৪২ ঘণ্টা লিফটে আটকা ছিলেন, ভেবেছিলেন হয়ত মারা যাবেন
ভারতের কেরালার ৫৯ বছর বয়সী রবীন্দ্র নায়ার একটি হাসপাতালের লিফটে ৪২ ঘণ্টা আটকা ছিলেন।
গত শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে কেরালার তিরুবনন্তপুরমের সরকারি মেডিকেল কলেজে ডাক্তার দেখাতে এসে তিনি লিফটে আটকা পরেন এবং সোমবার (১৫ জুলাই) সকাল পর্যন্ত সেখানে আটকে থাকেন তিনি।
সোমবার সকালে একজন লিফট অপারেটর তাকে খুঁজে পাওয়ার পর তিনি উদ্ধার পান। বর্তমানে তিনি ডিহাইড্রেশন এবং পিঠের ব্যথার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঘটনাটি খবরের শিরোনাম হওয়ার পর রাজ্য সরকার হাসপাতালের তিনজন টেকনিশিয়ানকে বরখাস্ত করেছে এবং এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। তিরুবনন্তপুরমের সরকারি মেডিকেল কলেজের কর্মকর্তারা এবং রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নায়ারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
৪২ ঘণ্টা খাবার ও পানি ছাড়া লিফটে আটকে থাকা রবীন্দ্র নায়ার বিবিসিকে বলেছেন, তার মনে হয়েছিল তিনি হয়ত মারা যাবেন।
তিনি বলেন, তিনি আটকা পড়ার পর লিফটের তালিকাভুক্ত জরুরি নম্বরে করলেও কোন সাড়া পাননি। তিনি তার স্ত্রী শ্রীলেখা সিপি ঐ হাসপাতালে কাজ করেন। কিন্তু তিনি তাকে কল দিয়ে সংযোগ পাননি।
নায়ার বলেন, "আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম এবং মনোযোগ আকর্ষণের জন্য লিফটের দরজায় আঘাত করতে লাগলাম। তখনই আমার ফোন মেঝেতে পড়ে গেল এবং কাজ করা বন্ধ করে দিল।"
"আমি চিৎকার করে সাহায্য চাইলাম এবং আমার হাত দিয়ে দরজাগুলো টেনে বের হওয়ার চেষ্টা করলাম। লিফটের ভেতরে অন্ধকার থাকলেও সৌভাগ্যক্রমে শ্বাস নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত বাতাস ছিল।"
লিফটের জরুরি বেল বারবার চাপবার পরেও তিনি কোন সাহায্য পাননি।
তিনি বলেন, "ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে, আমি বুঝতে পারছিলাম না এটা দিন নাকি রাত কারণ ভিতরে অন্ধকার। যখন আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি, তখন আমি এক কোণে শুয়ে পড়ি। আমাকে প্রস্রাব ও মলত্যাগ করার জন্য অন্য কোনা ব্যবহার করতে হয়েছিল।"
শুরুতে তার পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলে তিনি হয়ত কাজে গেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার কোন খোঁজ না পাওয়ায় পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেন এবং তার সন্ধান করা শুরু করেন।
কয়েক মাস আগে থেকে পিঠে ব্যথার কারণে নায়ার নিয়মিত হাসপাতালে যেতে শুরু করেন। শনিবার ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর তিনি রক্ত পরীক্ষার ফলাফল বাড়িতে ভুলে রেখে আসায় সেটি আবার আনতে যান।
সাধারণত হাস্পাতালের কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দকৃত একটি লিফট ব্যবহার করলেও সেদিন নায়ার রোগী এবং ভিজিটরদের লিফ্ট ব্যবহার করেন। কিন্তু লিফটের বাটন চেপে ওপরে যাওয়ার সময় সেট হঠাট একতালা ও দোতলার মাঝে আটকে পরে।
পরবর্তীতে ৪২ ঘণ্টা পর সোমবার সকালে তাকে উদ্ধার করা হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রীকে ফোন করা হয়।
হাসপাতালটি কর্তৃপক্ষ লিফটের বাইরে একটি সতর্কতা জারি করেছেন যাতে মেরামত চলাকালিন সময়ে লিফটটি কেউ ব্যবহার না করেন