ইউক্রেন সংঘাত এড়াতে গতিপথ পরিবর্তন করছে ঈগল: গবেষণা
ইউক্রেনের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল এড়িয়ে চলতে আকাশে গতিপথ পরিবর্তন করছে ঈগল। সম্প্রতি গবেষণায় এমন তথ্যই ওঠে এসেছে।
গবেষকরা দেখেছেন, ইউক্রেনের সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখতে বড় চিত্রা ঈগল তাদের উড়ানের পথ পরিবর্তন করছে। জিপিএস ডেটা অনুসারে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে ইউক্রেন হয়ে যাওয়া পরিযায়ী এ পাখি তাদের নিয়মিত পথের পরিবর্তে বেছে নিয়েছে বিকল্প দীর্ঘ পথ।
এজন্য যাত্রাপথের বিশ্রাম বিরতিও সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছিল তাদের। গতিপথ পরিবর্তন করায় আরও বেশি শক্তি ব্যবহার এবং তাদের প্রজনন স্থলে পৌঁছাতে আরও বেশি সময় লেগেছে।
গবেষণার সহ-লেখক ইউনিভার্সিটি অফ ইস্ট অ্যাংলিয়ার চার্লি রাসেল বলেন, 'ব্যাপারটা যেন কোনো পানির বিরতি ছাড়াই ম্যারাথন শেষে অতিরিক্ত সাত বা আট মাইল দৌড়ানোর মতো!'
গবেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে এরূপ পরিস্থিতি ঈগলের প্রজননকে বিলম্বিত করতে পারে, কারণ ঈগলের প্রজননের জন্য তৈরি হতে অন্যান্য পাখি হতে বেশি সময় লাগে। এছাড়া ঈগলের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে তাদের বেঁচে থাকাও কঠিন করে তুলতে পারে।
কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে লেখা নিবন্ধে রাসেল ও তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন, ২০২২ সালের মার্চ ও এপ্রিলে ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ বেলারুশের প্রজনন স্থলে যাওয়ার সময় ১৯টি বড় চিত্রা ঈগলের মাইগ্রেশন রুট বা স্থানান্তরের পথ বিশ্লেষণ করেছেন তারা। এদের মধ্যে স্ত্রী ঈগল গ্রিস থেকে এবং পুরুষ ঈগল পূর্ব আফ্রিকা থেকে ভ্রমণ করত।
গবেষকরা এই পথগুলোকে ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ২০টি পরিযায়ী পাখির রেকর্ড করা ৬৫টি পথের সাথে তুলনা করেছেন।
অনুসন্ধান থেকে দেখা গেছে, আক্রমণের পরে, ঈগলগুলো গড়ে অতিরিক্ত ৫৩ মাইল (৮৫ কিলোমিটার) ভ্রমণ করেছিল। রাসেল উল্লেখ করেছেন যে, একটি ঈগল তার যাত্রাপথে অতিরিক্ত ১৫৫ মাইল ভ্রমণ করেছে।
এছাড়া ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পরে ঈগলদের গড়ে ৫৫ ঘণ্টা বেশি যাত্রা সময় লেগেছে, আর পুরুষ ঈগলরা আগের চেয়ে উড়েছে আরও ধীর গতিতে।
সংঘাতের আগে, যেখানে গড়ে ৯০ শতাংশ ঈগল যাত্রাপথে ইউক্রেনে বিশ্রাম নিত, সংঘাত শুরু হওয়ার পর সে সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ৩২ শতাংশে। বেশিরভাগ ঈগলই ওই অঞ্চল সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে যেসব জায়গায় সামরিক তৎপরতা বেশি ছিল সেসব জায়গাই সব থেকে বেশি এড়িয়ে গেছে তারা। তবে রাসেল উল্লেখ করেছেন যে একেক ঈগলের ওপর প্রভাব একেক রকম।
যেমন, বোরোভেটস নামে একটি ঈগল তীব্র সংঘাত চলা কিয়েভের মধ্য দিয়েও উড়ে গিয়েছে। ডেনিসা নামের আরেকটি ঈগল বিস্ফোরণ ও যুদ্ধের কাছাকাছি উড়ে যাওয়ার পর তার গতিপথ পরিবর্তন করে।
রাসেল বলেন, 'এমন নয় যে পাখিরা প্রতিদিন সকালে খবরে দেখছে তাদের পরিযায়ী পথে কোথায় উড়ে যাওয়া উচিত বা উচিত নয়'।
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, সম্ভাব্য প্রজননে থাকা ঈগলদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাবটা এ গবেষণায় উল্লেখিত ফলাফল থেকেও বেশি হবে।
রাসেল বলেন, 'এই মুহূর্তে আমরা খুব বেশি কিছু করতে না পারলেও ঈগলদের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তা গুরুত্বের সাথে অনুধাবন করতে হবে। ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর কেবল চিত্রা ঈগলের প্রজনন বৃদ্ধি নয় বরং তাদের পুরো বাস্তুতন্ত্রকে সংরক্ষণ করতে এগিয়ে আসতে হবে আমাদের।'
লাফবারো বিশ্ববিদ্যালয়ের দার্শনিক ড. জশ মিলবার্ন, যিনি তার গবেষণায় প্রাণী এবং যুদ্ধ সম্পর্কে নৈতিক প্রশ্নগুলো অন্বেষণ করেন, বলেছেন যে ইউক্রেনের গৃহপালিত এবং বন্দী বন্য প্রাণীদের ওপর সংঘাতের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে আরও বিস্তর তথ্য যোগ করেছে এ গবেষণা।
তিনি বলেন, 'কিছু কিছু ক্ষেত্রে বন্য প্রাণীরা মানুষের সংঘাত থেকে লাভবানও হতে পারে, তবে তা বিরল। কিন্তু অন্যান্য যুদ্ধক্ষেত্র নিয়ে করা আগের গবেষণার মতো এই গবেষণাটিও প্রমাণ করে যে, যুদ্ধ সাধারণত বন্য প্রাণীদের ক্ষতি করে, নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলে এবং প্রাণী সংরক্ষণকে আরও কঠিন করে তোলে।'
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন