ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও নরওয়ের
ঐতিহাসিক এক পদক্ষেপে ইউরোপের তিনটি দেশ– নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড ও স্পেন – ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। আজ বুধবার (২২ মে) এই ঘোষণা দেয় তারা। এতে চলমান নিপীড়নের মধ্যেও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ফিলিস্তিনিরা। অন্যদিকে ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল। ইতোমধ্যে নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড থেকে তার রাষ্ট্রদূতদেরও প্রত্যাহার করেছে জায়নবাদী দখলদার রাষ্ট্র।
দেশ তিনটির পক্ষ থেকে ধারাবাহিক এই ঘোষণা আসে। প্রথমে এই ঘোষণা দেয় নরওয়ে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জোনাস গাহর স্টোর এসময় বলেন, "স্বীকৃতি ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে কোনোদিনই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না।"
তিনি বলেন, আগামী ২৮ মে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে তাঁর দেশ। "এর মাধ্যমে নরওয়ে আরব শান্তি পরিকল্পনাকে সমর্থন দিচ্ছে।"
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশকিছু দেশের সরকার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা আলোচনা করেছে। তাদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের জন্য দুই রাষ্ট্র সমাধান আবশ্যক।
ইইউ সদস্য না হলেও, এর পদক্ষেপগুলোর অনুকরণে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে নরওয়ে। দেশটি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের জন্য দৃঢ়ভাবে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন করে।
গাহর স্টোর বলেন, ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার মৌলিক অধিকার রয়েছে। … তাই নরওয়ে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে এর সমস্ত অধিকারকে মেনে নেবে এবং রাষ্ট্রটির প্রতি দায়বদ্ধতাকে স্বীকার করবে।
বুধবার আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিমন হ্যারিস তাঁর ঘোষণার সময় বলেছেন, স্পেন ও নরওয়ের সাথে সমন্বয় করে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। "এটি ফিলিস্তিন ও আয়ারল্যান্ডের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।"
তিনি জানান, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের উদ্দেশ্য রেখেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
আগামী সপ্তাহগুলোতে অন্যান্য দেশও স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়েকে অনুসরণ করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজও ২৮ মে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানান। আজ বুধবার দেশটির পার্লামেন্টে তিনি এই ঘোষণা দেন।
বিগত কয়েক মাস ধরে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ সফর করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছেন স্পেনের এই সরকার-প্রধান। একইসঙ্গে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টাও চালান তিনি। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে এর আগেও বেশ কয়েকবার মন্তব্য করেছেন তিনি।
ইউরোপীয় তিনটি দেশের এ পদক্ষেপের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইস্রেল কাৎজ বুধবার নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড থেকে অবিলম্বে রাষ্ট্রদূতদের তেল আবিবে ফিরে আসার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, দেশ দুটি ফিলিস্তিনিদের ও পুরো বিশ্বকে এই বার্তা দিয়েছে যে সন্ত্রাসবাদের সুফল পাওয়া যায়।
ইসরায়েল এটিকে একটি 'বিকৃত পদক্ষেপ' হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছে "এটি কেবল অস্থিতিশীলতাকেই বাড়িয়ে তুলবে।"
অনুবাদ: নূর মাজিদ