চাঁদে আবিষ্কার হলো গুহা, হতে পারে মানুষের বসতি স্থাপনের উপযুক্ত স্থান
এই প্রথমবারের মতো চাঁদে একটি গুহা আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, অন্তত ১০০ মিটার গভীর এই গুহা মানুষের স্থায়ী 'বেজ' নির্মাণের জন্য আদর্শ জায়গা হতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, চাঁদে এ গুহার মতো আরও শত শত 'ভূগর্ভস্থ, অনাবিষ্কৃত দুনিয়া' থাকতে পারে।
চাঁদে স্থায়ী মানবসতি গড়ে তুলতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছে কয়েকটি দেশ। তবে এ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য প্রথমে নভোচারীদের রেডিয়েশন (বিকিরণ), তীব্র তাপমাত্রা ও মহাকাশের আবহাওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে।
প্রথম ব্রিটিশ নভোচারী হেলেন শারম্যান বিবিসিকে বলেন, নতুন পাওয়া গুহাটিকে বেজ তৈরির জন্য ভালো জায়গা মনে হচ্ছে। চাঁদের এসব গর্তে মানুষ হয়তো ২০-৩০ বছর থাকতে পারবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে এ গুহা অনেক বেশি গভীর। নভোচারীদের বিশেষ ব্যবস্থায় এ গুহায় নামতে এবং 'জেট প্যাক বা লিফট' দিয়ে গুহা থেকে বেরোতে হতে পারে বলে উল্লেখ করেন এই নভোচারী।
চাঁদের মারে ট্রাঙ্কুইলিয়াটাটিস নামক জায়গায় রাডার ব্যবহার করে এই গুহার খোঁজ পেয়েছেন ইতালির ইউনিভার্সিটি অভ ট্রেন্টো-র গবেষক লরেঞ্জো ব্রাজোন ও লিওনার্দো ক্যারার।
গুহাটি পৃথিবী থেকে খালি চোখেই দেখা যায়। ১৯৬৯ সালে এর পাশেই অবতরণ করেছিল অ্যাপোলো ১১।
গুহাটি খাড়াভাবে নিচে নেমে গেছে। এর মেঝে ঢালু, নিচে আরও অনেকদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।
মিলিয়ন বা বিলিয়ন বিলিয়ন বছর আগে চাঁদে লাভা প্রবাহিত হওয়ার সময় এ গুহা তৈরি হয়।
অধ্যাপক ক্যারার বলেন, পৃথিবীতে এর কাছাকাছি গুহা হচ্ছে স্পেনের লানজারটের আগ্নেয়গিরির গুহাগুলো। কাজের অংশ হিসেবে তারা ওইসব গুহা পরিদর্শন করেছেন।
ক্যারার বলেন, 'পৃথিবীতেও জীবন শুরু হয়েছিল গুহার মধ্যেই। কাজেই চাঁদের গুহাতেও হয়তো মানুষ থাকতে পারবে।'
গুহাটি এখনও পুরোপুরি খতিয়ে দেখা হয়নি। তবে গবেষকরা আশা করছেন, ভু-অভ্যন্তরে প্রবেশে সক্ষম রাডার, ক্যামেরা বা রোবট গুহাটি পরিপূর্ণ চিত্র তুলে আনতে পারবে।
প্রায় ৫০ বছর আগে প্রথম বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছিলেন, চাঁদে গুহা থাকতে পারে। তারপর ২০১০ সালের এক মিশনে একটি ক্যামেরা কিছু গর্তের ছবি তুলে আনে, যেগুলো গুহার প্রবেশমুখ হতে পারে বলে ধারণা করেন বিজ্ঞানীরা।
তবে ওইসব গুহা কতটা গভীর বা সেগুলো ধসে পড়বে কি না, তা জানতেন না গবেষকরা।
অধ্যাপক ব্রাজোন ও অধ্যাপক ক্যারারের কাজ এখন ওই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে, যদিও গুহাটি সম্পর্কে পুরোপুরি জানার জন্য আরও অনেক কাজ করতে হবে।
তাদের গবেষণা বিজ্ঞান জার্নাল 'নেচার অ্যাস্ট্রোনমি'তে প্রকাশিত হয়েছে।