১৫ বছরের কম বয়সি শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধের কথা ভাবছে ফ্রান্স
১৫ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের স্কুলে মোবাইল ফোনের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে ট্রায়াল শুরু করেছে ফ্রান্স। এক্ষেত্রে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জানুয়ারি মাস থেকে দেশব্যাপী স্কুলগুলোতে এমন উদ্যোগ চালু করা হতে পারে।
মাত্র ২০০টির কম সেকেন্ডারি স্কুলে ট্রায়ালটি শুরু হচ্ছে; যার অংশ হিসেবে অল্পবয়সী শিক্ষার্থীদের স্কুল রিসেপশনে ফোন জমা দিতে হবে। এদিকে দেশটিতে ২০১৮ সালের একটি আইন রয়েছে যেখানে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি শিক্ষার্থীদের স্কুল প্রাঙ্গনে ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা অবশ্য নিজেদের কাছে সেই ফোন রাখতে পারবেন।
ফ্রান্স সরকারের পক্ষ থেকে ট্রায়াল চালুর বিষয়টি গত মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয়। উদ্যোগটি সম্পর্কে ফ্রান্সের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষামন্ত্রী নিকোল বেলুবেট বলেন, "এক্ষেত্রে মূল উদ্দেশ্য তরুণ প্রজন্মকে 'ডিজিটাল বিরতি' প্রদান করা। ট্রায়ালটি সফল হলে আগামী জানুয়ারি মাস থেকে এটি সকল স্কুলে শুরু হবে।"
দেশটির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ কর্তৃক গঠিত কমিশন মোবাইল ফোন ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, শিশুদের স্ক্রিনে অতিরিক্ত এক্সপোজার তাদের স্বাস্থ্য ও বিকাশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
মার্চে প্রকাশিত ১৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্টে বলা হয়, ঘুমের ওপর ডিজিটাল ডিভাইসের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এছাড়াও কায়িক শ্রমের অভাব, অতিরিক্ত ওজন ও স্থূল হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। একইসাথে দৃষ্টিশক্তির ওপরও বেশ নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
সেখানে বলা হয়, ফোন ও অন্যান্য ডিজিটাল প্রযুক্তির অতি ব্যবহার শুধু শিশুদের জন্যই খারাপ নয়। বরং তা সমাজ ও সভ্যতার জন্যও নেতিবাচক।
প্রতিবেদনে শিশুদের মোবাইল ফোনের ব্যবহার পর্যায়ক্রমে নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করা হয়েছে। কমপক্ষে ১১ বছর বয়সের আগে কোনো শিশুকে মোবাইল ফোন না দেওয়া, ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস ছাড়া মোবাইল দেওয়া এবং ১৫ বছর বয়সের আগে সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া ইন্টারনেটসহ ফোন দেওয়ার বিষয়টি বলা হয়েছে।
রিপোর্টে তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের একেবারেই ডিজিটাল ডিভাইসের সংস্পর্শে আসা উচিত নয় বলে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যা শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য অন্তরায় বলে অভিহিত করা হয়েছে।
কমিশনের সদস্য নিউরোলজিস্ট ও নিউরোফিজিওলজিস্ট সার্ভেন মাউটন বলেন, "আমাদের অবশ্যই ডিজিটাল টুলকে যথাযথ জায়গায় ব্যবহার করতে হবে। কমপক্ষে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর বিকাশের জন্য ডিজিটাল ডিভাইসের প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের আমাদের ফের শেখাতে হবে যে, শিশুদের সাথে কীভাবে আচরণ করতে হবে।"
স্কুলে ফোন নিষিদ্ধ করা নিয়ে ইউরোপ জুড়ে বহুদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। যেসব দেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেখানে এটি প্রায়শই ব্যবহার করা হচ্ছে।
জার্মানিতে স্কুলে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে কোনো আনুষ্ঠানিক বিধিনিষেধ নেই। তবে বেশিরভাগ স্কুল শিক্ষামূলক কাজ ছাড়া ক্লাসরুমে মোবাইল ফোন ও ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে৷
চলতি বছরের শুরু থেকে ডাচ সেকেন্ডারি স্কুলের ক্লাসরুমে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে এটির আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। একইভাবে দেশটির প্রাইমারি স্কুলেও একই নির্দেশনা কার্যকর হবে।
এদিকে স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য মোবাইল ফোনের ওপর নিষেধাজ্ঞার দিক থেকে ইতালি বেশ এগিয়ে। দেশটি ২০০৭ সালেই এই নিয়ম চালু করে ২০১৭ সালে তা রহিত করে। ২০২২ সাথে সেটি ফের প্রয়োগ করা হয়। এটি স্কুল পর্যায়ের সকল শিক্ষার্থীদের জন্যই প্রযোজ্য হবে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্যে স্কুল চলাকালীন শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে সেক্ষেত্রে এটি বাস্তবায়নের পলিসি প্রধান শিক্ষকদের ওপর ন্যস্ত করা হয়।
পর্তুগাল প্রতি মাসে স্কুলগুলিতে বেশ কয়েকটি ফোনবিহীন দিন চালু করে বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা করছে। এদিকে স্পেনের কিছু স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের স্কুলে ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে দেশব্যাপী সার্বিকভাবে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান