ইরানের তেল স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র: বাইডেন
ইরানের তেলের স্থাপনার উপর হামলা চালানোর বিষয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। খবর বিবিসি'র।
হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যাওয়া সময় এ হামলায় তার সমর্থন আছে কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, "আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করছি। আমার মনে হয় এটা খুব বেশি না, অল্পই প্রভাব ফেলবে… যাই হোক।"
তবে তার এ তাৎক্ষণিক মন্তব্যে ওয়াশিংটনের অবস্থান স্পষ্ট হয়নি। এর আগে বাইডেন বলেছিলেন, তিনি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর উপর ইসরায়েলি হামলা সমর্থন করবেন না।
তার মন্তব্যের পরপরই বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রড তেলের দাম পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলের ওপর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর থেকে তেলের দাম ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, "গত মঙ্গলবারের হামলার জন্য ইরানকে এর চরম মূল্য দিতে হবে।"
গত মঙ্গলবার অন্তত ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপ হয় বলে ইসরায়েল দাবি করেছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস নিউজ এজেন্সির প্রকাশিত স্যাটেলাইট চিত্রে নেভাতিম এয়ারবেসে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখানো হয়েছে, যা হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু ছিল।
ইরান জানিয়েছে, এই হামলা হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়েহ, হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহ এবং ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পসের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্বাস নিলফোরুশানের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়েছে।
বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি আশা করছেন না ইসরায়েল বৃহস্পতিবারই তাদের আক্রমণ চালাবে। হোয়াইট হাউজ ছাড়ার সময় বাইডেনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে ইরানে হামলা করার অনুমতি দিবে কিনা, এর উত্তরে তিনি বলেন, "প্রথমত, আমরা ইসরায়েলকে অনুমতি দেই না, আমরা ইসরায়েলকে পরামর্শ দেই এবং আজ কিছুই ঘটবে না।"
একজন মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্স সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে ইসরায়েল এখনও নির্ধারণ করছে যে তারা কী করবে।
এর আগে ইসরায়েলের কিছু নেতারা, বিশেষ করে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর হামলার প্রস্তাব করেছিলেন। সে বিষয়ে বাইডেন বলেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার উপর হামলার সমর্থন করে না।
বেনেট বলেছিলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করা 'মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা পরিবর্তনে' সহায়ক হতে পারে এবং 'এই সন্ত্রাসী শাসনব্যবস্থাকে চূড়ান্তভাবে দুর্বল করতে' পারে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমে স্থানীয় কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বলেছে, " ইসরায়েল প্রথমে ইরানের তেল স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। যদি ইরান পাল্টা আঘাত হানে, তবে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করবে।"
বুধবার ইরানের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেছেন, "যদি ইসরায়েল প্রতিশোধ নেয়, তবে ইরান ইসরায়েলের স্থাপনাতে আঘাত হানবে।" তিনি আরও বলেন, "এই আক্রমণ আরও তীব্র হবে এবং শাসনব্যবস্থার সমস্ত অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হবে।"
বুধবার বাইডেন বলেছেন যে তিনি জি৭ দেশের অন্যান্য নেতাদের সাথে পরামর্শ করেছেন। তারা একমত হয়েছেন যে ইসরায়েল 'প্রতিশোধের অধিকার রাখে, তবে তাদের সমানুপাতিক প্রতিশোধ নেওয়া উচিত।"
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে আরও সহিংসতার আশঙ্কা বিশ্বের তেল বাজারে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষভাবে উদ্বেগের কারণ হলো, তাদের মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধি পেলে হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ প্রণালি দিয়েই বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ তেলবাহী ট্যাঙ্কার এবং এক পঞ্চমাংশ এলএন গ্যাস পরিবাহিত হয়।