অস্ট্রিয়ার নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থিদের নজিরবিহীন বিজয়, ইউরোপে আরও গতি পেল ডানপন্থিদের উত্থান
অস্ট্রিয়ার সাধারণ নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থি ফ্রিডম পার্টি (এফপিও) প্রথমবারের মতো জয়ী হয়েছে বলে ভোটের পূর্বাভাসে দেখা গেছে। এই ফলাফল ইউরোপ জুড়ে ডানপন্থি দলের ক্রমবর্ধমান সমর্থনের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা মূলত অভিবাসন সম্পর্কিত উদ্বেগ থেকে তৈরি হয়েছে।
ইউরো-বিরোধী ও রাশিয়া-সমর্থিত এফপিও দলটি কয়েক মাস ধরে জনমত জরিপে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও বর্তমান চ্যান্সেলর কার্ল নেহামারের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ অস্ট্রিয়ান পিপলস পার্টি (ওভিপি) থেকে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। এফপিও-এর নির্বাচনী প্রচারণায় অভিবাসন ও অর্থনৈতিক উদ্বেগ ছিল প্রধান বিষয়।
হারবার্ট কিকলের নেতৃত্বে ফ্রিডম পার্টি (এফপিও) ২৯.১ শতাংশ ভোট এবং কনজারভেটিভ অস্ট্রিয়ান পিপলস পার্টি (ওভিপি) ২৬.২ শতাংশ ভোট পেতে পারে বলে ফোরসাইট সংস্থার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। সম্প্রচারকারী ওআরএফ-এর জন্য এ পরিসংখ্যান তৈরি করেছে সংস্থাটি। পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, মধ্য-বামপন্থি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের ২০.৪ শতাংশ ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্য এক জরিপকারী প্রতিষ্ঠান আর্গে ভালেনও একই ধরনের পূর্বাভাস দিয়েছে। তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এফপিও প্রায় ৪ শতাংশ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে থাকবে, যেটি চূড়ান্ত জনমত জরিপের তুলনায় কিছুটা বেশি।
অস্ট্রিয়ার ৬.৩ মিলিয়ন ভোটারের মধ্যে ৭৮ শতাংশ ভোটার নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। নির্বাচনের পর অস্ট্রিয়ার মানচিত্রের প্রায় অর্ধেক অংশ গাঢ় নীল হয়ে যায়, যা এফপিও-র বিজয়ের প্রতীক। দলের সাধারণ সম্পাদক মাইকেল শ্নেলিটজ বলেন, "অস্ট্রিয়ার জনগণ আজ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।"
ভোটারদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডানপন্থি দলটিকে সবচেয়ে বেশি ভোট দিয়েছেন ৩৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সীরা এবং পুরুষদের তুলনায় নারীরা এফপিওকে বেশী সমর্থন করেছেন।
অস্ট্রিয়ার ১৮৩ আসনের পার্লামেন্টে এফপিও প্রায় ৫৬টি আসন পেতে যাচ্ছে। এছাড়া, ওভিপি ৫২টি আসন এবং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা ৪১টি আসন পেতে যাচ্ছে।
নির্বাচনে জয়ী হলেও, ফ্রিডম পার্টির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় সরকার গঠনের জন্য একটি জোট গঠন করতে হবে। তবে, দলের নেতা হারবার্ট কিকল (৫৫) একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব এবং অন্য দলের নেতারা তার অধীনে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, যেটি স্থিতিশীল সরকার গঠন করা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি করছে।
এফপিওর অভিবাসনবিরোধী অবস্থান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিমালা, বিশেষ করে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা অনেকের মধ্যেই উদ্বেগ তৈরি করেছে।
২২ বছর বয়সী গ্রাফিক ডিজাইনার এবং অস্ট্রিয়ান কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থক সারা উলফ ভোটের আগে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, "যদি সত্যিই এফপিও সবচেয়ে বেশি ভোট পায়, তবে আমরা ভিক্টর অরবান-এর মতো একটি পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারি অর্থাৎ ধীরে ধীরে গণমাধ্যমের বৈচিত্র্য, গণতন্ত্র এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার কমে আসবে। এর অনেক বিপজ্জনক লক্ষণ রয়েছে।"
তবে ভিক্টর ডে লাইজার নামে ১৭ বছর বয়সী এক সেনা সদস্য এবং এফপিও সমর্থক বলেন, "অভিবাসনের ফলে ঘটতে থাকা অপরাধমূলক সহিংসতা মোকাবিলায় এফপিও সবচেয়ে যোগ্য দল।"
অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভ্যান ডার বেলেন এই পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারেন কারণ সংবিধান অনুযায়ী, প্রথম স্থান অধিকারকারী দলকেই তিনি সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাবেন–এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
১৯৫০-এর দশকে একজন সাবেক নাজি আইনপ্রণেতার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত এফপিও "ফোর্ট্রেস অস্ট্রিয়া" নির্মাণ করে অভিবাসন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে এবং আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে। দলের নাজি সংশ্লিষ্ট অতীত নিয়ে নতুন বিতর্ক পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে।
ডের স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, দলের সদস্যরা এমন এক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত ছিলেন যেখানে নাজি এসএস বাহিনীর একটি জনপ্রিয় গান গাওয়া হয়েছিল।
পরবর্তীতে, ভিয়েনার একটি ইহুদি ছাত্র সংগঠন এফপিও সদস্যদের বিরুদ্ধে নাজিবিরোধী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়ের করে।