যুক্তরাজ্যের ওপর ব্রেক্সিটের প্রভাব ‘ক্রমেই খারাপ হচ্ছে’, ইইউতে কমছে রপ্তানি
ব্রেক্সিট-পরবর্তী প্রশাসনিক জটিলতা ব্রিটিশ ব্যবসায় প্রভাব ফেলেছে। ফলে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে পণ্য বাণিজ্য কমে গেছে এবং পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
বার্মিংহামের অ্যাস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুলের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। এ প্রতিবেদনে ব্রেক্সিট চুক্তি স্বাক্ষরের তিন বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইইউতে যুক্তরাজ্যের পণ্য রপ্তানির বাজারমূল্য ২৭ শতাংশ এবং আমদানির বাজারমূল্য ৩২ শতাংশ কমেছে।
তবে তামাক, রেলওয়ে ও বিমান-সংক্রান্ত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যুক্তরাজ্যের পণ্য রপ্তানির বৈচিত্র্যও কমে গেছে। কারণ ১ হাজার ৬৪৫ ধরনের ব্রিটিশ পণ্য এখন আর কোনো ইউরোপীয় দেশেই রপ্তানি হচ্ছে না।
তবে প্রতিবেদনটিতে ব্রিটিশ সেবা খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি; এ খাতটি ব্রেক্সিটের পর অনেক বিশেষজ্ঞের প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করেছে।
প্রতিবেদনের লেখকরা বলেছেন, ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যে "উল্লেখযোগ্য অবনতি" হয়েছে। তারা আরও যোগ করেন, "[বাণিজ্য চুক্তির] নেতিবাচক প্রভাব সময়ের সাথে তীব্র হয়েছে এবং ২০২৩ সালে আগের বছরগুলোর তুলনায় বাণিজ্যের পতন আরও স্পষ্ট হয়েছে।"
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শিল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষি, পোশাক প্রস্তুতকারক এবং কাঠ ও কাগজ প্রস্তুতকারকরা। অনেক উপ-খাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানির মূল্য অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে।
রপ্তানিমূল্যের সবচেয়ে বড় পতন ঘটেছে ভোজ্য ফল ও বাদামে, যা ৭৩.৫ শতাংশ কমেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছোট ও দূরবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বড় ও নিকটবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রতিবেদনের লেখকরা বলেছেন, ব্রেক্সিট-পরবর্তী বিভিন্ন প্রশাসনিক জটিলতা বা অশুল্ক বাধার কারণে অনেক ক্ষুদ্র ব্রিটিশ উৎপাদনকারী ইইউয়ের কিছু দেশে অল্প পরিমাণে পণ্য রপ্তানি করা ছেড়ে দিয়েছেন।
একজন সরকারি মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, ব্রিটিশ সরকার "ইইউর সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক উন্নত করার এবং অপ্রয়োজনীয় বাণিজ্য বাধা দূর করার জন্য কাজ করবে। তবে একক বাজার, কাস্টমস ইউনিয়ন বা চলাচলের স্বাধীনতায় ফিরে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।"
বিবিসি জানায়, সাম্প্রতিক বৈঠকে ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের ইইউর সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যেখানে অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তবে নতুন ইউরোপীয় কমিশন স্থিতিশীল হওয়া এবং যুক্তরাজ্য নিজেও তার নতুন শিল্প ও বাণিজ্য কৌশল সম্পন্ন করার আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে অগ্রগতি হবে না, সম্ভবত আগামী বছর পর্যন্ত না।