ফ্লাইট টার্বুলেন্স কী এবং কেন ঘটে?
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/05/22/an_airplane.jpg)
সম্প্রতি লন্ডন থেকে সিঙ্গাপুরগামী একটি ফ্লাইটে গুরুতর টার্বুলেন্সে একজনের মৃত্যু ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। খবর বিবিসি'র।
বিমানটি চলাচলের সময় আকস্মিকভাবে গতিবিধিতে ছন্দপতন হয়। ফলে কেবিনে থাকা যাত্রী ও বস্তুগুলো তীব্র ঝাঁকুনিতে ছিটকে পরে। পরে এটি ব্যাংককে জরুরি অবতরণ করে।
টার্বুলেন্স কী?
বিমানে সচরাচর যাতায়াত করা যাত্রীরা হঠাৎ ঝাঁকুনির মতো পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত। মূলত বিমান টার্বুলেন্সের মুখোমুখি হলে এমনটা হয়ে থাকে। এটি বিমানের গতিবিধি ও উচ্চতায় আকস্মিক পরিবর্তন আনে।
রয়্যাল এয়ার ফোর্সের প্রাক্তন অফিসার ও বিবিসি ওয়েদারের সাইমন কিংয়ের মতে, বেশিরভাগ টার্বুলেন্স মেঘের এলাকায় ঘটে থাকে। কেননা সেখানে ওপর ও নীচ থেকে বাতাসের চাপ থাকে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাতাসের এই চাপ মোটামুটি হালকা থাকে। তবে বড় মেঘের ক্ষেত্রে বাতাসের বিশৃঙ্খল গতিবিধি মাঝারি বা এমনকি গুরুতর টার্বুলেন্স সৃষ্টি করতে পারে।
আরেকটি ভিন্ন ধরনের টার্বুলেন্স রয়েছে যাকে 'ক্লিয়ার এয়ার টার্বুলেন্স' বলে। যেটি মেঘের উপস্থিতি ছাড়াই তৈরি হতে পারে। শনাক্ত করা কঠিন বলে এটি বেশ বিপজ্জনক।
এভিয়েশন অ্যাকাডেমিক ও কমার্শিয়াল পাইলট গাই গ্র্যাটন বলেন, "এই ধরনের টার্বুলেন্স জেট স্ট্রিমিংয়ের আশেপাশে ঘটে। দ্রুতগতিতে প্রবাহিত বাতাসের এই স্রোত সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ হাজার ফুট উচ্চতায় পাওয়া যায়।"
গাই গ্র্যাটন আরও বলেন, "আপনি সহজেই জেট স্ট্রিমের বাতাস এবং আশেপাশের বাতাসের মধ্যে প্রতি ঘণ্টায় ১০০ মিটারের গতির পার্থক্য পাবেন। ধীর ও দ্রুত প্রবাহিত বাতাসের মধ্যে জেট স্ট্রিমের চারপাশে ঘর্ষণ টার্বুলেন্স সৃষ্টি করে। এটি একেক দিকে চলে যায়, যা এড়ানো কঠিন হয়ে যায়।"
গ্র্যাটন জানান, আপনি যদি ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকায় বিমানে যান, তবে এমনটা সম্পূর্ণরূপে এড়ানো কঠিন। এর ফলে তীব্র টার্বুলেন্সের সৃষ্টি হতে পারে।
টার্বুলেন্স কতটা বিপজ্জনক?
ক্র্যানফিল্ড ইউনিভার্সিটির অ্যাভিয়েশন এন্ড দ্য এনভাইরনমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক গ্র্যাটন বলেছেন, "টার্বুলেন্স যতটুকু খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে সেটি সহ্য করার মতো করেই বিমানগুলোকে ডিজাইন করা হয়েছে। তাই এর কারণে বিমান ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।"
তবে টার্বুলেন্স একটি বিমানের জন্য বেশ অস্বস্তির কারণ। তাই পাইলটরা এটি এড়িয়ে যাওয়ার যথাসম্ভব চেষ্টা করেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চরম পরিস্থিতিতে টার্বুলেন্স একটি বিমানের কাঠামোগত ক্ষতি করতে পারে। এটি নির্ভর করবে বাতাস কতটা শক্তিশালী হতে পারে তার ওপর।
তীব্র টার্বুলেন্স বিমানের যাত্রীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ এর আকস্মিক গতি পরিবর্তনে কেউ সিটবেল্ট না পরলে কেবিনে আছড়ে পরতে পারেন। তবে এভিয়েশন সেইফটি এক্সপার্টদের মতে, টার্বুলেন্স ফলে মৃত্যু কিংবা আহত হওয়ার ঘটনা বিরল।
এদিকে জন স্ট্রিকল্যান্ড নামের এক এভিয়েশন এক্সপার্ট জানান, লক্ষ লক্ষ ফ্লাইটের বিপরীতে গুরুতর টার্বুলেন্স থেকে মৃত্যুর ঘটনা 'তুলনামূলকভাবে বিরল'।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড জানায়, ২০০৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ইউএসভিত্তিক এয়ারলাইনগুলিতে ১৬৩টি 'গুরুতর টার্বুলেন্স' আঘাত হেনেছে। যা প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১২টি।
পাইলটরা যেভাবে টার্বুলেন্স মোকাবিলা করেন
পাইলটরা রওনা দেওয়ার আগেই যাত্রা সম্পর্কে পূর্বাভাস পান। যার মধ্যে আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যও থাকে। এক্ষেত্রে তারা নিজেদের রুট পরিকল্পনা করার সময় এই তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে 'ক্লিয়ার এয়ার টার্বুলেন্স' এড়ানো বেশ কঠিন।
এছাড়া গ্র্যাটন জানান, একই রুটে সামনে থাকা অন্যান্য বিমানগুলোও টার্বুলেন্সের রিপোর্ট করে থাকে। সেক্ষেত্রে পাইলটরা ঐ এলাকাগুলি এড়াতে চেষ্টা করে বা এর প্রভাব কমাতে প্লেনটির গতি কমিয়ে দেয়। এছাড়াও এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে ক্রুদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
নিরাপদ থাকার জন্য যাত্রীরা যা করতে পারেন
টার্বুলেন্স পরিস্থিতিতে যাত্রীদের জন্য উপদেশ হলো সিটবেল্ট ব্যবহার করা এবং কোনো ভারী জিনিস বাইরে না রাখা। এক্ষেত্রে পাইলটরা যাত্রীদের সব সময় সিটবেল্ট পরার পরামর্শ দেন। কারণ টার্বুলেন্স অপ্রত্যাশিত হতে পারে।
টার্বুলেন্সের প্রবণতা কি বাড়ছে?
কিছু গবেষক মনে করেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে টার্বুলেন্সের সম্ভাবনা বেড়েছে।
গত বছর যুক্তরাজ্যের রিডিং ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, সাধারণত ব্যস্ত উত্তর আটলান্টিক রুটে ১৯৭৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে গুরুতর টার্বুলেন্স ৫৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসাথে তারা কার্বন নির্গমন ও উষ্ণ বাতাসের কারণে উচ্চ উচ্চতায় বাতাসের গতির পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছেন।
এক্ষেত্রে গাই গ্র্যাটন মনে করেন, আমরা আরও বেশি টার্বুলেন্সের সম্মুখীন হচ্ছি। এর আরেকটি কারণ হতে পারে আমরা আরও বেশি যাতায়াত করছি।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান