ভারতে সবচেয়ে বেশি ভোট ব্যবধানে জিতলেন যারা
ভারতের লোকসভা নির্বাচন শেষে গতকাল মঙ্গলবার ফল ঘোষণা করা হয়েছে । দেশটির এই সাধারণ নির্বাচনে 'আবকি বার ৪০০ পার' অর্থাৎ চারশ'র বেশি আসনে জয়ের বিষয়ে প্রত্যয়ী ছিল বিজেপি। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পেলেও ২৪০টি আসন নিশ্চিত করেছে বিজেপি।
ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজন ২৭২ আসন। সে হিসেবে, জোট হিসেবে এনডিএ সরকার গঠন করতে পারবে।
জোটের দুই শরীক দল – অন্ধ্র প্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি এবং বিহারে মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের জনতা দল-ইউনাইটেড (জেডি–ইউ) এর ওপর নির্ভর করছে বিজেপির সরকার গঠন।
একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আর সরকার গঠন হচ্ছে না বিজেপির। গত নির্বাচনে বিজেপি একাই ৩০৩টি আসন পেয়েছিল। পুরো ভারতের ভোটের হার হিসাব করা হলে বিজেপি ২০১৯ সালের তুলনায় এবার মাত্র ০.৭ শতাংশ কম ভোট পেয়েছে।
তবে এবার দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন 'ইনডিয়া' জোট। কংগ্রেস একা ৯৯টি আসন এবং ইনডিয়া জোট বাগিয়ে নিয়েছে ২৩২টি আসন। সরকার গঠনের জন্য চন্দ্রনাথ বাবু এবং নীতিশ কুমারের সাথে তোড়জোড় ও আলোচনা শুরু করেছে কংগ্রেস।
কিন্তু বিজেপির এ ০.৭ শতাংশ ভোট কমার কারণে কীভাবে আসন সংখ্যায় এত বড় পার্থক্য হলো? বিজেপি গুজরাট, মধ্যপ্রদেশের মতো যে সব রাজ্যে একচেটিয়া আধিপত্য দেখিয়েছে সেখানে তাদের ভোট শতাংশে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এদিকে উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে তাদের ভোটের হার কমেছে ৮ শতাংশ। এ রাজ্যে গতবারের তুলনায় ২৯ আসন কম পেয়েছে। এদিকে দক্ষিণের বেশ কিছু রাজ্যে বিজেপির ভোটের হার বাড়লেও সেই তুলনায় আসন সংখ্যা বাড়াতে পারেনি বিজেপি।
এদিকে শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, মহারাষ্ট্র, বাংলার মতো রাজ্যে বিজেপির ভোটের হার অনেকটাই কমেছে গতবারের লোকসভা নির্বাচনের তুলনায়। এই রাজ্যগুলোতে তাদের আসন সংখ্যাও কমেছে।
ওড়িশা, তেলঙ্গনার মতো রাজ্যে তারা আগেরবারের তুলনায় আরও ভালো ফল করেছে। এমনকি কেরালা ও অন্ধ্রপ্রদেশেও এবার আসন পেয়েছে বিজেপি। তবে সেখানে আসন সংখ্যা প্রতাশিতভাবে বাড়াতে পারেনি বিজেপি।
এবার সার্বিক ভাবে দক্ষিণে বিজেপির ভোটের হার বেড়েছে। তামিলনাড়ুতে একটি আসন না পেলেও গতবারের তুলনায় ৮ শতাংশ বেড়েছে বিজেপির ভোটের হার। সব মিলিয়ে বিজেপির ভোট শতাংশ গতবারের কাছাকাছি পৌঁছালেও গতবারের থেকে আসন সংখ্যা অনেক কমেছে।
তবে ভোটের লড়াইয়ে ব্যক্তিগত চমক দেখিয়েছেন অনেক প্রার্থী। বিজেপির স্মৃতি ইরানিসহ হেভিওয়েট অনেকে হারলেও কয়েকজন প্রার্থী বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়ে নজর কেড়েছেন।
তাদের মধ্যে সবার ওপরে রয়েছেন মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের সংসদ সদস্য শংকর লালওয়ানি। বিজেপির এই প্রার্থী ১১ লাখ ৭২ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন। এর মধ্য দিয়ে লোকসভা নির্বাচনে সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়ের আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছেন তিনি।
তিনি মোট ভোট পেয়েছেন ১২ লাখ ২৬ হাজার ৭৫১টি। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বহুজন সমাজ পার্টির সঞ্জয় সোলাঙ্কি পেয়েছেন মাত্র ৫১ হাজার ৬৫৯ ভোট।
আমাসের ধুবড়ি আসন থেকে ভোটে দাঁড়ান রাকিবুল হুসেইন। কংগ্রেসের এই প্রার্থী এবার জিতেছেন ১০ লাখ ১২ হাজার ভোটের ব্যবধানে। এআইইউডিএফ প্রার্থী বদরুদ্দিন আজমলকে পরাজিত করেছেন তিনি।
তালিকায় এর পরে আছেন মধ্যপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের নাম। বিজেপির এ নেতা জিতেছেন ৮ লাখ ২১ হাজার ভোটের ব্যবধানে, হারিয়েছেন কংগ্রেসের প্রতাপ ভানু শর্মাকে। মধ্যপ্রদেশের ভিদিশা আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছেন তিনি। শিবরাজ সিং চৌহান পেয়েছেন ১১ লাখ ১৬ হাজার ৪৬০ ভোট।
গুজরাটের নভসারি আসন থেকে বিজেপি প্রার্থী সিআর পাতিল ৭ লাখ ৭৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন কংগ্রেসের নৈশাদভাই ভূপতভাই দেশাইকে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তিনি ৬ লাখ ৮৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। এবার নিয়ে তৃতীয় দফায় সংসদ সদস্য হলেন পাতিল। ভোটের ব্যবধানে নিজের গড়া আগের রেকর্ড ভেঙেছেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অমিত শাহ ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন গুজরাটের গান্ধীনগর থেকে। জিতেছেন ৭ লাখ ৪৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে। অমিত শাহ মোট ১০ লাখ ১০ হাজার ৯৭২ ভোট পেয়েছেন। আর কংগ্রেস প্রার্থী সোনাল রমনভাই প্যাটেল পেয়েছেন মাত্র ২ লাখ ৬৬ হাজার ২৫৬ ভোট।
তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছেন দলটির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ডায়মন্ড হারবার আসনে তিনি ৭ লাখ ১০ হাজার ৯৩০ ভোটের রেকর্ড ব্যবধানে জিতেছেন।
তিনি হারিয়েছেন বিজেপির অভিজিৎ দাস ববিকে। অভিষেক পেয়েছেন ১০ লাখ ৪৮ হাজার ২৩০ ভোট। আর বিজেপি প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৩০০ ভোট।
এ ছাড়া বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচলবিষয়ক মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া মধ্যপ্রদেশের গুনা আসন থেকে ৫ লাখ ৪০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন।