‘কঠোর শাস্তি’ হিসেবে তাইওয়ানের চারপাশে চীনের সামরিক মহড়া
তাইওয়ানের চারপাশে দুইদিনের সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। দেশটির সামরিক বাহিনী এ মহড়াকে স্ব-শাসিত দ্বীপটির 'বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের' জন্য 'কঠোর শাস্তি' বলে অভিহিত করেছে। খবর বিবিসি'র।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে উইলিয়াম লাইয়ের দায়িত্ব নেওয়ার তিনদিনের মাথায় চীন এমন মহড়া শুরু করল। লাই চীনকে তাইওয়ানের প্রতি হুমকি দেওয়া বন্ধ করতে এবং তাইওয়ানের গণতন্ত্রের অস্তিত্বকে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
চীন তাইওয়ানকে একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসাবে দেখে। বেইজিং মনে করে, তাইওয়ান শেষ পর্যন্ত এটির নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে তাইওয়ান নিজেকে আলাদা হিসাবে বিবেচনা করে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় চীনের এ মহড়াকে 'অযৌক্তিক উসকানি' বলে নিন্দা করেছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, '[তাইওয়ানের] সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য' নৌ, বিমান এবং স্থল বাহিনী মোতায়েন করেছে তাইপেই।
বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক অবরোধের সিমুলেশনের পরিবর্তে চীন প্রথমবারের মতো একটি পূর্ণমাত্রার আক্রমণের অনুকরণে মহড়া চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাইওয়ানের সামরিক বিশেষজ্ঞরা।
চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-এর প্রকাশিত মানচিত্র অনুসারে, মহড়া মূল তাইওয়ানের চারপাশে সংঘটিত হচ্ছে। প্রথমবারের মতো তাইপে-নিয়ন্ত্রিত চীনা উপকূলের কাছাকাছি অবস্থিত কিনমেন, মাতসু, উকিউ এবং ডংগিন দ্বীপসমূহকে মহড়ার অংশ করা হয়েছে।
তাইওয়ানের পূর্বাঞ্চলে নৌ ও বিমান টহল পাঠানোর মাধ্যমে চীন তাইপেইকে দেখাতে চায় যে, এ অঞ্চল এখন চীনা আক্রমণের মুখে পড়তে পারে। চীন আমেরিকাকেও দেখাতে চায়, পূর্ব থেকে তাইওয়ানকে রসদ বা সেনা সরবরাহের যেকোনো প্রচেষ্টা চীনা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও নৌ আক্রমণের মুখে পড়তে পারে।
পিএলএ বলেছে, তাদের মহড়ার লক্ষ্য হচ্ছে চীনা সামরিক বাহিনীর 'যৌথ প্রকৃত যুদ্ধ সক্ষমতা' পরীক্ষা করা।
সামরিক বিশেষজ্ঞ চিহ চুংকে উদ্ধৃত করে তাইওয়ানের গণমাধ্যম বলছে, চীনের চলমান মহড়ার লক্ষ্য 'তাইওয়ানে একটি পূর্ণ মাত্রার সশস্ত্র আক্রমণের অনুশীলন' করা। চীন গত এক বছরে বারবার যুদ্ধবিমান এবং নৌবাহিনীর জাহাজ দিয়ে তাইওয়ানকে ঘিরে রাখার মহড়া দিয়েছে।
পিএলএ বলেছে, বৃহস্পতিবারের মহড়া ছিল 'তাইওয়ানের বাহিনীগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের জন্য একটি কঠোর শাস্তি এবং বহিরাগত শক্তির হস্তক্ষেপ ও উসকানির বিরুদ্ধে একটি কঠোর সতর্কবার্তা।'
এদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে, জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই মহড়া একটি 'প্রয়োজনীয় এবং বৈধ পদক্ষেপ'।
গত সোমবার এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই 'তাইওয়ানকে হুমকি দেওয়া বন্ধ করতে' চীনের প্রতি আহ্বান জানান। বেইজিং তার ওই বক্তৃতার নিন্দা জানায়। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই লাইয়ের ভাষণকে 'লজ্জাজনক' বলে অভিহিত করেন।
গত জানুয়ারিতে লাইয়ের নির্বাচনে জয়লাভের পর বেইজিং একটি বিবৃতি জারি করে জোর দিয়ে উল্লেখ করেছিল 'তাইওয়ান চীনের অংশ'। এছাড়া আলোচনার জন্য লাইয়ের প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে বেইজিং।
বেইজিং এর আগে তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে মন্তব্যের জন্য লাইকে 'বিচ্ছিন্নতাবাদী' এবং 'সমস্যা সৃষ্টিকারী' হিসেবে অভিহিত করেছিল।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, বৃহস্পতিবারের মহড়া '[বেইজিংয়ের] সামরিক মানসিকতাকে তুলে ধরেছে'।
'সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের বিমান ও জাহাজের ক্রমাগত হয়রানি বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে,' বলেছে মন্ত্রণালয়।
তাইওয়ানের রাষ্ট্রপতির কার্যালয় বলেছে, 'তাইওয়ানের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাকে হুমকি দিতে চীনের একতরফা সামরিক উসকানির ব্যবহার' দেখাটা 'দুঃখজনক'।
তবে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের দিকটি দেখাশোনা করা তাইওয়ানের মেইনল্যান্ড অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল বলেছে, দুই রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাইওয়ানের লক্ষ্য এখনো একই রয়েছে।