মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে হুমকির মুখে চীনের যে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য করিডর
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত ইনজিং আগে পরিচিতি ছিল 'এক গ্রাম, দুই দেশ' নামে।
এ গ্রাম ছিল মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের স্বাভাবিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি। দুই দেশের এ সীমান্ত তখন আলাদা করা ছিল বাঁশের বেড়া, খাদ ও নিচু মাটির টিলা দিয়ে।
তবে এখন চিত্র ভিন্ন। চীনের ইউনান প্রদেশের রুইলি কাউন্টির সীমান্তে তোলা হয়েছে উঁচু ধাতব—কিছু জায়গায় কাঁটাতারের—বেড়া। অনেক জায়গায় বসানো হয়েছে নজরদারি ক্যামেরা।
প্রথমে এই বিচ্ছিন্নতার কারণ ছিল কোভিডকালে চীনের কঠোর লকডাউন। তবে এরপর এর মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ২০২১ সালে মিয়ানমারের রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের পর থেকে চলমান গৃহযুদ্ধ।
মিয়ানমারের জান্তা সরকার এখন দেশের বিরাট একটা অংশে বিদ্রোহীদের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। জান্তার অন্যতম বড় পরাজয় হয়েছে চীন সীমান্তসংলগ্ন শান স্টেটে।
একেবারে দোরগোড়ায় এ সংকট—প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে—চীনের জন্য দিন দিন আরও খরুচে হয়ে উঠছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য করিডরের জন্য মিয়ানমারে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিল চীন।
এই উচ্চাভিলাষী বাণিজ্য করিডরের লক্ষ্য ছিল চীনের স্থলবেষ্টিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত করা।
কিন্তু মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ এই করিডরকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে। এখানে এখন বিদ্রোহী ও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাত চলছে।
উভয় পক্ষের ওপর বেইজিংয়ের প্রভাব থাকলেও জানুয়ারিতে তার মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এর ফলে চীন এখন সীমান্তে সামরিক প্রস্তুতি বাড়াচ্ছে এবং কড়া বক্তব্য দিচ্ছে।
সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদো সফর করেন। ওই সফরে তিনি দেশটির সামরিক শাসক মিন অং হ্লাইংকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের শান স্টেটে সংঘাত নতুন কিছু নয়। দারিদ্র্যপীড়িত রাজ্যটি বিশ্বজুড়ে আফিম ও মেথামফেটামিন সরবরাহের অন্যতম প্রধান উৎস। এছাড়া মিয়ানমারের বৃহত্তম রাজ্যটি দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইরত জাতিগত সেনাদের ঘাঁটি।
তবে চীনের বিনিয়োগের ফলে শান স্টেটে গড়ে ওঠা অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো গৃহযুদ্ধের আগে বেশ সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল।
চীনের সীমান্ত শহর রুইলিতে এখন লাউডস্পিকারের মাধ্যমে নাগরিকদের সীমান্তে তোলা বেড়ার কাছাকাছি যেতে নিষেধ করা হয়। তবে এই সতর্কতাও একজন চীনা পর্যটককে বেড়ার ফাঁক দিয়ে হাত গলিয়ে সেলফি তোলা থেকে আটকাতে পারেনি।
রুইলিতে আশ্রয়
রুইলির সীমান্ত চেকপয়েন্টের ছোট্ট একটা বাজারে মিয়ানমার থেকে আসা খাবার আর পানীয়—যেমন দুধ চা—বিক্রি করেন লি মিয়ানঝেন।
তিনি বিবিসিকে বললেন, 'বার্মিজ মানুষ কুকুরের মতো জীবন কাটাচ্ছে।'
মিয়ানঝেনের বয়স ৬০-এর কোঠার শেষদিকে। আগে মিয়ানমারের মিউজ শহরের সীমান্ত এলাকায় চীনা কাপড় বিক্রি করতেন। চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের বাণিজ্যের অন্যতম উৎস ছিল কাপড় বেচাকেনা। কিন্তু এখন তার শহরের অবস্থা এতটাই খারাপ যে প্রায় কারোর হাতেই কাপড় কেনার মতো টাকা নেই।
মিউজের নিয়ন্ত্রণ এখনও মিয়ানমারের সামরিক জান্তার হাতেই। তবে বিদ্রোহী বাহিনী অন্যান্য সীমান্ত ক্রসিং ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অঞ্চলের দখল নিয়েছে।
মিয়ানঝেন বলেন, এই পরিস্থিতি মানুষকে বেপরোয়া করে তুলেছে। তার পরিচিত অনেকে মাত্র ১০ ইউয়ান—প্রায় ১ ডলার—উপার্জনের জন্য সীমান্ত পাড়ি চীনে চলে এসেছেন, যাতে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে পারেন।
পেট চালানোর জন্য মিয়ানমারে আর কোনো কাজ খুঁজে পাচ্ছিলেন না লি মিয়ানঝেন। রুইলিই এখন তার শেষ আশ্রয়।
চলমান যুদ্ধের ফলে মিয়ানমারের ভেতরে-বাইরে ভ্রমণে বড় বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশটির অবস্থা জানার জন্য মিয়ানঝেনের মতো সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অন্য দেশে পালিয়ে আসা মানুষেরাই মূল ভরসা।
চীনে প্রবেশের জন্য 'ওয়ার্ক পাস' না পেয়ে মিয়ানঝেনের পরিবার মান্দালয়ে আটকা পড়েছে। এদিকে বিদ্রোহী বাহিনী মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটির কাছাকাছি চলে এসেছে।
এখন মিয়ানঝেনের দিন কাটছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। তিনি বলেন, 'চিন্তায় মরে যাওয়ার দশা হয় আমার। এই যুদ্ধ জন্য সীমাহীন দুর্দশা বয়ে এনেছে। কবে শেষ হবে এসব?'
একত্রিশ বছর বয়সি জিন অং (ছদ্মনাম) মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছেন। তিনি এখন রুইলির উপকণ্ঠের একটি শিল্প পার্কে কাজ করেন। এখানে উৎপাদিত কাপড়, ইলেকট্রনিক্স ও গাড়ির যন্ত্রাংশ সারা বিশ্বে রপ্তানি করা হয়।
জিন অংয়ের মতো মিয়ানমার থেকে আসা আরও অনেক কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এ শিল্প পার্কে। কারণ চীনা সরকারের সহায়তায় গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের থেকে সস্তা শ্রম পায়। মিয়ানমার থেকে আসা কর্মীরা মাসে প্রায় ২ হাজার ৪০০ ইউয়ান (৪৫০ ডলার) আয় করেন, যা চীনা সহকর্মীদের চেয়ে কম।
জিন অং বলেন, 'যুদ্ধের কারণে মিয়ানমারে আমাদের করার মতো কোনো কাজ নেই। ভাত থেকে শুরু করে রান্নার তেল পর্যন্ত সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। সব জায়গায় লড়াই চলছে, সবাইকে পালাতে হচ্ছে।'
বয়স হয়ে যাওয়ায় জিন অংয়ের বাবা-মা পালাতে পারেননি, অগত্যা তিনি একাই পালিয়েছেন। যতটুকু পারেন, বাড়িতে টাকা পাঠান তিনি।
রুইলিতে সরকার পরিচালিত কম্পাউন্ডে কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে পুরুষরা বসবাস ও কাজ করছেন। জিন অং বলেন, যেখান থেকে পালিয়ে এসেছেন, তার তুলনায় এ জায়গা অভয়ারণ্য।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জোরপূর্বক নিয়োগ থেকেও পালিয়ে এসেছেন তিনি। যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত সেনাদের ঘাটতি পূরণে জোর করে সেনাবাহিনীতে সৈনিক নিচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।
১২ ঘণ্টা হাড়ভাঙা খাটুনির পর শেষবিকেলে এই অস্থায়ী বসতিতে ফুটবল খেলে সামান্য স্বস্তি পান জিন অংসহ অন্যান্য কর্মীরা।
এই কর্মীদের অনেকেই শান স্টেটের বৃহত্তম শহর লাশিও এবং জান্তা-সমর্থিত অপরাধী গোষ্ঠীর ঘাঁটি লাউকাইং থেকে এসেছেন। জানুয়ারিতে বিদ্রোহী বাহিনী লাউকাইংয়ের দখল নেয়, পাশাপাশি লাশিওকেও ঘিরে ফেলে। এই অভিযানেই বদলে গেছে যুদ্ধের গতিপথ। এতে চীনেরও স্বার্থ জড়িয়ে আছে।
বেইজিংয়ের সংকট
চীনের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য করিডরটি এ দুই শহর দিয়ে গেছে। বেইজিংয়ের মধ্যস্থতায় হওয়া এক যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে লাশিও এতদিন জান্তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে বিদ্রোহীরা শহরে ঢুকে পড়েছে। সেনাবাহিনী পাল্টা জবাব দিয়েছে বোমা ও ড্রোন হামলা করে, ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সীমিত করে দিয়ে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমারবিষয়ক উপদেষ্টা রিচার্ড হর্সি বলেন, 'লাশিওর পতন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জন্য সবচেয়ে অপমানজনক পরাজয়গুলোর একটি।
তিনি আরও বলেন, 'বিদ্রোহীরা সম্ভবত একটা কারণেই মিউজ টাউনশিপে হামলা চালায়নি—চীন ক্ষুব্ধ হয়ে হতে পারে, এ আশঙ্কায়। সেখানকার লড়াই চীনের বিনিয়োগে প্রভাব ফেলতে পারে, যা কয়েক মাস ধরে ফের চালু করার চেষ্টা চলছে। শাসকগোষ্ঠী এখন শান রাজ্যের প্রায় সমগ্র উত্তরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে—শুধু মিউজ বাদে। শহরটা আবার রুইলির ঠিক পাশেই।'
রুইলি ও মিউজ উভয় শহরই বিশেষ বাণিজ্য এলাকা। শহর দুটি বেইজিংয়ের অর্থায়ন করা ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি, অবকাঠামো ও বিরল খনিজ সম্পদে বিনিয়োগের জন্যও সহায়ক এই রুট।
তবে এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে একটি রেলপথ। এই রেলপথ ইউনান প্রদেশশের রাজধানী কুনমিংকে গভীর সমুদ্রবন্দর কেয়াকফিউর সঙ্গে যুক্ত করবে। মিয়ানমারের পশ্চিম উপকূলে এই বন্দরটি তৈরি করছে চীনারা।
বঙ্গোপসাগরের তীরের এই বন্দরটি রুইলি ও এর আশপাশ গড়ে ওঠা শিল্পগুলোকে ভারত মহাসাগর ও বিশ্ববাজারের সঙ্গে যুক্ত করবে। মিয়ানমার হয়ে ইউনানে জ্বালানি সরবরাহকারী তেল ও গ্যাস পাইপলাইনের শুরুও হবে এই বন্দর থেকেই।
কিন্তু এসব পরিকল্পনা এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বছরের পর বছর ধরে প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেছেন, বিশেষ করে অং সান সু চি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে।
সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত করা অভ্যুত্থানের নিন্দা করেননি শি জিনপিং, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কাছে অস্ত্র বিক্রিও চালিয়ে গেছেন। তবে তিনি সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবেও স্বীকৃতি দেননি বা তাকে চীনে আমন্ত্রণও জানাননি।
তিন বছরের যুদ্ধ হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। কিন্তু তারপরও এ যুদ্ধের শেষ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে নতুন নতুন ফ্রন্টে লড়াই করতে হচ্ছে। দেশের প্রায় অর্ধেক থেকে দুই-তৃতীয়াংশ এলাকার দখল হারিয়েছে জান্তা সরকার।
বেইজিং এখন অচলাবস্থায় রয়েছে। রিচার্ড হর্সি বলেন, এই পরিস্থিতি চীনের 'পছন্দ হচ্ছে না' না, মিন অং হ্লাইংকে 'অযোগ্য' মনে করছে।
তিনি বলেন, চীন জান্তা সরকারকে নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে, তবে তা গণতান্ত্রিক শাসনে ফিরে যাওয়ার জন্য নয়, বরং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য।
মিয়ানমার সরকারের সন্দেহ, চীন দুপক্ষেই তাল দিয়ে যাচ্ছে—একদিকে ওপরে ওপরে জান্তাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে শান স্টেটে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক বিদ্রোহী গোষ্ঠী চীনা অস্ত্র ব্যবহার করছে। আর সাম্প্রতিক সংঘর্ষগুলো ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত তিনটি জাতিগত গোষ্ঠীর জোটের গত বছরের আক্রমণেরই পুনরুত্থান। মনে করা হয়, চীনের সম্মতি ছাড়া এই জোট এমন পদক্ষেপ নিতে পারত না।
এ জোট যুদ্ধে জেতার পর কিছু কুখ্যাত মাফিয়া পরিবারের পতন ঘটেছে। এই পরিবারগুলো হাজার হাজার চীনা শ্রমিককে ফাঁদে ফেলে আটকে রেখেছিল। সীমান্তে ক্রমবর্ধমান অপরাধ নিয়ে চীন দীর্ঘদিন ধরেই নাখোশ ছিল। তাই মাফিয়া পরিবারগুলোর পতনকে বেইজিং স্বাগত জানিয়েছে। বিদ্রোহী বাহিনীগুলো চীনের হাতে হাজার হাজার সন্দেহভাজনকে তুলে দেওয়াতেও খুশি হয়েছে বেইজিং।
বেইজিংয়ের জন্য সবচেয়ে খারাপ হবে মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ী হওয়া। তবে জান্তা সরকারের পতন হলে কী হবে, তা নিয়েও শঙ্কিত বেইজিং। কারণ, জান্তার পতনে আরও বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
জান্তার পতন অথবা দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ—এ দুই পরিস্থিতিতে চীনের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। শান্তি আলোচনায় উভয় পক্ষকে চাপ দেওয়ার বাইরেও বেইজিং আর কী পদক্ষেপ নিতে পারে, তা স্পষ্ট নয়।
স্থগিত পরিকল্পনা
রুইলির শাটারবন্ধ সারি সারি দোকানই সেখানকার পরিস্থিতির অবনতির চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। একসময় মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া অবস্থানের কারণে লাভবান হওয়া শহরটি এখন সেই একই কারণে ক্ষতিগ্রস্ত।
চীনের কঠোর লকডাউনে এক দফা ধাক্কা খাওয়ার পর আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য ও যোগাযোগ ফের চালু না হওয়ায় এ শহরের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এখানকার ব্যবসাগুলো মূলত বার্মিজ শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু এখন বার্মিজ শ্রমিক পাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। একাধিক শ্রমিক নিয়োগকারী এজেন্ট জানান, সীমান্তের ওপার থেকে শ্রমিক নিয়োগের বিধিনিষেধ আরও কড়া চীন—এবং শত শত অবৈধ শ্রমিককে ফেরত পাঠিয়েছে।
একটি ছোট কারখানার মালিক নাম না প্রকাশের শর্তে বিবিসিকে বলেন, বার্মিজ শ্রমিকদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ায় তার ব্যবসা প্রায় বন্ধ।
চেকপয়েন্টের পাশের চত্বরে প্রচুর অল্পবয়সি শ্রমিক দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাদের মধ্যে সন্তানসহ অনেক মা-ও আছেন। কাজ পাওয়ার জন্য দরকারি কাগজপত্র প্রস্তুত করছিলেন তারা। যারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারছেন, তাদের একটা পাস দেওয়া হচ্ছে। ওই পাস দেখিয়ে তারা এক সপ্তাহের জন্য কাজ করতে পারেন অথবা মিয়ানঝেনের মতো দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতের অনুমতি পান।
মিয়ানঝেন বলেন, 'আশা করি, সব পক্ষকে এই যুদ্ধ বন্ধ করতে বলবে কেউ।'
আপাতত মিয়ানঝেন ও জিন অংয়ের জন্য নিরাপদ আশ্রয় রুইলি। তারা জানেন, তাদের ভবিষ্যৎ চীনের ওপর নির্ভর করছে, ঠিক যেমন চীনের ভবিষ্যৎও কিছুটা তাদের ওপর নির্ভর করছে।