ব্যাংককের বিখ্যাত চাতুচাক বাজারে আগুন, প্রায় ১ হাজার প্রাণীর মৃত্যু
মঙ্গলবার (১১ জুন) ভোরে ব্যাংককের বিখ্যাত চাতুচাক বাজারে আগুন লেগে প্রায় এক হাজার প্রাণী মারা গেছে। পুড়ে গেছে অন্তত একশ দোকান। খবর বিবিসি'র।
খাঁচায় থাকা পাখি, কুকুর, বিড়াল এবং সাপ আগুনে পুড়ে মারা গেছে। এ ছাড়া মারা গেছে ইঁদুর, অজগর ও টিকটিকিও। দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুনের সূত্রপাত। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বড় এ বাজারের সরু গলিতে প্রায় ১০ হাজার দোকান রয়েছে। এটি থাইল্যান্ডের সাপ্তাহিক বাজারগুলোর মধ্যে বৃহত্তম এবং সর্বাধিক পরিচিত। প্রতি শনি ও রোববার এখানে প্রায় দুই লাখ পর্যটক আসেন বলে দাবি করা হয়।
ব্যাংককের বিখ্যাত এ বাজারে এভাবে শোচনীয় অবস্থায় পোষা প্রাণী রাখার সমালোচনা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। এখানে প্রাণীগুলো যে অবস্থায় রাখা হয় তাতে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত হয় এবং সহজেই মারা যায়। অনেক দিন ধরেই এখানের পোষা প্রাণীর বাজার বন্ধের আহ্বান জানানো হচ্ছে। এ ঘটনার পর আরও জোরালোভাবে তা বন্ধের দাবি উঠেছে।
আগুনের খবর পাওয়া মাত্রই দ্রুত বাজারে ছুটে যান ৪২ বছর বয়সী আমপর্ন ওয়াসাট। তিনি এসে দেখেন যে তার দোকানটি ধ্বংস হয়ে গেছে, অন্ধকারের কারণে কিছুই উদ্ধার করতে পারেননি তিনি। ওয়াসাট কচ্ছপ, গিরগিটি, অজগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ বিক্রি করতেন।
তিনি বলেন, 'এখন আমি কী করব বুঝতে পারছি না। আমাদের আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হবে, তবে কীভাবে তা আমি জানি না। আমি কিছু মৃত সাপ হিমায়িত করে রেখেছি যাতে হিসেব করতে পারি যে আমার কত টাকা ক্ষতি হয়েছে।'
প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, প্রায় এক হাজার ৪০০ স্কয়ার মিটার জুড়ে থাকা পোষা প্রাণীর ১১৮টি দোকানের বেশির ভাগই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে বিবিসি প্রতিনিধি যখন বাজারে আসেন, তখন দোকান মালিকরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ক্ষতিপূরণের আবেদন জানাচ্ছিলেন, কয়েকজনকে কান্না করতেও দেখা গিয়েছিল।
আবার কিছু মানুষ বিধ্বস্ত দোকানগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছিলেন, যেখানে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের কাছে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছিলেন, যা যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে।
অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া মিচা নামের এক দোকানদার অনলাইন সংবাদমাধ্যম থাইগারকে বলেন, তার দোকানের ওপরের মাচায় প্রাণীদের চেঁচামেচি শুনে তার ঘুম ভেঙে যায়। মিচা জানান, তিনি জানালা দিয়ে নিরাপদ স্থানে ওঠে আসেন। 'হঠাৎ ঘন ধোঁয়ায় বাতাস ভরে যায়, শ্বাস নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে', যোগ করেন তিনি।
জানা গেছে, কিছু দোকান মালিক বাজারে দোকানের ভেতরেই থাকেন, তবে আগুন লাগার সময় সেখানে কতজন ছিলেন তা স্পষ্ট নয়।
চাতুচাক জেলা কার্যালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১০ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং ৩০ মিনিটের মধ্যে তা নিভিয়ে ফেলা হয়। অনলাইনে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ খাঁচার অংশ আগুনে পুড়ে গেছে।
পেটা এবং ওয়াইল্ডলাইফ ফ্রেন্ডস ফাউন্ডেশন এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে, বন্দী প্রাণীদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে থাই সরকার এবং ব্যাংকক মেট্রোপলিটন প্রশাসনের কাছে বাজারটি পুনরায় না খুলতে নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
থাইল্যান্ডের ওয়াইল্ডলাইফ ফ্রেন্ডস ফাউন্ডেশন চাতুচাক বাজারকে সম্বোধন করেছে 'ব্যাংককের লজ্জা' বলে।
ফাউন্ডেশনের পরিচালক এডউইন উইক বলেন, 'এই নিরীহ প্রাণীগুলোর বেশিরভাগই দেশে অবৈধভাবে পাচার করা হয়। এটা অনৈতিক, নিষ্ঠুর, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়।'
তিনি আরও বলেন, 'ব্যাংকক মেট্রোপলিটন প্রশাসনের উচিত পদক্ষেপ নেওয়া এবং প্রাণীদের ওপর এই অর্থহীন নিষ্ঠুরতা বন্ধ করা'।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন