমন কিছু শেখা, যা আপনি আগে কখনো ভাবেনওনি।'
২০১৩ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার পান। এর আগে রুডইয়ার্ড কিপলিং, টনি মরিসন ও আর্নেস্ট হেমিংওয়ের মতো সাহিত্যিকেরা এই পুরস্কার পেয়েছেন।
নোবেল কমিটি মানরোকে 'সমসাময়িক ছোট গল্পের মাস্টার' বলে অভিহিত করেছিল।
২০১৩ সালে গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মানরো বলেন, 'আমি সারাজীবন নিজের গল্পই লিখে চলেছি।'
তার শেষ গল্প সংকলন 'ডিয়ার লাইফ'- প্রকাশিত হয় ২০১২ সালে। এটিতে আংশিক-আত্মজীবনীমূলক গল্পের সংকলন অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তিনি ন্যাশনাল পোস্ট সংবাদপত্রকে বলেছিলেন, 'ডিয়ার লাইফ' -গল্পটি তার কাছে বিশেষ, কারণ হয়ত এরপর তিনি আর কিছু লিখবেন না।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি