ভারতে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে পরীক্ষা প্রধান বরখাস্ত
সম্প্রতি সর্বভারতীয় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে দেশটির ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির (এনটিএ) প্রধানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন পরীক্ষা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। খবর বিবিসির
শনিবার (২২ জুন) এনটিএ ডিরেক্টর জেনারেল সুবোধ কুমার সিংকে বরখাস্ত করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। ওইদিনই তার জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার প্রদীপ সিং খারোলাকে।
এছাড়া রোববারের স্নাতকোত্তর শ্রেণির মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে পিএইচডি ফেলোশিপের যোগ্যতা নির্ধারণ পরীক্ষাও।
ভারতে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাকে ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট (এনইইটি) বা নিট বলা হয়। এই পরীক্ষার আয়োজন করে এনটিএ।
প্রতিবছর লাখ লাখ পরীক্ষার্থী মেডিকেল পরীক্ষাটিতে অংশ নেন। কিন্তু মাত্র অল্প সংখ্যকই কলেজে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় নম্বর তুলতে পারে। কিন্তু এই বছর চ্যালেঞ্জ ছিল আরও বেশি।
তবে চলতি বছরের ৪ জুন নিটের ফল ঘোষণার পর দেখা যায় চলতি বছরের পরীক্ষায় অনেক প্রার্থীই অস্বাভাবিক ভালো নম্বর পেয়েছে। এতে করে কাট মার্কস বেশি হয়ে গিয়েছে। যার ফলে ভালো নম্বর পাওয়া অনেকেরই ভর্তি প্রায় অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।
তাই নিটের প্রশ্নফাঁস ও অনিময়ের অভিযোগে ইউজিসির সব পরীক্ষা বাতিল দাবি করে ভারতজুড়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা।
তারপর থেকে প্রশ্নপত্রে ভুল থেকে শুরু করে অযাচিত গ্রেস মার্কস (ক্ষতিপূরণমূলক নম্বর) এবং জালিয়াতির কারণে পরীক্ষাটি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে একাধিক পরীক্ষা বাতিলসহ এনটিএ প্রধানকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
যদিও পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে দেশটির ফেডারেল শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান স্বীকার করে জানান, কোনো কোনো পরীক্ষা কেন্দ্রের 'কিছু অনিয়ম' সামনে এসেছে। এক্ষেত্রে মন্ত্রী বলেন, "অনিয়ম পাওয়া গেলে এনটিএ কর্মকর্তাসহ কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।"
এদিকে পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার পরপরই বিহার পুলিশ প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে। এক্ষেত্রে গত ১০ মে চার শিক্ষার্থীসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ১৫ জুন পুলিশ মামলায় জড়িত সন্দেহে আরও নয়জন পরীক্ষার্থীকে নোটিশ পাঠায়।
এক্ষেত্রে পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা মানবজিৎ সিং ধিলোন টাইমস অফ ইন্ডিয়া পত্রিকাকে জানান, ১৩ জন অভিযুক্ত কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার এক দিন আগে একটি 'সেফ হাউসে' ৩০ জন পরীক্ষার্থীর কাছে প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া, ডার্ক ওয়েবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ায় পিএইচডি ফেলোশিপের যোগ্যতা নির্ধারণী পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে এবং রোববার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকা স্নাতকোত্তর শ্রেণীর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
পরীক্ষা নিয়ে চলমান অভিযোগকে সামনে এনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের ওপর লাখ লাখ শিক্ষার্থীর 'স্বপ্নের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা' করার অভিযোগ এনেছে বিরোধীরা।
কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়গে পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং তার সরকারের ওপর কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ করেন। একইসাথে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তিনি দলের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের সম্পৃক্ততায় তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি