আদানির প্রতিবেদনে হিন্ডেনবার্গ বিকৃত তথ্য যুক্ত করেছিল, অভিযোগ ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার
ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড (এসইবিআই) থেকে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ-এর বিরুদ্ধে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানিকে নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনে 'অন্যায় বাণিজ্য অনুশীলন-এ' জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। হিন্ডেনবার্গ প্রতিবেদনের জন্য নিউ ইয়র্ক হেজ ফান্ডের সাথে কাজ করেছে বলে অভিযোগে জানানো হয়েছে।
২৬ জুন এসইবিআই হন্ডেনবার্গ রিসার্চকে প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর ও বিকৃত তথ্য যুক্ত করার দায়ে অভিযুক্ত করে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে। সাধারণত আনুষ্ঠানিক আইনি পদক্ষেপের আগে এরকম কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়।
হিন্ডেনবার্গ-এর ওয়েবসাইটে অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়েছে, অভিযোগগুলো 'ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিদের দুর্নীতি এবং জালিয়াতি প্রকাশকারীদের নীরব করার এবং ভয় দেখানোর একটি প্রচেষ্টা।'
কারণ দর্শানোর নোটিশ এর জবাব পাওয়ার পর ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিন্ডেনবার্গ-এর ওপর জরিমানা আরোপ করতে পারে এবং এর পুঁজিবাজারে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করতে পারে। এসইবিআই থেকে অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য হিন্ডেনবার্গকে ২১ দিনের সময় দেয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারীতে আদানির বন্দর, বিদ্যুৎ এবং অবকাঠামো ব্যবসা নিয়ে করা হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনে আদানির বিরুদ্ধে শেয়ার জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়। প্রতিবেদনের কারণে আদানির ২.৫ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় এবং আদানি গ্রুপের বাজার মূল্য ১৪০ বিলিয়ন ডলার কমে যায়। আদানি প্রতিবেদনে আসা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নাথান অ্যান্ডারসন হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ চালু করার পর থেকে এটি আর্থিক বাজারে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। অ্যান্ডারসন অংশীদারদের সাথে কাজ করার পাশাপাশি অন্যান্য হেজ ফান্ড-এর সাথে কাজ করতেন তার সংস্থার অর্থায়ন করতে।
এসইবিআই-এর নোটিশে, মার্কিন হেজ ফান্ড কিংডন ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টকে আদানি এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন তৈরিতে হিন্ডেনবার্গের অংশীদার হিসেবে বলা হয়েছে। ১৯৮৩ সালে বিনিয়োগকারী মার্ক কিংডন এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
এসইবিআই-এর ৪৬ পৃষ্ঠার নোটিশে বলা হয়েছে, হিন্ডেনবার্গ এবং কিংডনের মধ্যে সম্পর্ক ২০২২ সালের শেষের দিকে শুরু হয়েছিল যা হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনে আদানিকে অভিযুক্ত করার আগেই হয়েছে।
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ যখন ২০২৩ সালে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে তখন এটি বিশ্বব্যাপী আর্থিক সম্প্রদায়ে উল্লেখযোগ্য উত্থান ঘটায় এবং ভারতের অন্যতম ধনী ব্যক্তি আদানির ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে।
প্রতিবেদনে আদানি-র সমষ্টির বিরুদ্ধে যথাযথ হিসেব ছাড়াই আদানি-নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোর মধ্যে বিলিয়ন ডলার স্থানান্তর করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি শেয়ারহোল্ডার তালিকাভুক্তির নিয়ম এড়াতে অফশোর (বৈদেশিক) তহবিল ব্যবহারের অভিযোগও করেছে।
প্রতিবেদন প্রকাশিত হোওয়ার পর আদানি তার হারানো সম্পদের অনেকটাই পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন।
কিংডন বা হিন্ডেনবার্গ কেউই মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
হিন্ডেনবার্গ সোমবার (১ জুলাই) এসইবিআই-এর সমালোচনা করে সংস্থাটির বিরুদ্ধে আদানিকে নিয়ে তদন্তে না করার জন্য এবং একজন মার্কিন বিনিয়োগকারীর ওপর কর্তৃত্ব জাহির করার চেষ্টা করার অভিযোগ এনেছে।
হিন্ডেনবার্গ আরও দাবি করেছে, ভারতের অন্যতম বড় ব্যাংক কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাংক তাদের বিনিয়োগকারী অংশীদারদের সাথে মিলে আদানির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করার জন্য বৈদেশিক তহবিল কাঠামোকে সহজতর করেছে।
এ ব্যাপারে এসইবিআই, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাংক এবং গৌতম আদানির কাছে মন্তব্যের জন্য অনুরোধের করা হলেও তারা তাতে সাড়া দেননি।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়