ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ছয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা, বাদ আহমাদিনেজাদ
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে ২৮ জুন ইরানের অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্বাচন। এ নির্বাচনে জন্য ছয়জন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে লড়ার অনুমোদন দিয়েছে দেশটির নির্বাচন ও আইন-সংক্রান্ত বিষয়াদি দেখভালের দায়িত্বে থাকা গার্ডিয়ান কাউন্সিল।
রোববার (৯ জুন) ঘোষণা করা ছয় প্রার্থীর নাম। এতে গত নির্বাচনের মতো এবারও প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে।
যে ছয় প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন: পার্লামেন্টের স্পিকার ও সাবেক বিপ্লবী গার্ড কমান্ডার মোহাম্মদ বাগের গালিবাফ, পরমাণু কর্মসূচিবিষয়ক সাবেক মধ্যস্থতাকারী সাইদ জালিলি, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তফা পোউর মোহাম্মাদি, তেহরানের মেয়র আলী রেজা জাকানি, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট আমির হোসেইন গাজিজাদেহ হাশেমি ও পার্লামেন্ট সদস্য মাসুদ পেজেশকিয়ান।
নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিলে ৮০ জন রাজনীতিবিদ নাম নিবন্ধন করেছিলেন। যাচাই-বাছাই শেষে ছয়জনকে অনুমোদন দিয়েছে কাউন্সিল। বাকি ৭৪ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে ৬২ বছর বয়সি গালিবাফ ইরানের ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ড কোর-এর (আইআরজিসি) বিমান বাহিনীর সাবেক কমান্ডার। চার বছর ধরে পার্লামেন্টের স্পিকারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি। ২০০৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন তেহরানের মেয়র। এর আগে ছিলেন পুলিশপ্রধান। ২০০৫, ২০১৩ ও ২০১৭ সালের নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন গালিবাফ। তবে ২০১৭ সালে রাইসিকে সমর্থন দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।
সাইদ জালিলি দেশটির সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির প্রত্যক্ষ প্রতিনিধি। ২০২১ সালের নির্বাচনে রাইসিকে সমর্থন দিয়ে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন তিনি।
২০২১ সালের নির্বাচনে রাইসির পক্ষে সমর্থন নিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন জাকানি। এরপর তিনি তেহরানের মেয়র হন। রোববার এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে জাকানি বলেন, তিনি নিহত প্রেসিডেন্টের 'পথ ধরেই চলতে' চান।
৭০ বছর বয়সি পার্লামেন্ট সদস্য মাসুদ পেজেশকিয়ান পাঁচবারের আইনপ্রণেতা। অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। অনুমোদন পাওয়া ছয়জনের মধ্যেই একমাত্র তিনিই খানিকটা মধ্যপন্থি এবং সংস্কারপন্থি; বাকি সবাই রক্ষণশীল।
গাজিজাদেহ ২০২১ সালেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন। সেবার তিনি ভোট পেয়েছিলেন ৩.৪৫ শতাংশ—১০ লাখেরও কম। রাইসি পেয়েছিলেন প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ ভোট।
বাদ পড়া প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত নাম সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ। এর আগে ২০১৭ ও ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি তিনি।
এছাড়া তিন মেয়াদের সাবেক স্পিকার আলি লারিজানিও আছেন বাদ পড়াদের তালিকায়। তিনিও ২০২১ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি।
মধ্যপন্থি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির প্রশাসনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসহাক জাহাঙ্গিরির মনোনয়ন আবেদনও বাতিল করে দিয়েছে গার্ডিয়ান কাউন্সিল। বাদ পড়াদের তালিকায় আছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান আব্দুলনাসের হেম্মাতি। হেম্মাতিকে ২০২১-এর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল—সেবার তিনি ৮ শতাংশ, বা ২৪.২ লাখ ভোট পেয়েছিলেন।
২০২৫ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ১৯ মে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রাইসির মৃত্যু হওয়ায় নির্বাচন এগিয়ে আনা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী ওই হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয় ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের জোলফা এলাকার কাছে। ওই দুর্ঘটনায় রাইসিসহ হেলিকপ্টারে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান এবং কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা নিহত হন। রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার।
আশা করা হচ্ছিল, ৬৩ বছর বয়সি রাইসি আরেক মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হবেন। এছাড়া ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার দৌড়েও এগিয়ে ছিলেন তিনি।
২০২০ সাল থেকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কমছে। ২০২৪ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে ৪১ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন—যা ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর সর্বনিম্ন।