পিটিআই-এর সকল কর্মসূচি স্থগিত, ডি-চকে নেই বুশরা বিবি ও মুখ্যমন্ত্রী গান্দাপুর
তিন দিন ধরে চলমান প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ, আজ বুধবার (২৭ নভেম্বর) সমাপ্তির ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের 'নিরপরাধ নাগরিকদের রক্তপাত ঘটানোর পরিকল্পনার' প্রেক্ষিতেই সকল কর্মসূচি স্থগিত করেছে তারা।
এই ঘোষণা আসে যখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে ইসলামাবাদের রেড জোন থেকে পিটিআই কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গান্দাপুর ও পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি একই গাড়িতে করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
পিটিআইয়ের কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, 'সরকারের নির্মমতা এবং ফেডারেল রাজধানীকে নিরস্ত্র নাগরিকদের জন্য হত্যাকাণ্ডে পরিণত করার পরিকল্পনার কারণে আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দিচ্ছি।'
পিটিআই জানায়, সরকারি নির্মমতার বিস্তারিত বিশ্লেষণ দলীয় রাজনৈতিক ও কোর কমিটি করবে। পরবর্তী সময়ে এসব তথ্য ইমরান খানের কাছে তুলে ধরা হবে। দলের মুখপাত্রের মতে, এখন পর্যন্ত আটজন শহিদের তালিকা পাওয়া গেছে।
শহিদদের মধ্যে রয়েছেন আনিস শহজাদ সত্তি, মালিক মুবিন আওরঙ্গজেব, আব্দুল কাদির, মালিক সফদার আলী, আহমেদ ওয়ালি, মোহাম্মদ ইলিয়াস, ও আব্দুল রশিদ।
খাইবার পাখতুনখোয়া সরকারের মুখপাত্র ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আলি সাইফ দাবি করেছেন যে, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান চলমান প্রতিবাদ কর্মসূচি ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে সরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছিলেন, তবে তার স্ত্রী বুশরা বিবি এতে আপত্তি জানান।
পিটিআই নেতা শের আফজাল মারওয়াত জিও নিউজকে জানান, তিনি ও আলি আমিন গান্দাপুর পিটিআই মিছিলকে ডি-চকে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন না। মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন কর্মীরা কুলসুম হাসপাতালের সীমানা অতিক্রম না করেন।
যখন পিটিআই মিছিল রেড জোনে প্রবেশ করে, তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (এলইএ) অভিযান শুরু করে এবং ইসলামাবাদের ডি-চক থেকে বিক্ষোভকারীদের পিছু হটিয়ে দেয়।
নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অভিযানের পর বিক্ষোভকারীরা স্থানটি ত্যাগ করে। এ সময় বুশরা বিবি ও খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গান্দাপুর একটি গাড়িতে চেপে প্রতিবাদস্থল থেকে সরে যান।
সূত্র জানিয়েছে, ইসলামাবাদ পুলিশের সদস্যরা তাদের পিছু নেয় এবং তাদের দেহরক্ষীদের আটক করে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, তারা নিরাপদে খাইবার পাখতুনখোয়ায় পৌঁছেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নকভি ডি-চকে গণমাধ্যমকে জানান, পিটিআই বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পর বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীতে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে।
তিনি বলেন, 'আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে স্কুল খুলে যাবে। আজ (বুধবার) সকালেই মোবাইল ইন্টারনেট সেবা পুনরায় চালু করা হবে।'
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ও জনসংযোগ বিষয়ক উপদেষ্টা রানা সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, ইসলামাবাদে পিটিআই আয়োজিত বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় ৫৫০ জনকে আটক করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পিএমএল-এন নেতা জানান, বিক্ষোভে প্রাণহানির ঘটনায় আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। পাশাপাশি, বিক্ষোভ চলাকালে সাবেক শাসক দলের কর্মীদের দ্বারা সম্পত্তি ধ্বংসের ঘটনাতেও মামলা করা হবে।
বিক্ষোভকারীরা পুনরায় একত্রিত হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সানাউল্লাহ জানান, প্রতিবাদকারীরা আবারও জড়ো হতে পারে। তবে তিনি আশ্বস্ত করেন, ইসলামাবাদ প্রশাসন তাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের জন্য একটি নির্ধারিত স্থান বরাদ্দ করবে। তিনি বলেন, 'শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার।'
তবে সংবেদনশীল এলাকায় প্রবেশের ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সানাউল্লাহ স্পষ্ট করেন, 'যদি তারা রেড জোনে প্রবেশের চেষ্টা করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।' তিনি আরও জানান, প্রতিবাদের অনুমতি শুধুমাত্র সীমাবদ্ধ এলাকার বাইরে দেওয়া হবে।