সংরক্ষিত আসন নিয়ে আইনি লড়াইয়ে ইমরান খানের পিটিআই-এর বড় জয়
পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে সংরক্ষিত আসনের ভাগাভাগি নিয়ে আইনি লড়াইয়ে সুপ্রিম কোর্টে বড় জয় পেয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। সংরক্ষিত আসনের জন্য পিটিআইকে যোগ্য বলে রায় দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।
শুক্রবার (১২ জুলাই) ১৩ সদস্যের একটি বেঞ্চ পিটিআইয়ের পক্ষে এই রায় দেয়; পক্ষে ছিলেন আটজন বিচারক এবং বিপক্ষে ছিলেন পাঁচজন। এই রায়কে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল (এসআইসি) নামে একটি রাজনৈতিক দল মামলাটি দায়ের করেছিল। দলটির সদস্যরা পিটিআই—এর সমর্থন নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
পিটিআই-এর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) দলটির নিজস্ব প্রতীক (একটি ক্রিকেট ব্যাট) ব্যবহার করে সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।
এর ফলে পিটিআই প্রার্থীদের স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছিল। কিন্তু দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জাতীয় পরিষদে ৯৩টি আসনে বিজয়ী হয়, অন্য যেকোনো দলের চেয়ে বেশি। পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) ৭৫টি আসন নিয়ে দ্বিতীয় এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪টি আসন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে ছিল।
ইমরান খান পিএমএলএন এবং পিপিপি-র সাথে জোট গঠনে অস্বীকৃতি জানানোর পর উভয় দলই অন্যান্য ছোট দলের সাথে মিলে একটি জোট সরকার গঠনে সম্মত হয়।
পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী, জাতীয় পরিষদের ২৬৬টি আসনে সরাসরি ভোট হয় এবং ৭০টি আসন সংরক্ষিত থাকে। সংরক্ষিত আসনের মধ্যে ৬০টি নারী আসন এবং ১০টি আসন সংখ্যালঘুদের জন্য বরাদ্দ থাকে। নির্বাচন শেষে এসব আসন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তাদের নির্বাচনী ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ভাগ করে দেয়া হয়।
নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন জোট সরকারের দলগুলোর মধ্যে সংরক্ষিত আসন ভাগাভাগি করে দেয়া হলেও পিটিআইকে কোন আসন দেয়নি পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, সংরক্ষিত আসনগুলো শুধু রাজনৈতিক দলের জন্য নির্ধারিত এবং পিটিআই কোন রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
শুক্রবার, সুপ্রিম কোর্ট পিটিআইকে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং জানিয়েছে, নির্বাচনী প্রতীক না থাকা দলের প্রার্থী দেওয়ার আইনি অধিকারকে প্রভাবিত করে না।
রায়ে বলা হয়েছে, "পিটিআই একটি রাজনৈতিক দল এবং এটি ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে সাধারণ আসন লাভ করেছে।"
আদালত পিটিআইকে দুই সপ্তাহের মধ্যে সংরক্ষিত আসনের নামের তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থী যারা এসআইসি-তে যোগদান করেছেন তাদেরও একই সময়সীমার মধ্যে তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ঘোষণা করে হলফনামা জমা দিতে হবে।
বর্তমানে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দল সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের ৮৬টি আসন রয়েছে। এ রায়ের পর জাতীয় পরিষদে দলটি আরও ২০টির বেশি সংরক্ষিত আসন পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে পিটিআই নেতা গহর আলি খান এটিকে আইনের বিজয় বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, "ইতিহাস এ রায়কে মনে রাখবে। এটি পাকিস্তানের গণতন্ত্রের জন্য বড় বিজয় এবং আমাদের দলের অধিকারকে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করবে।"
সাংবিধানিক আইনজীবী রিদা হোসেন আদালতের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে ইসিপির কর্মক্ষমতার সমালোচনা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, "ইসিপি পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে কাজ করেছে এবং স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হতে ব্যর্থ হয়েছে যা পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ক্ষতি করছে।"
নির্বাচনী আইন বিশেষজ্ঞ আকরাম খুররমও ইসিপির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, "সমস্ত বিচারক সম্মত হয়েছেন যে ইসিপি পিটিআইয়ের নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভুল ব্যাখ্যা করেছে। এর ফলে সৃষ্টি হওয়া রাজনৈতিক সংকট এবং আইনি সমস্যার জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায় নিতে হবে।"
তবে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা নির্বাচনে যেকোনো ধরনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।