কেন ইতিহাস বিষয়ে পড়াশোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে এশিয়ার তরুণ শিক্ষার্থীরা?
যারা ইতিহাস নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিতে চান, তাদের কাছে তাইওয়ানের ন্যাশনাল চেং কুং বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে। অথচ আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে আগামী বছর বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাস বিভাগে অধ্যয়নের জন্য কোন শিক্ষার্থী এবার আবেদন করেনি।
পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের জনসংখ্যার হার কমতে থাকায় সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বিভিন্ন সংকট দেখা দিয়েছে। জাপানে ১৯৯০-এর দশক থেকে ১৮ বছর বয়সীদের সংখ্যা কমছে। তাইওয়ানে গত এক দশকে স্নাতক জনসংখ্যা ২৫ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। দক্ষিন কোরিয়া যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে তাকে বিশেষজ্ঞরা 'এনরোলমেন্ট ক্লিফ' হিসেবে অভিহিত করেছেন; দেশটির শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০১০ সালের ৩.৬ মিলিয়ন থেকে গত বছর ৩ মিলিয়নে নেমে এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তি কমে আসায় এশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলোতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় অনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের মুখোমুখি হওয়ায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত এর মতো বিষয়গুলো বেছে নিচ্ছে যা উচ্চ বেতনের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেয়।
এ পরিবর্তনটি বিশেষ করে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাইওয়ানের মতো দেশগুলোতে প্রভাবে ফেলেছে যেহেতু সেখানকার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং শিক্ষকরা টিউশন ফি-এর ওপর খুব বেশি নির্ভর করে৷ টিকে থাকার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের পছন্দের সাথে বিভিন্ন কোর্স-এর সামঞ্জস্য রাখার চেষ্টা করছে। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ কোরিয়ায় জনসংখ্যা হ্রাস এবং অর্থনৈতিক চাপের ফলে ২০০০ সাল থেকে ১৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সরকার বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত এর মতো বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে৷ তাইওয়ানে সেমিকন্ডাক্টর সেক্টর এবং অন্যান্য উচ্চ-প্রযুক্তি শিল্পে তরুণদের প্রস্তুত করার জন্য বিশেষভাবে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একইভাবে, জাপানে গত দুই বছরে ডিজিটাল এবং গ্রিন (সবুজ) প্রযুক্তিতে দক্ষতা বিকাশের লক্ষ্যে ১২৬টি প্রতিষ্ঠান সরকারি ভর্তুকির জন্য আবেদন করেছে। এই উদ্যোগগুলো উদীয়মান প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ দক্ষতার লালনপালনের ওপর এ অঞ্চলের যে কৌশলগত দৃষ্টি রয়েছে তারই প্রতিফলন।
পূর্ব এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়াতে সক্ষম হয়েছে, যদিও এটি স্থানীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে আসার মতো সংকটকে পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত নয়। স্থানীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগ্রহ তৈরি এক্ষেত্রে ইতিবাচক ফলাফল দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, জাপানে নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি ২০১২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যাকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করেছে৷
সিঙ্গাপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে আসলেও বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগের কারণে এখনো অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছে। সিঙ্গাপুর সরকার বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত এর মতো বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিলেও দেশের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণে সামাজিক বিজ্ঞান এবং মানবিক বিষয়গুলোর গুরুত্বও স্বীকার করে। ফলস্বরূপ, এ বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাড়ছে।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়