বিশ্বের সবচেয়ে ছোট হাতি পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে
বিশ্বের সবচেয়ে ছোট হাতির প্রজাতি 'বোর্ণিও হাতি' পুরোপুরি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। বর্তমানে এ প্রজাতির হাতির সংখ্যা মোটামুটি হাজারের মতো। তবে জীববিজ্ঞানীরা আশা করছেন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া গেলে এ প্রজাতিকে বিলুপ্ত হওয়া থেকে বাঁচানো সম্ভব।
প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন প্রথমবারের মতো এশিয়ান হাতির (এলিফাস ম্যাক্সিমাস) একটি উপ-প্রজাতি হিসেবে বোর্নিও হাতিকে রেড লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এটি বলছে, বন উজারের কারণে বোর্নিও হাতি তাদের বাসস্থানের অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে।
উল্লেখ্য, আইইউসিএন বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা প্রজাতি চিহ্নিত করে সেটিকে রেড লিস্টে অন্তর্ভূক্ত করে থাকে।
বোর্নিও হাতিকে বোর্নিয়ান এলিফ্যান্ট বা বোর্নিও পিগমি এলিফ্যান্টও বলা হয়। এসব হাতির বসবাস ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার উত্তর-পূর্ব বোর্নিওতে। এশিয়ান হাতির চেয়ে এ হাতি আকারে সাধারণত তিন ফুট ছোট হয়ে থাকে।
বোর্নিও দ্বীপে হাতির এ প্রজাতি কয়েক শ বছর ধরে বাস করছে। এসব হাতির জন্য এখন প্রধান হুমকি হলো ব্যাপক হারে বন উজাড়। এতে একদিকে যেমন প্রাণীগুলোর বাসস্থান ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে খাবারের সন্ধানে হাতিগুলো বাধ্য হয়ে লোকালয়ের কাছাকাছি চলে আসছে। ফলে মানুষের সাথে প্রাণীগুলোর সংঘাত বাড়ছে।
বিবিসির প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পাম শিল্প ব্যাপক বেড়েছে। যে কারণে বনভূমি উজার হচ্ছে। ফলে এসব হাতি তাদের বাসস্থান হারাচ্ছে। আর এ কারণেই বাধ্য হয়ে এরা খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে কিংবা এর কাছাকাছি এলাকায় আসছে। হানা দিচ্ছে ফসলি জমিতে। তখন কৃষকরা ফসল রক্ষার জন্য হাতির ওপর আক্রমণ করছে। এতে প্রায়ই হাতি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।
এছাড়াও হাতির দাঁতের জন্য এদের শিকার করা এবং কৃষি জমিতে প্রয়োগ করা কীটনাশক থেকে দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যুও প্রাণীগুলোকে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে ফেলেছে।
ওয়াইল্ডলাইফ রিকভারির জুলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের (জেডএসএল) প্রধান মাইক হফম্যান বলেন, 'মানুষ এবং এ বন্যপ্রাণীর মধ্যে সংঘাতের সাথে সাথে বাসস্থানের ক্ষতি মানুষ ও বন্যপ্রাণী উভয়ের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।'
লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়ামের অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান লিস্টার বলেন, 'শিশুদের মতো চেহারা থেকে শুরু করে ছোট আকার পর্যন্ত বিভিন্ন দিক থেকে এসব হাতি অন্য হাতিগুলোর চেয়ে অনন্য।'
তিনি বিবিসি নিউজকে বলেন, 'আমরা আশা করি যে বোর্নিও হাতিগুলোকে লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্তি তাদের সংরক্ষণ প্রচেষ্টা জোরদার করবে। কারণ, এতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখতে পাবে যে প্রজাতিটির দিকে পুরো বিশ্বেরই নজর রয়েছে।
কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির বন্যপ্রাণী বিষয়ক জীববিজ্ঞানী বেনোইট গুসেনস জানান, সংরক্ষণের মাধ্যমে এসব হাতিকে বাঁচানো যাবে বলে আশা করা যায়।
তিনি বলেন, 'আশার কথা হলো সাবাহতে (মালয়েশিয়ার একটি রাজ্য) সরকারসহ অনেক সংস্থাই হাতি সংরক্ষণের জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে।'
উল্লেখ্য, আইইউসিএন এক লাখ ৬৩ হাজারেরও বেশি প্রজাতিকে মূল্যায়ন করেছে। এর মধ্যে ৪৫ হাজার প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক