লোগো ডিজাইনারকে প্রথমে মাত্র ৩৫ ডলার দিলেও পরে শেয়ার ও আংটি দিয়েছে নাইকি
বিখ্যাত স্পোর্টসওয়্যার ব্র্যান্ড নাইকি তাদের সুপরিচিত 'সুশ' নামক লোগোটির ডিজাইনারকে নাকি মাত্র ৩৫ ডলার পারিশ্রমিক দিয়েছিল– ইন্টারনেটে প্রায়ই এমন দাবি দেখা যায়। তবে এটি সঠিক নয়।
লোগোটির ডিজাইন করেছিলেন ক্যারোলিন ডেভিডসন, সেসময় তিনি ছিলেন গ্রাফিক্স ডিজাইনের একজন শিক্ষার্থী। তার থেকে ১৯৭১ সালে এটি কিনে নেয় নাইকি। ২০১৬ সালে ক্রীড়া সাংবাদিক ড্যারেন রোভেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্যারোলিন বলেছিলেন, "নাইকি শুধু আমাকে ওইটুকুই (৩৫ ডলার) পারিশ্রমিক দেয়নি।… প্রথমত তাঁরা আমাকে ক্যারিয়ার শুরুর সুযোগ দেয়। (এই কাজের মাধ্যমে) আমি ডিজাইনের দুনিয়া সম্পর্কে জানতে-বুঝতে শিখি। এই কাজের জন্য আমি অনেক সুপারিশ পাই, এবং 'লোগো লেডি' হিসেবে পরিচিত লাভ করেছি।"
এছাড়া, ১৯৮৩ সালে সুশ লোগোর আদলে গড়া একটি আংটি তাঁকে উপহার দেন নাইকির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট বব উডেল। আংটিতে ছিল একটি মূল্যবান হীরা। সঙ্গে কোম্পানির কিছুসংখ্যক শেয়ারও তাঁকে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ক্যারোলিন।
এই প্রেক্ষাপটে, নাইকির মতো সুপ্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের লোগো ডিজাইন করে ক্যারোলিন মাত্র ৩৫ ডলার পেয়েছেন বলে যেসব অনলাইন পোস্টে দাবি করা হয়েছে– সেগুলো আদতে পুরো বিষয়টি তুলে ধরেনি।
ক্যারোলিন ডেভিডসনকে লোগো ডিজাইনের কাজ দিয়েছিলেন নাইকির আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা ফিলিপ হ্যাম্পসন নাইট। ফেসবুকের এক পোস্টে নাইটের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি ক্যারোলিনকে ঠকিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যম 'এক্স' (সাবেক টুইটার) এ-ও পরবর্তীতে এই দাবি করেন অনেকে।
এসব পোস্টদাতা বিষয়টির সঠিকভাবে না জেনেই মন্তব্য করেছেন। কারণ, ২০২২ সালে অরিগনিয়ান পত্রিকার ইউটিউবে আপলোড করা একটি ভিডিওতে ক্যারোলিন ডেভিডসনকে নাইকির নির্বাহীদের হাত থেকে নানান উপহার নিতে দেখা গেছে। ভিডিওটি ছিল ১৯৮৩ সনের। যখন ক্যারোলিনকে নাইকির শেয়ারও দেওয়া হয়েছিল। তবে প্রদত্ত শেয়ারের সংখ্যা সম্পর্কে সেসময় খোলাসা করা হয়নি।
ওই বছর নাইকির সদর দপ্তরে ক্যারোলিনের সম্মানে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অরিগনিয়ান পত্রিকার সাংবাদিক অ্যালান ব্রেটম্যান ক্যারোলিনের একটি সাক্ষাৎকারও নেন। এসময় ক্যারোলিনও তাঁকে দেওয়া শেয়ারের সংখ্যা প্রকাশ করেননি। তবে ২০১১ সালে নিজের লেখা প্রতিবেদনে ব্রেটম্যান – নাইকির সহপ্রতিষ্ঠাতা ফিলিপ হ্যাম্পসন নাইটকে উদ্ধৃত করেন, যিনি ২০১০ সালে নাইকির শেয়ারহোল্ডারদের এক সভায় ক্যারোলিনকে ৫০০টি শেয়ার দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।
১৯৮৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর নাইকির প্রতি শেয়ারের দাম ছিল ২৫ সেন্ট। ফলে ওই ৫০০ শেয়ারের দাম ছিল তখন ১২৫ ডলার।
২০১৬ সালে রোভেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডেভিসন বলেন, 'মূল স্টকের একটি শেয়ারও আমি ক্যাশ করিনি। তবে মূল শেয়ার অনেকবারই ভাগ হয়ে সংখ্যায় বেড়েছে, আমি সেগুলো বিক্রি করেছি।'
নাইকির ওয়েবসাইটের তথ্যের বরাত দিয়ে গত বছরের ৩০ জুনের প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত নাইকির স্টক যতভাব ভাগ হয়ে সংখ্যায় বেড়েছে, তাতে ডেভিডসনের ওই ৫০০ শেয়ার এখন বেড়ে ৩২ হাজার হয়ে গেছে।
এদিকে ২০২৪ সালের ৫ জুলাই নাইকির প্রতি শেয়ারের দাম ছিল ৭৫ ডলারের কিছু বেশি। সেই হিসাবে ৩২ হাজার শেয়ারের বর্তমান মূল্য দাঁড়ায় ২৪ লাখ ডলারের কিছু বেশি।
অনুবাদ: নূর মাজিদ