মিলেনিয়াল ও জেন এক্স-এর মধ্যে ক্যানসারে আক্রান্তের হার বেড়েছে: গবেষণা
একটি নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, 'বুমারস' প্রজন্মের তুলনায় মিলেনিয়াল ও এক্স প্রজন্মের মধ্যে প্রায় ২০ ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে। গবেষকরা মনে করছেন, স্থূলতা বৃদ্ধি ও অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া তরুণ প্রজন্মের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ার অন্যতম কারণ।
সমাজ বিজ্ঞানের গবেষকরা বর্তমানে বিভিন্ন প্রজন্মকে কাজের সুবিধার্থে বিভিন্ন নামে বিভক্ত করেছেন। এর মধ্যে ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪ সালে জন্মগ্রহণকারীদের বেবি বুমারস, ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সালে জন্মগ্রহণকারীদের মিলেনিয়াল এবং ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালে জন্মগ্রহণকারীদের জেন এক্স বলে থাকেন।
২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে যাদের বয়স ২৫ থেকে ৮৪ ছিল, তাদের ওপর এ গবেষণা করা হয়। এতে দেখা গেছে, প্রায় ২৩.৬ মিলিয়ন মানুষ ৩৪ ধরনের ক্যানসারে ভুগছেন। এর মধ্যে প্রায় ৭.৪ মিলিয়ন মার্কিনী ২০ ধরনের ক্যানসারে ভুগে মারা গেছেন।
সম্প্রতি মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেট-এ প্রকাশিত আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির এ গবেষণায় বলা হয়, জেন এক্স ও মিলেনিয়ালদের মধ্যে বেবি বুমারসদের তুলনায় ১৭ ধরনের ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
তবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেশিরভাগ ধরনের ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার কম বা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। তরুণ প্রজন্ম জরায়ু (শুধু নারীদের মধ্যে), যকৃত, পিত্তথলি, টেস্টিকুলার ও কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।
এর মধ্যে ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের হার বুমারস প্রজন্মের তুলনায় মিলেনিয়াল প্রজন্মের মধ্যে ১২ শতাংশ বেশি। আবার জরায়ু ক্যানসারের হার বুমারস প্রজন্মের তুলনায় সহস্রাব্দ প্রজন্মের মধ্যে ১৬৯ শতাংশ বেশি।
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যে ১৭টি ক্যানসার বেড়েছে, তার মধ্যে রয়েছে কোলোরেক্টাল, জরায়ু কর্পাস, গলব্লাডার, কিডনি, অগ্ন্যাশয়, মাইলোমা, লিউকেমিয়া, টেস্টিকুলার, ইস্ট্রোজেন রিসেপ্টর পজিটিভ স্তন ক্যানসার, ছোট অন্ত্র, ডিম্বাশয়, মহিলা লিভার, মহিলা নন-এইচপিভি-সংক্রান্ত মুখ ও গলা, পুরুষ মলদ্বার, পুরুষ কাপোসি সারকোমা ও গ্যাস্ট্রিক কার্ডিয়া এবং নন-গ্যাস্ট্রিক কার্ডিয়া পাকস্থলীর ক্যানসার।
গবেষণা অনুসারে, বুমারদের তুলনায় মিলেনিয়াল প্রজন্মের থাইরয়েড, অগ্ন্যাশয়, ছোট অন্ত্র, কিডনি এবং রেনাল পেলভিস ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা দুই থেকে তিনগুণ বেশি। আর বাকিদের তুলনায় এক্স প্রজন্মের মধ্যে নন-এইচপিভি-সংক্রান্ত মুখ ও গলার ক্যানসারের হার সবচেয়ে বেশি।
গবেষকরা বলছেন, আগের প্রজন্মের তুলনায় নতুন প্রজন্ত ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান কার্সিনোজেনের সংস্পর্শে বেশি আসছে। আর ১৭ ধরনের ক্যানসারের মধ্যে স্থূলতা-সংক্রান্ত ক্যানসারই ১০টি। তাই গবেষকরা মনে করছেন, স্থূলতা বৃদ্ধির কারণেও ক্যানসারে আক্রান্তের হার বেড়েছে।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অভ মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, এমন অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষ স্থূলতার শিকার হবে।
ল্যানসেট গবেষকদের মতে, তরুণ প্রজন্মের খাবারের জন্য অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের পরিবর্তনের কারণে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে।
এছাড়া বেশ কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং অ্যান্টিবায়োটিকের উচ্চ ব্যবহারও ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়িয়ে দিচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিনীদের মধ্যে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের ব্যবহার ২০০১ সাল থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
এদিকে জরায়ুর ক্যানসার মিলেনিয়াল ও জেন এক্স, বিশেষ করে মিলেনিয়াল প্রজন্মের নারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। গবেষকদের মতে, এইচপিভি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার কারণে এটি কমেছে। ২০০৬ সালে এ টিকা নয় থেকে ২৬ বছর বয়সি নারীদের ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়অ হয়। অপর দিকে পাঁচ বছর আগে এ টিকা ব্যবহারের অনুমোদন পান পুরুষরা। শুরুতে টিকাটি শুধু নারীদের ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হলেও পরে দেখা যায়, এ টিকা থেকে পুরুষরাও উপকৃত হচ্ছেন।
ল্যানসেট গবেষণার জেষ্ঠ্য লেখক এবং আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির নজরদারি ও স্বাস্থ্য ইক্যুইটি বিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. আহমেদিন জামাল এক বিবৃতিতে বলেন, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ক্যানসারে আক্রান্তের হার বৃদ্ধির কারণে একটি প্রজন্ম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এবং এ ঝুঁকি ভবিষ্যতে দেশগুলোর জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে।