ইরানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার কে
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি-সহ দেশটির আরো কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পরে মোহাম্মদ মোখবারকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই পদে তাঁকে নিযুক্ত করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
মোহাম্মদ মোখবার এর আগে ইরানের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। খামেনির অনুমোদনের পরপরই তিনি বিচার বিভাগের প্রধান গোলামহোসেন মোহসেনি এজেই এবং পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের এর সাথে বৈঠক করেছেন।
ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, ৫০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করবেন তাঁরা তিনজন।
নির্বাচন পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন মোখবার।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম তাঁকে উদ্ধৃত করে বলেছে, "আমাদের ওপর আরোপিত সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে রাইসির পথ অনুসরণ করব।"
মোহাম্মদ মোখবারের পরিচিতি
ইরানের দক্ষিণপশ্চিমের খুজেস্তান প্রদেশে জন্ম মোহাম্মদ মোখবারের। ৬৮ বছরের এই অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা করেন। আন্তর্জাতিক আইনের ওপর তাঁর পিএইচডি রয়েছে।
ক্যারিয়ারের শুরুতে ব্যাংকিং ও টেলিযোগাযোগ খাতে যুক্ত ছিলেন। কাজ করেছেন খুজেস্তান টেলিকমিউনিকেশন্স অথরিটির প্রধান হিসেবে। এরপর ১৯৯০ এর দশকে তাঁকে ওই প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর পদে নিযুক্ত করা হয়।
ইরানের অন্যতম শক্তিশালী একটি অর্থনৈতিক কনগ্লোমারেট (একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের অধীন থাকা বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী) –সিতাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১৪ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে এই প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার আগে ইরানের প্রয়াত সর্বোচ্চ নেতা খোমেনির প্রতিষ্ঠিত একটি দাতব্য সংস্থা– মোস্তাজাফান ফাউন্ডেশনের উপ-প্রধান ছিলেন।
ক্ষমতা গ্রহণের কিছুকাল পরেই ২০২১ সালে মোখবারকে প্রথম ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেন রাইসি। ১৯৮৯ সালে সংবিধান সংশোধনের পর মোখবারই হন সপ্তম ভাইস প্রেসিডেন্ট। নিজ দেশের রাষ্ট্রযন্ত্রে তিনি বেশ প্রভাবশালীও।
পদাসীন হওয়ার পরে প্রেসিডেন্ট রাইসির সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করেছেন তিনি। রাইসির সাথে বেশকিছু বিদেশ সফরও করেন। দেশের শীর্ষ সামরিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে মোখবার রাশিয়া সফর করেছেন বলেও জানা গেছে। ওই সফরে দুই দেশের মধ্যে অস্ত্র বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
২০১০ সালের ইরানের পরমাণু ও ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ততার জন্য দেশটির বেশকিছু কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই তালিকায় মোখবারও ছিলেন। তবে দুই বছর পরেই নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দেয় ইইউ।
অন্যান্য দেশে প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্টকে ভোটে নির্বাচিত হতে হয়, কিন্তু ইরানে এই পদে প্রেসিডেন্ট যাকে যোগ্য বলে মনে করেন তাঁকে নিয়োগ দিতে পারেন।
১৯৮৯ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী পদ বাতিল করা হয়। ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রীর মতো কিছু নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
ইরানে বেশ কয়েকজন ভাইস প্রেসিডেন্ট রয়েছেন, তাঁরা নির্বাহী বিভাগের ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে দায়িত্ব পালন করেন। তবে তাঁরা একটি মন্ত্রিসভার মতোই কাজ করে থাকেন। এদের মধ্যে শীর্ষ পদটি ছিল মোখবারের।
প্রয়াত প্রেসিডেন্ট রাইসির মতো ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এবং ইসলামী বিপ্লব রক্ষী বাহিনীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণেই তাঁকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এছাড়া, কর্মদক্ষ ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাঁর পরিচিতি আছে, যার রয়েছে বৃহৎ পর্যায়ের সব প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী দায়িত্ব পালনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা।
অনুবাদ: নূর মাজিদ